হঠাৎ পৌনে তিনটের সময় সূর্যের ফোন। আয় প্রদীপের বাড়ী চলে আয়। একচুয়ালি আড্ডা না মারতে পারলে পেটের ভাত হজম হয় না। দু’সেট চাবি। একটা দরজার আর একটা গেটের। প্রদীপের কাজ প্রদীপ করেছে। মেঝে, দেওয়াল পুরো স্যানিটাইজড। যাওয়ার সাথে সাথেই স্প্রে করে ভিজিয়ে দিলো। চা এলো। কোনো স্বাদ নেই। গিয়ে দেখি” ব্ল্যাক ডগ” খেয়ে সূর্যর পেট জয়ঢাক। ফুলবডি স্যানিটাইজড। ও কোন ব্যাপার না।
দেবরাজ ইন্দ্রেরও সুরাপান করে পেট হ্রদ হয়ে থাকতো। বহু মিল। তবে সামনে বললেই বিপদ। প্রদীপের পেটেও মনে হয় দু এক ফোঁটা পড়েছে। অস্বীকার। মিথ্যে ছাড়া সত্যি বলে না। সেটা আড্ডাতেই করে থাকে। পারতপক্ষে, আমি ওর কাছে ট্রিটমেন্ট করাই না। সাধারণত, বাড়ির লোক ডাক্তার বা যে বেশি ভালোবাসে তার কাছে ট্রিটমেন্ট করাতে নেই। এ-ই ভুল টাই করেছিল চন্দ্রগুপ্ত। স্নেহের পাত্রকে পরামর্শ দেওয়া ছাড়া স্বাস্থ্য টাও দেখতো চানক্য। বিষ তীর মেরে চন্দ্রগুপ্ত কে যেন ঘায়েল না করতে পারে। সেজন্য খাবারের সাথে অল্প বিষ মিশিয়ে দিতেন। যেন এন্টিবডি শরীরে তৈরি হয়। বউ একদিন স্বামীর আহার-প্রসাদ কে ভিটামিন মনে করে খেয়ে ফেললো। সূর্য মুডে ছিল। আমার কথা কেড়ে নিয়ে বললো, ব্যাস্, আর কি! স্ক্রিন কালো। নারী না থাকলে পুরুষের কি সৌন্দর্য থাকে? মেরে চানক্যের দাঁতগুলো ফেলে দিলো না কেন! এগুলো একটা কথা হলো? সূর্যর থিসিস।
আরে! চানক্যের ছিল বত্রিশ টা দাঁত। ডবল পাটি। এটাকে তখন রাজা হওয়ার লক্ষণ মনে করতো। দেশের রাজা জানতে পারলে সর্বনাশ। বেশ কয়েকটি দাঁত, ছেলের তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু হলে কি হবে, পরে আরও উঠলো কিছু গজদাঁত।এবড়ো খেবড়ো। চানক্য ততক্ষণে সোজা মগধ রাজ্য থেকে ধা। সূর্য ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
ডাক্তারের বাড়িতে যেমনটা হয়, ছোট একটা টেবিলে দুটো খবরের কাগজ আর কয়েকটা ম্যগাজিন। প্রথম পাতাতেই ঝড়ো খবর। অক্সিজেন সিলিন্ডারের কারচুপি। ছাড়তো ওসব কেস। গরুর কেস গরু দেখুক। ঘোড়া অনেক তেজি। আর ওটার কেনাবেচা বন্ধ মানে, একটা মহৌষধি পাওয়া।
আয়,আয়,খেয়ে যা… গজনী, খিলজি, চেঙ্গিস’রা আজও যায়নি। কান্নাকাটি করলাম।” কোহিনূর” টা দিল না। সেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সুলভ মনোভাব।
