রুশ আগ্রাসনে প্রাণ হারিয়েছে সাড়ে আট হাজার ইউক্রেনীয়: জাতিসংঘ
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে অন্তত সাড়ে আট হাজার বেসামরিক ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, সত্যিকার অর্থে এই সংখ্যা আরও কয়েক হাজার বেশি হতে পারে। কারণ এখনও অনেক নিহতের তথ্য শনাক্ত ও যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন (ওএইচসিএইচআর) এ উপাত্ত প্রকাশ করেছে। এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে ওএইচসিএইচআর বলেছে, সংস্থাটি মনে করে, প্রকৃত পরিসংখ্যান প্রকাশিত সংখ্যার তুলনায় যথেষ্ট বেশি। কেননা তীব্র সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলো থেকে এখনও তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে এবং কিছু সংখ্যা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরু হয়। জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, শুরু থেকে চলতি বছরের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত অন্তত ৮ হাজার ৪৯০ জন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয় এবং প্রায় ১৪ হাজার ২৪৪ জন গুরুতর আহত হয়।
এর মধ্যে শুধু ডনেস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলেই নিহতের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৯২৭। যুদ্ধক্ষেত্রের তথ্য লাভে সীমাবদ্ধতা থাকায় এই উপাত্তকে ‘বরফখণ্ডের অগ্রভাগ’ এর সঙ্গে তুলনা করেছে সংস্থাটি।
তবে শুরু থেকেই বেসামরিক জনগণের ওপর হামলার কথা অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া।
যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যার বিশ্বাসযোগ্য সূত্র কী?
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে সামরিক ও বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন খবর পাওয়া যাচ্ছে। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে যে হতাহতের সংখ্যা বলা হচ্ছে তা রাশিয়ার বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
যুদ্ধে তথ্যকে নিজেদের কৌশল হিসেবে কাজে লাগায় উভয় পক্ষ। এতে তাদের পক্ষে সমর্থন বা নিন্দা জানানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে। ফলে এমন সময়ে যথেষ্ট ভুল তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছে ইউক্রেন। তারা রাশিয়ার আক্রমণের ভয়াবহতা ও মানবিক দুর্ভোগ যত বেশি তুলে ধরা যায় সেই চেষ্টা করছে।
রাশিয়ার জন্য নিজেদের সেনা ও ইউক্রেনীয় নাগরিকদের ব্যাপক হতাহতের তথ্য যুদ্ধবিরোধী মনোভাব বাড়িয়ে দিতে পারে। যা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শাসনের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
যে কোনও যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা সঠিকভাবে জানানোর ক্ষেত্রে প্রথম বাধা হলো স্বতন্ত্রভাবে যুদ্ধরত পক্ষের বক্তব্য যাচাই করা।
জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থা প্রায় সময়েই বিভিন্ন সূত্র থেকে সঠিক সংখ্যা জানায়। কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তাদেরকেও সংকটে পড়তে হয়।
তাদের অনেক দলকে নতুন জায়গায় স্থানান্তরিত হয় এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে হামলাস্থলে তদন্তকারী দল পাঠানোর সুযোগ থাকে না।
এই সংস্থাগুলো বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়ার পরই সংখ্যা প্রকাশ করে। এসব সূত্রের মধ্যে থাকে বেঁচে থাকা মানুষ, প্রত্যক্ষদর্শী, নিজেদের অনুসন্ধান এবং কর্তৃপক্ষ বা অপর সংস্থার প্রতিবেদন।
এই প্রক্রিয়া সময় সাপেক্ষ এবং এ কারণেই জাতিসংঘের হতাহতের সংখ্যা সরকারের দেওয়া তথ্যের চেয়ে কম থাকে।
সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি