উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা, জাপানে আতঙ্ক
উত্তর কোরিয়া একটি পরীক্ষামূলক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পর জাপানের উত্তরাঞ্চলজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, এমনকি সেখানকার বাসিন্দাদের আত্মরক্ষামূলক অবস্থান নেওয়ার পরামর্শ দেওয়াও হয়েছিল, কিন্তু পরে কোনো বিপদ ছাড়াই সবকিছু শেষ হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ২৩ মিনিটে উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোড়া হয়। এই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি নতুন মডেলের হতে পারে বলে দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, পিয়ংইয়ংয়ের কাছে উত্তর কোরিয়ার একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে, সেখান থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোড়া হতে পারে কারণ ২০১৭ সাল থেকেই এটি বড় ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের একটি প্রধান স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রায় ১০০০ কিলোমিটার (৬২০ মাইল) উড়ে গিয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রের এ উৎক্ষেপণকে ‘গুরুতর উস্কানি’ বলে অভিহিত করেছে তারা।
ক্ষেপণাস্ত্রটি সর্বোচ্চ কতো উচ্চতায় উঠেছিল উত্তর কোরিয়া তা না জানালেও দক্ষিণ কোরিয়ার বার্তা সংস্থা ইয়োনহ্যাপ জানিয়েছে, এটির সর্বোচ্চ উচ্চতা ৩০০০ কিলোমিটারের কম ছিল বলে মনে হয়েছে।
গত বছর উত্তর কোরিয়ার কিছু পরীক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র ৬০০০ কিলোমিটার উচ্চতাও টপকে গিয়েছিল।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা উচ্চ সতর্কাবস্থায় ছিল এবং তাদের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউজ এটিকে দীর্ঘ পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বলে অভিহিত করে এ উৎপক্ষেপণের ‘তীব্র নিন্দা’ জানিয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার এক সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পরীক্ষায় সম্ভবত একটি নতুন অস্ত্র পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে যা উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক এক সামরিক প্যারেডে প্রদর্শিত হয়েছিল।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্রটির গমনপথ ও পাল্লা বিশ্লেষণ করে দেখছে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটি একটি সলিড-ফুয়েল ক্ষেপণাস্ত্র হতে পারে।
উত্তর কোরিয়া আরও সলিড-ফুয়েল ক্ষেপণাস্ত্র বানানের জন্য কাজ করছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র গুদামজাত ও পরিবহন করা সহজ আর কোনো সতর্কীকরণ ছাড়াই বা প্রস্তুতির কোনো সময় না দিয়ে উৎক্ষেপণ করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক র্যান্ড কর্পোরেশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ব্রুস বেনেট জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়া আগে স্বল্প পাল্লার সলিড-ফুয়েল ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করলেও এ ধরনের দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেনি।
এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের প্রতিক্রিয়ায় জাপানে প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।
জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসুকাজু হামাদা জানিয়েছেন, দৃশ্যত ক্ষেপণাস্ত্রটি বড় একটি কোণে পূর্ব দিকে ছোড়া হয়েছে আর সেটি জাপানের এলাকায় পড়েনি। তবে এটি জাপানের নিবিড় অর্থনৈতিক অঞ্চলের ওপর দিয়ে উড়ে গেছে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।
জাপানের কোস্টগার্ড জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র উত্তর কোরিয়ার পূর্বদিকের সাগরে পড়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্রটি কাছাকাছি কোথাও পড়ছে না, এটি নিশ্চিত হওয়ার পর জাপানের কর্তৃপক্ষ হোক্কাইডো দ্বীপে জারি করা সতর্কতা তুলে নেয়।