কানাডার দাবানলের সৃষ্ট ধোঁয়া নিউইয়র্কে, ধূসর স্ট্যাচু অব লিবার্টি
বড় ধরনের দাবানল মোকাবিলায় কার্যত সংগ্রাম করছে কানাডা। তবে তা এখনও নিয়ন্ত্রণে আসনি এবং দাবানলের কারণে সৃষ্ট ধোঁয়া উত্তর আমেরিকাজুড়ে লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য হুমকি সৃষ্টি করেছে। এছাড়া দাবানলের ধোঁয়া পৌঁছে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরেও।
এমনকি দাবনলের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার প্রতীক নিউইয়র্কের ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’র ধূসর ছবিও সামনে এসেছে। বুধবার (৭ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কানাডায় চলমান দাবানলের কারণে উত্তর আমেরিকাজুড়ে লাখ লাখ মানুষের জন্য উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ বায়ুর মানের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দাবানলের ধোঁয়া টরন্টো ও এর আশেপাশের এলাকাসহ অন্টারিও এবং কুইবেকের প্রধান শহরগুলোকেও ঢেকে দিয়েছে।
এমনকি দাবানলের এই ধোঁয়া নিউইয়র্ক সিটি এবং কানেকটিকাট পর্যন্ত পৌঁছেছে। এর ফলে সেখানেও বাতাসের গুণমানকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। আর বেশিরভাগ ধোঁয়াই কানাডার কুইবেক থেকে আসছে। কারণ সেখানে এখনও ১৬০টি আগুন জ্বলছে।
বিবিসি বলছে, এনভায়রনমেন্ট কানাডা মঙ্গলবার অটোয়াতে কঠোর সতর্কতা জারি করে। এর ফলে কানাডার রাজধানীতে বাতাসের গুণমানকে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ‘খুব উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বোঝানো হয়েছে।
এছাড়া টরন্টো এবং এর আশেপাশের এলাকায়ও বায়ুর গুণমানকে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।
এদিকে ইউএস এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সিও (ইপিএ) যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বেশিরভাগ বায়ুর গুণমানকে ইতোমধ্যেই ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে। আর সেটি বিশেষ করে তাদের জন্য যারা আগে থেকেই শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।
বিবিসি বলছে, বায়ুর মান নিয়ে এই সতর্কতার মধ্যে নিউইয়র্ক সিটি এবং কানেকটিকাটের বেশিরভাগ অংশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া উত্তরে বোস্টন পর্যন্ত এবং দক্ষিণে পিটসবার্গ ও ওয়াশিংটন ডিসি পর্যন্ত এই সতর্কতা প্রসারিত করা হয়েছে।
অন্যদিকে পূর্ব পেনসিলভানিয়া, নিউইয়র্ক এবং নিউ ইংল্যান্ডের বেশ কিছু অংশে বায়ুর গুণমান সূচক ২০০ পার হয়ে গেছে। আর এর অর্থ সেখানে এমন পরিস্থিতি রয়েছে যা ‘সবার জন্য খুব অস্বাস্থ্যকর’।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে- নিউইয়র্কে কমলা ও ধূসর রঙের ধোঁয়া শহরটিকে ঢেকে দিয়েছে। মূলত কানাডায় চলমান দাবানলের ধোঁয়া দক্ষিণে চলে আসায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা লোকদেরকে বাইরে ব্যায়াম না করার এবং যতটা সম্ভব ধোঁয়ার সংস্পর্শ কমিয়ে চলাফেরা করার জন্য সতর্ক করেছেন। কারণ এই ধরনের বায়ু তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।
এছাড়া বায়ুর মানের অবনতি কুইবেকের অন্তত একটি অঞ্চলে হাঁপানি এবং অন্যান্য শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ধোঁয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে বাধ্য করেছে।
উল্লেখ্য, কানাডায় এবার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সক্রিয় দাবানল দেখা যাচ্ছে। উত্তর আমেরিকার এই দেশটিতে আগুন ইতোমধ্যেই ৩৩ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমি পুড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া কুইবেকসহ সারা দেশে হাজার হাজার লোককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এমনকি ব্রিটিশ কলম্বিয়া, আলবার্টা, অন্টারিও, নোভা স্কটিয়া এবং উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলগুলোতেও বড় ধরনের আগুন জ্বলছে।