বাখমুতে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর ‘ফাঁদে’ পা দিয়েছে রাশিয়া
পূর্বাঞ্চলীয় বাখমুত শহর রক্ষায় টানা ৯ মাসের বেশি যুদ্ধের বেশিরভাগ সময় ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী রক্ষণাত্মক অবস্থানে ছিল। একের পর এক রুশ হামলা তারা ঠেকিয়ে গেছে। গত সপ্তাহে তারা অবাক করে দিয়ে একটি পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে শহরটির পশ্চিমাংশে কয়েক মাইল ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার ও জরুরি রসদ সরবরাহের রুটে রুশ নিয়ন্ত্রণ খর্ব করেছে।
বসে থাকেনি রুশ সেনাবাহিনী। তারা প্রবল শক্তি নিয়ে হামলা চালায়। কয়েক মাসের লড়াইয়ের পর শহরটির বেশিরভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ নিলেও পুরোপুরি দখল করতে পারেনি এখনও তারা। বাখমুত যেনও এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে।
ইউক্রেনীয় কমান্ডাররা বলছেন, যত দিন সম্ভব বাখমুত সুরক্ষার কৌশলের ফল আসতে শুরু করেছে। তাদের লক্ষ্য ছিল, রাশিয়ার সেনাদের সঙ্গে লড়াই করে তাদের ক্লান্ত করে তোলা। যাতে করে ইউক্রেনের অন্যত্র তারা রুশবিরোধী পাল্টা আক্রমণ শুরু করতে পারে।
ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলের এক মুখপাত্র সেরহি চেরেভাতি বলেছেন, আমরা শত্রুদের বাখমুতের ফাঁদে টেনে এনেছি। শত্রুরা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেনা হারিয়েছে। আমরা এখনও তাদের রক্ত ঝরিয়ে যাচ্ছি।
রাশিয়া কয়েক সপ্তাহ লড়াই করে যে ভূখণ্ড দখল করেছিল ইউক্রেন তা কয়েক দিনেই পুনরুদ্ধার করেছে। তুষার ও কাঁদার মধ্যে চলাফেরা কঠিন থাকার পর আবহাওয়া উষ্ণ হতে শুরু করলে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর এই অগ্রগতি আসলো।
গত সপ্তাহে রুশদের কাছ থেকে ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের অভিযানে থাকা ইউক্রেনের ৩য় অ্যাসল্ট ব্রিগেডের সেনা রোমান ট্রখাইমেটস বলেছেন, অঞ্চলটির বিস্তৃত ভূমিতে আড়াল খুব বেশি নেই। ফলে আক্রমণ করা কঠিন।
তিনি বলেন, রাশিয়া অবিরাম গোলাবর্ষণ করছে। কিন্তু আমাদের অভিযান ছিল একটি সফলতা। যদিও আমাদের মূল্য দিতে হয়েছে।
ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র চেরেভাতি বলেছেন, পাল্টা আক্রমণের জন্য যেসব সেনাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে তাদের কেউ বাখমুতে রুশবিরোধী হামলায় অংশ নেয়নি।
ইউক্রেনের ১২৭তম টেরিটরিয়াল ডিফেন্স ব্রিগেডের কর্নেল রোমান গার্শচেঙ্কো বলেছেন, তার ইউনিট ও অন্যরা শহরের প্রাণকেন্দ্র ধরে রাখতে যে কষ্ট করেছে তারই ফল পেয়েছে কিয়েভ।
তার কথায়, শত্রুর রিজার্ভ সেনাদের ব্যবহারে বাধ্য করেছি আমরা। একই সময়ে ইউক্রেনীয় সেনাদের শহরতলীতে মোতায়েন করা হয়েছে।
বাখমুতে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। এক সময় ধারণা করা হচ্ছিল শহরটিতে রুশ নিয়ন্ত্রণ অনিবার্য। তখনও ইউক্রেন শহরটি রক্ষায় অনড় ছিল। এমনকি অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষকও লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
গত সপ্তাহের স্থানীয় ভিত্তিতে সীমিত পাল্টা আক্রমণের সাফল্যের পর অনেকে মনে করছেন পরিস্থিতি এখন পাল্টাতে পারে।
ইউক্রেনের ৯৩তম মেকানাইজড ব্রিগেডের এক সেনা সপ্তাহখানেক আগেও প্রশ্ন তুলেছিলেন কেন তারা বাখমুত ধরে রাখছে। ওই ইউনিটের এক চিকিৎসাকর্মী একথা বলেছেন। তিনি মনে করেন, পাল্টা আক্রমণে তাদের মনোবল বেড়েছে।
স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট অ্যান্ড্রুজ-এর কৌশলগত গবেষণার অধ্যাপক ফিলিপ ওব্রায়েন বলেছেন, বাখমুতকে রক্ষায় লড়াই জারি রাখা ইউক্রেনের একটি কৌশল। শহর থেকে তারা পিছু হটলে ক্রেমলিন জয় ঘোষণা করত এবং রক্ষণাত্মক অবস্থানে চলে যেত। কিন্তু পাল্টা আক্রমণের আগে রাশিয়াকে দুর্বল করতে চেয়েছিল ইউক্রেন। শুধু দুর্বল করাই নয়, তাদের লক্ষ্য ছিল রুশদের প্রশিক্ষণ বা পরিখা খনন থেকে বিরত রাখতে। তারা চেয়েছিল রাশিয়া যেন রক্ষণাত্মক অবস্থান নিতে না পারে।
ইউক্রেনীয় পাল্টা আক্রমণ ঘিরে রুশ ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ ও নিয়মিত সেনাবাহিনীর মধ্যে বিরোধ বাড়ছে।
পাল্টা হামলার বিষয়ে সতর্ক করে রুশ সেনারা লিফলেটও বিতরণ করছে। একটি লেখা হয়েছে, আক্রমণ হবে অপ্রত্যাশিত এবং শতভাগ সম্ভাবনা রাতে। যেমনটি ১৯৪১ সালে করেছিল নাৎসিরা।
ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর ৩য় অ্যাসল্ট ব্রিগেডের সার্জেন্ট ট্রখিমেটস বলছেন, তার ইউনিটের মনোবল চাঙ্গা। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে রক্ষণাত্মক থাকা ছিল খুব কঠিন। কিন্তু এখন আমরা রক্ষণাত্মক নই। ফলাফল দেখাই যাচ্ছে।
সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল