চেলসিকে হারিয়ে সেমির পথে রিয়াল মাদ্রিদ
মৌসুম জুড়ে ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি চেলসি পারল না নিজেদের মেলে ধরতে। আক্রমণাত্মক ফুটবলে দাপট দেখানো রিয়াল মাদ্রিদ সহজ জয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে ওঠার পথে এগিয়ে গেল।
সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে বুধবার রাতে শেষ আটের প্রথম লেগে ২-০ গোলে জিতেছে কার্লো আনচেলত্তির দল। করিম বেনজেমার গোলে স্বাগতিকরা এগিয়ে যাওয়ার পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মার্কো আসেনসিও।
প্রথমার্ধে কিছুটা লড়াই করা চেলসি দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন চিলওয়েলকে হারিয়ে ১০ জনের দলে পরিণত হয়। এরপর আর তেমন সুযোগই তৈরি করতে পারেনি তারা।
এ মাসের শুরুতে লা লিগায় রিয়াল ভাইয়াদলিদের জালে ৬ গোলের উৎসব করার পর কোপা দেল রেতে বার্সেলোনাকে ৪-০ ব্যবধানে গুঁড়িয়ে দেয় রিয়াল। তবে দারুণ ওই দুই জয়ের পর গত রোববার লিগে ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে হেরে বসে তারা।
বছরের শুরু থেকেই তাদের পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতার এমন অভাব, সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে হেরেছে ৬ ম্যাচে, ড্র তিনটি। এই সময়ে দলটিকে বেশ ভুগতে হয়েছে রক্ষণের দুর্বলতায়।
একই কারণে এ দিন দ্বিতীয় মিনিটেই গোল খেতে বসেছিল তারা। প্রতি-আক্রমণে শেষ ডিফেন্ডার এদের মিলিতাওকে অনায়াসে পেছনে ফেলে বক্সে ঢুকে পড়েন জোয়াও ফেলিক্স, তবে গোলরক্ষক বরাবর শট নিয়ে হতাশ করেন পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড।
দ্বাদশ মিনিটে বক্সে ভিনিসিউস জুনিয়রের সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে লক্ষ্যে প্রথম শট নেন বেনজেমা। তবে তার দুরূহ কোণ থেকে নেওয়া শটে গোলরক্ষক কেপা আরিসাবালাগা ছিলেন প্রস্তুত।
একটু একটু করে চাপ বাড়িয়ে ২১তম মিনিটে এগিয়ে যায় রিয়াল। দানি কারভাহালের দারুণভাবে উঁচু করে বাড়ানো বল বক্সে পেয়ে ভলি করেন ভিনিসিউস, আরিসাবালাগা ঝাঁপিয়ে কোনোমতে এক হাত দিয়ে ঠেকালেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। আলগা বল খুব কাছ থেকে টোকায় জালে পাঠান বেনজেমা।
আসরে গ্রুপ পর্বে জালের দেখা না পাওয়া বেনজেমা নকআউট পর্বে তিন ম্যাচ খেলে প্রতিটিতেই জালের দেখা পেলেন। শেষ ষোলোয় লিভারপুলের বিপক্ষে দুই ম্যাচে করেছিলেন তিনটি।
দুই মিনিট পরই সমতায় ফিরতে পারত চেলসি। তবে কাছ থেকে রাহিম স্টার্লিংয়ের শট ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান থিবো কোর্তোয়া।
অধিকাংশ সময় বল পায়ে রেখে একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে রিয়াল। সুযোগও আসতে থাকে, কিন্তু বিরতির আগে ব্যবধান আর বাড়াতে পারেনি তারা। ভালো পজিশনে থেকেও গোলরক্ষক বরাবর শট নিয়ে হতাশ করেন রদ্রিগো-ভিনিসিউস।
দ্বিতীয়ার্ধে পঞ্চম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ তৈরি করেন লুকা মদ্রিচ। তবে তার কোনাকুনি উঁচু শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে বাইরে যায়।
৫৯তম মিনিটে অনেক বড় ধাক্কা খায় চেলসি। ডি-বক্সে ঢোকার মুখে রদ্রিগোকে টেনে ফেলে দিয়ে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন ইংলিশ ডিফেন্ডার বেন চিলওয়েল।
৭১তম মিনিটে রদ্রিগোকে তুলে আসেনসিওকে নামায় রিয়াল। মাঠে নামার তিন মিনিটের মাথায় দারুণ গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন তিনি।
মদ্রিচের ছোট করে নেওয়া কর্নারে টনি ক্রুসের পা ঘুরে বক্সে বল পেয়ে আসেনসিওকে খুঁজে নেন ভিনিসিউস। স্প্যানিশ মিডফিল্ডারের নিচু শট ঝাঁপিয়েও ঠেকাতে পারেননি গোলরক্ষক।
যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে নিশ্চিত সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি বেনজেমা। তাদের প্রথম প্রচেষ্টা গোলরক্ষক কোনোমতে ফেরানোর পর ফিরতি বল ফাঁকায় পেয়ে আট গজ দূর থেকে হেডে বাইরে পাঠান ফরাসি ফরোয়ার্ড।
দুই গোলের জয়ে সেমি-ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা জোরাল হলেও রিয়ালের সামনে স্বস্তির সুযোগ নেই। আগামী মঙ্গলবার ফিরতি লেগে তাদের খেলতে হবে চেলসির মাঠে।
তাছাড়া গত দুই আসরে এই দুই দলের দুই লেগের লড়াই উপহার দিয়েছে অনেক উন্মাদনা। ২০২০-২১ এর সেমি-ফাইনালে রিয়ালকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে পরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল চেলসি। আর গতবার কোয়ার্টার-ফাইনাল ঘরের মাঠে হারের পর ফিরতি লেগে দুর্দান্ত এক জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল ইংলিশ দলটি।
বের্নাবেউয়ের ওই ম্যাচে চেলসি শেষ পর্যন্ত জিতলেও গোল ব্যবধানে উঠতে পারেনি পরের ধাপে। নিজেদের দারুণ সেই প্রত্যাবর্তনের গল্পে উজ্জীবিত হয়ে আবারও তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি-না, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।