স্বাস্থ্য বলতে কেবল শারীরিক নয় মানসিক ও সামাজিক সুস্থতাকে বোঝায়। যদিও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক সুস্থতার ক্লিনিক রয়েছে কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সামাজিক ও মানসিক ভাবে সাপোর্ট ও ডেভেলপমেন্ট করার জন্য সেই ভাবে কোনো ক্লিনিক এর সু-ব্যবস্থা করা হয়নি। যদিও মেন্টাল ক্লিনিক এর বিষয়ে আমরা অনেকেই জানি বা আমাদের কম-বেশি ধারণা রয়েছে। কিন্তু সোশ্যাল ক্লিনিক এর সম্পর্কে সেই অনুযায়ী কোনো ধারণা নেই।
শারীরিক ক্লিনিক বলতে আমরা দৈহিক বিষয় এর চিকিৎসাকে বুঝে থাকি এবং মেন্টাল ক্লিনিক বলতে আমরা মানসিক চিকিৎসাকে বুঝে থাকি কিন্তু সামাজিক চিকিৎসা বা সোশ্যাল ক্লিনিক সম্পর্কে আমরা সেই ভাবে অবগত নই।শারীরিক ক্লিনিক ও মেন্টাল ক্লিনিক এর মতোই সোশ্যাল ক্লিনিকও ব্যক্তির সু-স্বাস্থ্যের সঙ্গে সংযুক্ত।কারণ আমরা সামাজিক ভাবে সুস্থ না থাকলে, মানসিক ও শারীরিক ভাবেও কখনো সুস্থ থাকতে পারবো না।যদিও সোশ্যাল ক্লিনিক এর মধ্যে সামাজিক-মানসিক দুই বিষয় অন্তর্ভুক্ত।
একজন ব্যক্তিকে বিশেষ করে একজন শিক্ষার্থীকে সামাজিক ভাবে সুস্থ থাকতে হবে অর্থাৎ সমাজ সম্পর্কে, সমাজিকীকরণ সম্পর্কে সংস্কৃতি, পরিবেশ, সামাজিক সমস্যা, যৌনশিক্ষা, নেশার কুফল, অপরাধ, কুসংস্কার–বিজ্ঞান, সমাজের বিভিন্ন সম্পর্ক, আচার-আচরণ-প্রথা-রীতিনীতি সহ অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে তাকে জানাতে হবে বা জানতে হবে। এই সমস্ত বিষয়ে যদি শিক্ষার্থীর কোনো জ্ঞান না থাকে তাহলে যে সামাজিক অসুস্থতার শিকার হবে তারপর এর ফলশ্রুতি হিসেবে মানসিক সমস্যারও শিকার হতে পারে।তখন তাদের মধ্যে অপরাধ মূলক কাজকর্ম, পড়াশোনায় অনীহা প্রভৃতি সমস্যা বা সামাজিক ব্যাধিগুলো জন্ম নেবে।
তাই এক্ষেত্রে সোশ্যাল ক্লিনিক এর করণীয় হবে, উপরে উল্লিখিত সমস্ত বিষয়ে শিক্ষার্থীদেরকে জ্ঞান প্রদান করে এবং তাদেরকে সু-পরামর্শ দিয়ে তাদের সামাজিক এবং মানসিক দিক গুলোকে উন্নত করবে। তাদেরকে বিভিন্ন চাপ থেকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজনে কাউন্সেলিংও করে থাকবে। এক কথায়- সোশ্যাল ক্লিনিক এর কাজ হবে, সামাজিক ব্যাধিগুলোকে ‘সমাজতাত্ত্বিক ও মনস্তাত্ত্বিক’ উপায়ে ক্লিনিক্যালী ভাবে ট্রিটমেন্ট ও ডায়াগনেসিস করা। তাই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই সোশ্যাল ক্লিনিক গড়ে তুলতে হবে।
অন্যভাবে বলা যায় যে, যেখানে উপরিউক্ত বিষয় সমূহকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক সচেতন জ্ঞানের আলোর প্রবেশ করাতে হবে। তাহলে শিক্ষার্থীরা সামাজিক ও মানসিক ভাবে অনেকটাই সুস্থ থাকবে এবং পড়াশোনাও খুব ভালো করে করতে পারবে। এই ক্লিনিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে সামাজিক ও মানসিক অন্ত-দ্বন্দ্ব (Self conflict) গুলো থাকবে সেই গুলোকে কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। তাহলেই শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই সুনাগরিক হয়ে উঠতে পারবে।
এই ক্লিনিকে একজন করে মনোবিদ (Psychology এর ছাত্র), সমাজকর্মী (Sociology & Social Work এর ছাত্র) এবং কাউন্সেলর (Psychology, Sociology, Social Work, Special educator এবং Diploma in Counselling এর ছাত্র)-কে নিয়োগ করতে হবে। এনারা শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতি সপ্তাহে দু’দিন করে বিভিন্ন বিষয়ে অনুপ্রেরণা মূলক কথা বলবেন, পরামর্শ দেবেন, গাইড করবেন এবং তাদের মানসিক ও সামাজিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখবেন তথা তাদের সামাজিক ব্যাধি গুলোকে ‘সমাজতাত্ত্বিক- মনস্তাত্ত্বিক’ উপায়ে ট্রিটমেন্ট ও ডায়াগনেসিস করবেন। তখনই তারা অনেকটাই সমাজিকভাবে সুস্থ থাকবে। তাই আমার মনে হয় বর্তমান সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সোশ্যাল ক্লিনিক চালু করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।