একটা জিনিস খেয়াল করেছিস, পুলিশ কদিন ধরেই পেছনে পেছনে ঘুরছে। ঘুরে দাড়াতেই, সে বললো, বাড়ি যান। কেন রে? দেখতে কি চোর, চোর লাগছে? আবারও সে আরেকজনের পিছু নিল।চারিদিকে কারচুপি হচ্ছে তাই, বোধহয়। আরে, ছিঁচকে চুরি, নেপোটিজম, বাবরের আমল থেকেই হয়ে আসছে। সূর্য বলে উঠলো আচ্ছা, “বাবর” কে এই দায়িত্বটা দিলে হয় না? সূর্য পাশে থাকলেই ঝকমারি। পেট ভর্তি, তাই ওর কথাও ননস্টপ। কতো “ইজম” এলো আর গেল। বিপ্লবী সরকার গঠন এ-র পর লেনিন মাত্র ছয় বছর বেঁচে ছিলেন। এসব ছিঁচকে চুরি নিয়ে চিন্তা ভাবনার অবকাশ পাননি।দুঃখে মনটা ভেঙে গেল টুকরো টুকরো হয়ে গেল। একই তালে, সোভিয়েত ইউনিয়ন টাও ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।
সেই কাগজ আবারও চোখ ঠকালো। কেমন করে সব লিখে চলেছে! আজ মে মাসের সাত তারিখ। কাগজের অষ্টম পাতার এক কোনে রবীন্দ্রনাথের একটা ছোট ছবি। কাগজের নামটা আর করলাম না। তাতে লেখা, আজকের দিনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জোড়াসাঁকোয় জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু আজ তো তেইশে বৈশাখ। তাজ্জব ব্যাপার। যাইহোক, পাশে আল্ফ্রেড নোবেল এর ছবি। সাথে ডিনামাইট এর ছবি।আজকের দিনেই উনি পেটেন্ট পান। ডিনামাইটের মুখ টা রবিঠাকুরের দিক করে রাখা। ততক্ষণে প্রদীপের সাথে অসিতের প্রবল তর্ক শুরু। রবি ঠাকুর নাস্তিক না ধার্মিক। কেমন একটা লাগলো। বললাম, এতো আচ্ছা, নৈরাজ্য। আমি কথা বললেই সমীরের ভুল ধরা চাই। বললো, এটাকে কি নৈরাজ্য বলে নাকি। ভুল হয়েছে ভাই। আগে ওদের তো সামলা।
সূর্য যথারীতি ঠিক, ঠিক,ঠিক, বলে চলেছে। কলের পুতুলের মতো। টপাটপ। একবার মাথা উঁচু, একবার নিঁচু। এবার, প্রদীপ চুপ করিয়ে দিলো, “চতুরঙ্গ” নাটকের রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরের একটা উক্তি দিয়ে…….
“ঈশ্বর যদি থাকেন তবে আমার বুদ্ধি তাঁরই দেওয়া;
সেই বুদ্ধি বলিতেছে যে, ঈশ্বর নাই;
অতএব ঈশ্বর বলিতেছেন যে,ঈশ্বর নাই”
চা খেতে খেতে একেবারে পেছনের পাতায়। বলিউড সুন্দরীর ছবি। সমুদ্র তীরে। বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে সূর্য স্নান। দেখে মনে হচ্ছে “ভেনাস” সবে সাগর থেকে উঠেছে। তবে পার্থক্য আছে।ভেনাসের গায়ে শুধু জল ছিল। আর ইনি কৌপীন পরিহিতা। তারকারা টুইটারে কটুক্তি করলো। এখানেও ঝড় উঠলো। তমাল বললো, এসব দেখে লাভ নেই। মানে? চোখ তো সরাতে পারলাম না। মনে হলো…..
“তোমার ভুবনে ফুলের মেলা, আমি কাঁদি সাহারায়”
আমি তো এরমধ্যে অস্বাভাবিক কিছু পেলাম না। এই দমবন্ধ অবস্থায়, কারোর যদি ছবি দেখে, সিরিয়াল দেখে, পাতি বোম্বে সিনেমা দ্যাখে, সেটা অশোভনের তো কিছু থাকতে পারে না। কিন্তু সূর্যর সেই ঠিক, ঠিক। তবে এখন একটা পার্থক্য। এবারে মাথাটা, একবার ডানদিকে আর একবার বাঁদিকে।
এই ভয়ংকর প্রলয়ের দিনে, কে আছে, কে নেই,……..
“তরী খানি বাইতে গেলে, মাঝে মাঝে তুফান ওঠে , তাই বলে…….”