পঞ্জিকা মতে আজ বৈশাখ মাসের শেষ মঙ্গলবার।আজকের এই দিনে প্রতিবছরে নাটোরের কেন্দ্রীয় মন্দির সহ বিভিন্ন মণ্ডপে এবং প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের নদীর কিনারায়, পুকুরের পাড়ে ঘটা করে উৎসবমুখর পরিবেশে শীতলা দেবীর পূজা হত।প্রতিবছরে নাটোর কেন্দ্রীয় জয়কালীবাড়ি মন্দিরে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটতো।
তবে করোনা মহামারীর কারণে্ গত বছরে ভক্ত সমাগম ছিলনা কোথাও।এ বছরেও ঘটেনি ভক্তদের আগমন।ধর্মীয় রীতি রেওয়াজ অনুযায়ী দেবীর পূজা করা হয়েছে জেলার কয়েকটি স্হানে।করোনা মহামারী থেকে বিশ্ববাসীকে রক্ষায় দেবীর কাছে প্রার্থনাও করা হয়।
পুরাণের গল্প অনুযায়ী, যজ্ঞের আগুন থেকে এই দেবীর জন্ম, এবং স্বয়ং ব্রহ্মাও এই দেবীকে সমীহ করে চলতেন।মহামারী থেকে বাঁচতে তিনি মানবজাতিকে নিয়মিত শীতলার পুজা করতে উপদেশ দিয়েছেন।
পৃথিবীতে ভাইরাস মহামারীর সন্ত্রাস নতুন নয়। এক সময় গুটিবসন্ত বা স্মল পক্সও মহামারীর আকার নিয়েছিল। প্রতিষেধকের জোরে ১৯৭৯ সাল নাগাদ গুটিবসন্ত পৃথিবী থেকে নির্মূল করা গিয়েছে। কিন্তু তার আগে বহু বছর ধরে এই অসুখে বলি হয়েছেন বহু মানুষ।
বসন্ত হলে শিশুদের আশি শতাংশই মারা যেত, বড়দের মধ্যে যাঁরা প্রাণে বাঁচতেন, তাঁদের দেহে অসুখের দাগ থেকে যেত। দৃষ্টিশক্তি চলে যেত অনেকের। প্রতিষেধক আবিষ্কারের আগে রোগের হাত থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস আঁকড়ে ধরেছিল- তারা বিশ্বাস করত, শীতলা দেবীর পুজা করলে গুটিবসন্তের প্রকোপ এড়ানো যায়।
বসন্তের দেবী হিসাবে মূল পরিচয় হলেও কালক্রমে, কলেরা থেকে প্লেগ, যে কোনও মহামারীর ক্ষেত্রেই মানুষ শরণাপন্ন হয়েছেন এই দেবীর।সেই রেওয়াজ রীতি এবং বিশ্বাস ভক্তদের মাঝে এখনো অটুট রয়েছে।
শীতলা দেবী ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে বহু ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা এখনও পূজিত হন।সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুসারে, এই দেবীর প্রভাবেই মানুষ বসন্ত-সহ নানা চর্মরোগাক্রান্ত হয়।বসন্তের হাত থেকে বাঁচার জন্য দেবী শীতলাকে পুজো করে তুষ্ট করা বহু প্রাচীন রীতি।
শীতলা দেবীর বাহন গাধা। তাঁকে দেখতে যুবতী মেয়ের মতো, ত্রিনয়নী, গাত্রবর্ণ ফর্সা, পরনে নীল রঙের পোশাক।হাতে থাকে বাটি, পাখা, ঝাড়ু ও শীতল জলের পাত্র। ঝাড়ু জীবাণু ও ধূলিকণা পরিষ্কার করার জন্য এবং শীতল জল রোগ নিরাময়ের প্রতীক।
এই পূজার মাধ্যমে শীতলা দেবী সন্তুষ্ট হয়ে করোনা মহামারী থেকে বিশ্ববাসীকে মুক্তি দেবেন এই প্রার্থনা পূজা আয়োজকদের।