এক যুগ পর সৌদি আরব সফরে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী
২০১১ সালের পর প্রথমবারের মতো সৌদি আরব সফরে গেছেন সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল মেকদাদ। বুধবার (১২ এপ্রিল) তিনি দেশটিতে পৌঁছান এবং গত ১২ বছরের মধ্যে সৌদিতে এটিই তার প্রথম সফর।
ইরানের সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর এবার দামেস্ক ও রিয়াদের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এই দুই আরব দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনাও ক্রমবর্ধমান হয়ে উঠছে। বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) পৃথক দুই প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহানের আমন্ত্রণে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল মেকদাদ বুধবার জেদ্দায় পৌঁছান বলে সৌদি ও সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। পরে সেখানে তারা বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠাসহ নানা ইস্যুতে আলোচনা করেন।
রয়টার্স বলছে, সৌদি আরব এবং সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বুধবার কনস্যুলার পরিষেবা এবং উভয় দেশের মধ্যে ফ্লাইট পুনরায় চালু করার পদক্ষেপসহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। একইসঙ্গে মাদক পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং সিরিয়াকে আরব ব্লকে ফিরে আসায় সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল মেকদাদ বুধবার সৌদি আরবের লোহিত সাগর তীরবর্তী শহর জেদ্দায় অবতরণ করেন। এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সিরিয়ার কোনও জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকের সৌদিতে এটিই প্রথম সফর। এছাড়া সিরিয়ার যে আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটছে, এই সফরটি সেটিও স্পষ্ট করে দিয়েছে।
মূলত টানা ১১ বছর ধরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। ২০১১ সালে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদবিরোধী এক বিক্ষোভের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী ব্যবস্থার নেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশটিতে যে সংঘাতের সূচনা হয়; সেটিই পরে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়, যা এখনও চলছে।
এক দশকের এই সংঘাতে কমপক্ষে তিন লাখ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং দেশটির অর্ধেক জনগোষ্ঠীই বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে সিরিয়ার অন্তত ৬০ লাখ মানুষ।
অবশ্য সংকটের শুরুতে সুন্নি নেতৃত্বাধীন সৌদি আরব ও কাতারসহ যুক্তরাষ্ট্র এবং তার বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক মিত্র সিরিয়ার কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন করে। তবে ইরান ও রাশিয়ার সহায়তা নিয়ে প্রেসিডেন্ট আসাদ সিরিয়ার বেশিরভাগ অংশজুড়ে বিদ্রোহকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।
রয়টার্স বলছে, ২০১১ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশটিতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ওপর নৃশংস দমন-পীড়ন চালানোর পর দামেস্কের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব। একইসঙ্গে আসাদকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য লড়াইরত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থনও করেছিল দেশটি। পরে সিরিয়াকে আরব লীগ থেকেও বরখাস্ত করা হয়।
এদিকে সৌদি-সিরীয় সম্পর্ক পুনঃপ্রবর্তনে আসাদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য আরব রাষ্ট্রগুলোর পদক্ষেপের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে মিশর এবং জর্ডানের শীর্ষ কূটনীতিকদের সাথে সিরীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেকদাদ প্রথমবারের মতো দেখা করার কয়েক সপ্তাহ পর সৌদি সফরে গেলেন তিনি।
আসাদ তার প্রধান মিত্র ইরান এবং রাশিয়ার সহায়তায় সিরিয়ার অনেক অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছে এবং সৌদি আরব বলেছে, আসাদকে বিচ্ছিন্ন করার কাজ কোনও ফল বয়ে আনছে না।
বুধবারের সফরের শেষে একটি যৌথ বিবৃতিতে, ‘উভয় পক্ষই সিরিয়ার রাষ্ট্রকে তার সমস্ত অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে এবং সিরীয় ভূখণ্ডে সশস্ত্র মিলিশিয়াদের উপস্থিতির অবসান ঘটাতে’ সম্মত হয়েছে বলে জানানো হয়।
রয়টার্স বলছে, এই দুই মন্ত্রী সিরিয়ার চলমান সংকটের রাজনৈতিক নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েও আলোচনা করেছেন। যার ফলে ‘সিরিয়ার আরব ব্লকে ফিরে আসার’ সুযোগ বাড়বে। এছাড়া উভয় দেশ মাদক পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতা বাড়াবে বলেও একমত হয়েছেন তারা।
মূলত আঞ্চলিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আরেকটি বৈঠকের আয়োজন করতে যাচ্ছে সৌদি আরব। আর সেই বৈঠকের দুই দিন আগে জেদ্দায় মেকদাদের এই সফরটি অনুষ্ঠিত হলো। আঞ্চলিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আসন্ন বৈঠকে সিরিয়ার আরব লীগে ফিরে আসার বিষয়ে আলোচনা হবে।
এদিকে বুধবার সিরিয়া এবং তিউনিসিয়া বলেছে, তারা তাদের নিজ নিজ দূতাবাস পুনরায় চালু করতে সম্মত হয়েছে।