ওয়াগনার গ্রুপ ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে, অস্ত্র সমর্পণের প্রক্রিয়া শুরু
মস্কোর সামরিক অধিনায়কদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল রাশিয়ার যে ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনার গ্রুপ, সেটি ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ওয়াগনার গ্রুপের সেনাদের অস্ত্রশস্ত্র সামরিক বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।
এর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, ওয়াগনার গ্রুপের সদস্যরা চাইলে নিয়মিত সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারবেন, তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবেন, অথবা বেলারুসে যেতে পারবেন। মি. পুতিন বলেছেন ওয়াগনার সদস্যদের বেশিরভাগই সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, কিন্তু তাদের বিভ্রান্ত করে অপরাধমূলক তৎপরতায় জড়ানো হয়েছিল।
এদিকে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি ঘোষণা করেছে তারা বিদ্রোহে জড়িত ওয়াগনার গ্রুপের সদস্যদের বিরুদ্ধে সব ধরণের অপরাধের অভিযোগ তুলে নিচ্ছে। সশস্ত্র বিদ্রোহে জড়িত থাকার অভিযোগে এদের বিচার করার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল।
এর আগে খবর আসে যে ওয়াগনার গ্রুপের নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিন বেলারুসের রাজধানী মিনস্কে পৌঁছেছেন। মি. প্রিগোশিনের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি জেট বিমান গ্রিনিচ মান সময় ৪টা ৩৭ মিনিটে মিনস্কে অবতরণ করে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ঐ বিমানে মি. প্রিগোশিন ছিলেন কিনা, তা বিবিসি নিশ্চিত হতে পারেনি।
এদিকে ক্রেমলিন বলছে ইয়েভগেনি প্রিগোশিন কোথায় আছেন সে বিষয়ে তাদের কাছে কোন তথ্য নেই।
বেলারুসের নেতা আলেক্সান্দার লুকাশেংকোও মি. প্রিগোশিন তার দেশে আছেন কিনা তা নিশ্চিত করেননি।
ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহের পর তাদের সঙ্গে ক্রেমলিনের যে সমঝোতা হয়, তার শর্ত অনুযায়ী মি. প্রিগোশিনকে বেলারুসে যেতে দেয়ার কথা ছিল।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বিদ্রোহের অবসানের জন্য যে চুক্তি হয়েছিল, তা এখন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সবসময় তার দেয়া কথা রক্ষা করেছেন।
বিবিসির পূর্ব ইউরোপ সংবাদদাতা সারাহ রেইনসফোর্ড বলছেন, ওয়াগনার গ্রুপের সঙ্গে যেসব শর্তে সমঝোতা হয়েছিল সেগুলো এখন ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে এবং মনে হচ্ছে এই গ্রুপটিকে ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, “যে দেশে কেবলমাত্র ইউক্রেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্য বহু বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীকে দীর্ঘ কারাভোগ করতে হচ্ছে, সেখানে ওয়াগনার গ্রুপের সঙ্গে এরকম আপসরফা বেশ অবাক হওয়ার মতো।”
ওয়াগনার গ্রুপের নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিন এবং তার গ্রুপের সেনারা রাশিয়ার একটি শহরই শুধু দখল করে নেয়নি, তারা সামরিক বহর নিয়ে মস্কোর পথে রওনা দিয়েছিল। যাওয়ার পথে তারা কয়েকটি রুশ সামরিক হেলিকপ্টার এবং একটি সামরিক বিমানও গুলি করে ফেলে দিয়েছিল।
সোমবার প্রেসিডেন্ট পুতিন যে ভাষণ দেন, তাতে তিনি নিশ্চিত করেন যে ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহীদের হাতে রাশিয়ার কয়েকজন পাইলট নিহত হয়েছেন।
ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহীদের হাতে কোন কোন সামরিক বিমান ধ্বংস হয়েছে তা জানার চেষ্টা করছিল বিবিসি নিউজ রাশিয়া।
ওপেন সোর্সিং ব্যবহার করে বিবিসি নিউজ রাশিয়া জানতে পেরেছে, এর মধ্যে ছিল তিনটি মি-৮ এমটিপিআর ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার হেলিকপ্টার, দুটি অ্যাটাক হেলিকপ্টার – একটি কা-৫২ এবং একটি মি-৩৫। আর ছিল একটি সামরিক বিমান।
২৩ জুন লুহানস্কের কাছে আরও একটি সামরিক হেলিকপ্টার ধ্বংস হয় বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তবে এর বিস্তারিত জানা যায়নি।
এর আগে টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক অডিও বার্তায় ওয়াগনার গ্রুপের নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিন দাবি করেছিলেন যে, তাদের বিদ্রোহের সময় ‘একজন সেনাও নিহত হয়নি।’ তবে তাদের সৈন্যরা গুলি করে একটি সামরিক বিমান ফেলে দেয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ঐ রুশ সামরিক বিমানটি তাদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছিল।