ইজরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধান হতে পারে এমন যে, কোন এলাকা কাদের অধীনে থাকবে তা নয় বরং পুরো জর্ডান নদী এবং ভূমধ্যসাগর মধ্যবর্তী অঞ্চলে সবার জন্য – ইজরায়েলি ও ফিলিস্তিনি – সমতা বা সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
ইজরায়েল-ফিলিস্তিন বা ইজরায়েল-হামাস সর্বশেষ সঙ্ঘাত শুরু হয় পূর্ব জেরুজালেমে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ বিজয় উদযাপনে ডানপন্থী যুবকদের মিছিল এবং পার্শ্ববর্তী আল-আকসা মসজিদ এলাকায় – যা ইহুদি এবং মুসলিম উভয়ের কাছেই পবিত্র – ইজরায়েলের কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের পর ফিলিস্তিন মুসলিম যুবকদের প্রতিবাদ থেকে। গত এক সপ্তাহের ইজরায়েল-হামাস সঙ্ঘাতে গাজাতে ১৭০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয় যার মধ্যে কমপক্ষে ৪১ জন শিশু আর আহত ১,০০০ এর বেশি মানুষ। এছাড়া, পশ্চিম তীরে ইজরায়েলি বাহিনীর হাতে আরও ১৩ জন ফিল্লিস্তিনি নিহত হয়। এই সঙ্ঘাতের অন্তত ছয়টি কারণ বলা যেতে পারে।
ইজরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্য নয় বরং পুরো পৃথিবীর মানুষের এবং মানবগোষ্ঠীর একটি চরমভাবে দীর্ঘায়িত সমস্যা যা সমাধানে জাতিসংঘসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বার বার ব্যর্থ হচ্ছে।
পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জারাহ এলাকা থেকে ছয়টি ফিলিস্তিন পরিবার উচ্ছেদে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন একটি মামলাও আর একটি ইস্যু। ফিলিস্তিনিরা এটিকে পূর্ব জেরুজালেম থেকে তাদের বিতাড়িত করার প্রক্রিয়া বলে মনে করছে।
পূর্ব জেরুজালেমের দামাস্কাস গেটে ইজরায়েলি পুলিশের ব্যারিকেড আর পাশেই উগ্র ডানপন্থী ইজরায়েলিদের মিছিল।
এ বছর রমজানের শেষদিকে ইজরায়েলিদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তারিখ ছিল।
পরবর্তী কারণ রাজনীতি। ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সাম্প্রতিক নির্বাচনের পর অনেক চাপে আছে যখন গত কয়েকটি নির্বাচনে কোন দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এছাড়া তাঁর একটি দুর্নীতির মামলা চলমান। তাঁর বিরোধীরা নতুন সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
ফিলিস্তিনি রাজনীতি গভীরভাবে বিভক্ত। হামাস নিয়ন্ত্রণ করছে গাজা আর ফাতাহ নিয়ন্ত্রণ করছে পশ্চিম তীর। সেখানে সাম্প্রতিক নির্বাচন স্থগিত যা হামাসের জন্য একটি হতাশার কারণ।
ইজরায়েল-হামাস সঙ্ঘাত গত ১৫ বছর ধরে নিয়মিত বিরতিতে একই রকমভাবে চলমান। এর পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক এবং জাতীয় কারণ। সঙ্কটের তীব্রতা কমাতে না পারলে আবারও যুদ্ধ হবে বর্তমান সঙ্ঘাত শেষ হওয়ার পরে। এই সমস্যা সমাধানে সম্পূর্ণ নতুনভাবে অগ্রাধিকার দিয়ে ভাবতে হবে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে।
সর্বোপরি, ফিলিস্তিনিরা খুবই প্রান্তিক অবস্থায় চলে গেছে বলে তাঁরা ভাবছে ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় ১৩ই আগস্ট ২০২০ তারিখে ইজরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও যুক্তরাষ্ট্র স্বাক্ষরিত আব্রাহাম চুক্তির পর।
ইজরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধান হতে পারে এমন যে কোন এলাকা কাদের অধীনে থাকবে তা নয় বরং পুরো জর্ডান নদী এবং ভূমধ্যসাগর মধ্যবর্তী অঞ্চলে সবার জন্য – ইজরায়েলি ও ফিলিস্তিনি – সমতা বা সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
আমরা বলব, রাষ্ট্রের কোন ধর্মীয় পরিচয় থাকা উচিৎ নয় বা ধর্মের ভিত্তিতে কোন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা জনগণের জন্য কখনই কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। সেটি বার বার ইতিহাসে প্রমাণিত। ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে ভারত ভাগ করে পাকিস্তান সৃষ্টি করে সেই পাকিস্তান টেকেনি।
ইজরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের একমাত্র সমাধান হতে পারে উভয় পক্ষকে সমান অধিকারের নিশ্চয়তার ভিত্তিতে একটি একক রাষ্ট্রের পক্ষে হাঁটা, দুটি ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট্র নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না সেখানে প্রত্যেকের নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করে। নতুন রাষ্ট্রের সরকার এবং মন্ত্রী পরিষদে ইহুদি এবং মুসলিম উভয় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যেতে পারে।