ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের ইতিহাসে প্রথম ইংরেজিতে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা ‘দি মোহামেডান অবজারভার’র সম্পাদক, ভারতগৌরব, দার্শনিক, মরমি-কবি, সাহিত্যিক, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কারাবরণকারী নেতা ডিপুটি শাহ মোহাম্মদ বদিউল আলমের ৯৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ইতিহাস চর্চা পরিষদ ও হজরত ডিপুটি শাহ মুহাম্মদ বদিউল আলম শাহ সাহেব ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে ১৯ মে ২০২৩, শুক্রবার, বিকেল চারটায় চট্টগ্রামের মোমিন রোডস্থ বৈঠকখানা মিলনায়তনে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ ইতিহাস চর্চা পরিষদের সভাপতি ইতিহাসবেত্তা সোহেল মো. ফখরুদ-দীনের সভাপতিত্বে এই সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও পরিব্রাজক মোহাম্মদ আবদুর রহিম। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এম এ হাশেম রাজু। সেমিনারের উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদশে মুসলমান ইতিহাস সমিতির মহাসচিব মাস্টার মোহাম্মদ আবুল হোসাইন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও ব্যাংকার দুলাল কান্তি বড়ুয়া, সাংস্কৃতিক সংগঠক শওকত আলী সেলিম, গীতিকার ও কবি অরূপ বড়ুয়া, রাজনীতিবিদ নুরুল হুদা চৌধুরী, লেখক-গবেষক হানিফ মান্নান, ব্যাংকার জিএম মামুনুর রশিদ, লেখক আবদুর রহমান জোনাইদ, দেলোয়ার হোসেন মানিক, বাংলাদেশ ইতিহাস চর্চা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক শামীম, সোহেল তাজ, চৌধুরী জসিমুল হক, শিক্ষক আকতার হোসাইন, আনিসুর রহমান বাবলু, শিক্ষাবিদ মোখলেছুর রহমান মুকুল, সিরাজুল মোস্তফা, মোহাম্মদ রায়হান, তাওহিদুল ইসলাম, সৌমেন বড়ুয়া, মো. তাওসিফুল আলম, সিফাত ইসলাম চৌধুরী, আবদুল মাবুদ প্রমুখ।
সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, তদানীন্তন বঙ্গদেশের কৃতিপুরুষ, উপমহাদেশে মুসলমান দ্বারা ইংরেজিতে প্রকাশিত প্রথম দৈনিক পত্রিকা ‘দি মোহামেডান অবজারভার’ (১৮৯২ ইংরেজি) প্রথম মুসলমান সম্পাদক হযরত ডিপুটি শাহ মোহাম্মদ বদিউল আলম (জন্ম ১৮৫৬, মৃত্যু ১৯৩১)’র জন্ম চট্টগ্রামে বাঁশখালী উপজেলার কালীপুরে। ডিপুটি শাহ মোহাম্মদ বদিউল আলম আজ হতে ৯৩ বছর আগে ১৪ মহরম নিজ গ্রাম বাঁশখালী থানার ইজ্জত নগরের সাহেব বাড়িতে আজকের এই দিনে মহান খোদার দিদার লাভ করেন। তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে জানা যায়, তিনি মানুষ, মানবতা, সাংবাদিকতা, রাজনীতি, দ্বীন, ধর্ম, গ্রন্থ প্রণয়ন ও তরিকায়ে জাঁহাগিরিয়ার পতাকাকে উজ্জ্বল করে দ্বীন ও আখেরাতের শিক্ষায় মানুষকে আলোকিত জীবন দান করেছিলেন পৃথিবীব্যাপী। তাঁর লিখিত গ্রন্থ বর্তমানে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ানো হয় ও গবেষণা চলছে।
তিনি ঐতিহ্যবাহী সাতকানিয়া মির্জাখীল দরবার শরীফের মহান খলিফা ছিলেন। আগেই আলোচিত হয়েছে, তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের প্রথম ইংরেজি পত্রিকা The Daily Mohammedan Observer পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ শাসন আমলে সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ১৯১৪ সালে একটি ঐতিহাসিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। বইটির নাম What is man,and the universal religion of man,in the light of islam?
আজ হতে ১১০ বছর আগে লিখিত এই বই পৃথিবীবাসীর কাছে খুবই মুল্যবান। এই বইটি America and Britain পৃথিবীর বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হচ্ছে। সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, ডিপুটি শাহ মুহাম্মদ বদিউল আলম ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বারেবারে ব্রিটিশ কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়ে একাধিকবার কারাবরণ করেছেন। তাঁর বক্তব্য ও লেখনীর মাধ্যমে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তিনি গর্জে উঠেন। শাহ বদিউল আলম মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে চট্টগ্রাম ও কলকাতায় বড় বড় জনসভায় বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তারা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে চট্টগ্রামের ক্ষণজন্মাদের অবদান স্মরণ করে চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিদের জীবনীগ্রন্থ জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান।