সুদানের যুদ্ধবিরতির মধ্যেও চলছে লড়াই
মানবিক ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে সোমবার স্থানীয় সময় রাত থেকে সুদানে সাত দিনের যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে তা প্রথম ২৪ ঘণ্টাতেই ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, মঙ্গলবারও সুদানের রাজধানী খার্তুমে কামানের গোলার বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেছে। সড়কগুলোতে চলছে সাজোয়াঁ যান। আকাশে যুদ্ধবিমান উড়তেও দেখা গেছে।
তবে কেউ কেউ মঙ্গলবার সকাল যুদ্ধ শুরুর পর অন্যান্য দিনের তুলনায় খানিকটা শান্ত ছিল বলে জানিয়েছেন। সৌদি আরব এবং যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
সুদানের সেনাবাহিনী এবং দেশটির প্রভাবশালী আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এর সঙ্গে যুদ্ধ ষষ্ঠ সপ্তাহে গড়িয়েছে।
জেদ্দায় আলোচনার পর গত শনিবার উভয় পক্ষ মানবিক ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সাত দিনের যুদ্ধবিরতিতে যেতে রাজি হয়। সোমবার স্থানীয় সময় রাত পৌনে ১০টা থেকে ওই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।
যুদ্ধের কারণে সুদানে প্রায় ১১ লাখ মানুষ নিজ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। তাদের মধ্যে আড়াই লাখের বেশি মানুষ দেশছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। এই যুদ্ধ এখন দারিদ্র পীড়িত পুরো অঞ্চলটিতে বড় ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঝুঁকি তৈরি করেছে।
খার্তুমের বাসিন্দা ৪২ বছরের আতেফ সালাহ বলেন, ‘‘আমাদের একমাত্র আশা এই যুদ্ধবিরতি যেনো সফল হয়। যাতে আমরা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে, নিরাপদ বোধ করতে এবং কাজে যেতে পারি।”
যদিও এর আগেও একাধিকবার সুদানে লাড়াইরত দুই পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু কোনোবারই যুদ্ধবিরতির সময় লড়াই থামেনি।
ওই যুদ্ধবিরতি থেকে এবার পার্থক্য হচ্ছে, এবার জেদ্দায় আলোচনার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বরং যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে লড়াইরত উভয় পক্ষের প্রতিনিধি এবং সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি ‘মনিটরিং মেকানিজমের’ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এই ‘মনিটরিং মেকানিজম’ দূর থেকে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।
তিনি বলেন, ‘‘যদি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করা হয়, আমরা তা জানতে পারব এবং আমরা আমাদের নিষেধাজ্ঞা এবং অন্যান্য ব্যবস্থার মাধ্যমে লঙ্ঘনকারীদের জবাবদিহি করতে বাধ্য করব।
‘‘জেদ্দায় অল্পকিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মূলত সহিংসতার অবসান এবং সুদানের জনগণকে সাহায্য করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই বিরোধের স্থায়ী সমাধানের জন্য আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন।”
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আরএসএফ একটি অডিও বার্তা প্রকাশ করে। যেখানে তাদের প্রধান জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালোকে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ দিতে শোনা যায়। সেইসঙ্গে তিনি তার যোদ্ধাদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘এই অভ্যুত্থান শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ফিরবো না।”
গত ১৫ এপ্রিল থেকে সুদানে লড়াই শুরু হয় এবং উভয় পক্ষ এজন্য পরষ্পরকে দায়ী করেছে।