মহড়া শেষ হওয়ার পরও তাইওয়ানকে ঘিরে রেখেছে চীনের যুদ্ধজাহাজ
সামরিক মহড়া শেষ হওয়ার পরও তাইওয়ানকে ঘিরে আছে চীনা নৌবাহিনীর জাহাজ। যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির সঙ্গে বৈঠক করে প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন তাইপেই ফিরে আসার পর শনিবার চীন মহড়া শুরু করে।
তিনদিনের এই মহড়া সোমবার (১০ এপ্রিল) শেষ হলেও তাইওয়ানের আশপাশে এখনও অবস্থান করছে চীনা নৌবাহিনীর জাহাজ। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাপক পরিসরে তিনদিনের চীনা সামরিক মহড়া শেষ হওয়ার পরও চীনা নৌবাহিনীর আটটি জাহাজ এখনও তাইওয়ানের আশপাশের পানিতে অবস্থান করছে বলে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। অন্যদিকে মহড়ার নামে বেইজিংয়ের ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ আচরণের জন্য সমালোচনা করেছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন।
রয়টার্স বলছে, মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির সাথে লস অ্যাঞ্জেলেসে বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট সাই তাইপেই ফিরে আসার পর গত শনিবার চীন মহড়া শুরু করে। ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মাঝে তাইওয়ান প্রণালীতে শুরু করা এই মহড়ায় তাইওয়ানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে নিশানা বানিয়ে হামলার অনুশীলন করে চীন।
চীন গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত তাইওয়ানকে তার নিজস্ব এলাকা হিসেবে বিবেচনা করে এবং দ্বীপটিকে তার নিয়ন্ত্রণে আনতে শক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনাকে কখনোই ত্যাগ করেনি। তবে তাইওয়ানের সরকার চীনের এই দাবির বিরুদ্ধে বরারবই তীব্র আপত্তি জানিয়ে এসেছে।
রয়টার্স বলছে, সামরিক মহড়া শেষ হয়েছে বলে সোমবার রাতে ঘোষণা দেয় চীন। তবে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, আটটি চীনা জাহাজ এখনও দ্বীপের চারপাশে অবস্থান করছে। তবে এর বিস্তারিত জানায়নি তারা।
অবশ্য তাইওয়ানের সরকার বারবারই চীনের এই সামরিক মহড়ার নিন্দা করেছে। সোমবার মধ্যরাতের কিছু আগে নিজের ফেসবুক পেইজে সাই ইং-ওয়েন বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসাবে ‘আমি বিশ্বের কাছে আমার কাউন্টির প্রতিনিধিত্ব করি’। আর তাই যুক্তরাষ্ট্র-সহ তার অন্য বিদেশ সফরগুলো নতুন কিছু নয় এবং তাইওয়ানের জনগণ এটিই প্রত্যাশা করে।
তিনি অভিযোগ করেন, ‘চীন সামরিক মহড়া শুরু করার জন্য এটি (তার যুক্তরাষ্ট্র সফরকে) ব্যবহার করছে এবং এর মাধ্যমে তাইওয়ান ও অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে। এই অঞ্চলের একটি প্রধান দেশের জন্য এটি দায়িত্বশীল কোনও মনোভাব নয়।’
সর্বশেষ এই সামরিক মহড়ার সময় নির্ভুল আক্রমণ এবং তাইওয়ানকে চারদিক থেকে অবরোধের অনুকরণ করে চীন। এসময় সেখানে কয়েক ডজন যুদ্ধবিমান এবং বোমারু বিমানও পাঠায় বেইজিং। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার ৯১টি চীনা সামরিক বিমান দ্বীপের চারপাশে উড্ডয়ন করেছে।
চীনের একাডেমি অব মিলিটারি সায়েন্সেসের কর্মকর্তা ঝাও জিয়াওঝুও চীনা রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসকে দিন দু’য়েক আগে বলেন, চীন এই প্রথম তাইওয়ানের লক্ষ্যবস্তুতে হামলার আদলে মহড়া চালাচ্ছে।
তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর পাশাপাশি বিমানবন্দরের রানওয়ে, সামরিক স্থাপনা ও অন্যান্য লক্ষ্যবস্তু ‘প্রয়োজনে এক হানায় ধ্বংস করা’ হবে বলে সেসময় জানান ঝাও।
উল্লেখ্য, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং।
অন্যদিকে চীনের প্রদেশ নয়, বরং নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে থাকে তাইওয়ান। তাইওয়ানের ভাষ্য, দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতেই থাকবে। তবে তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের চেষ্টার কমতি নেই।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। এরপর থেকে তাইওয়ান নিজস্ব সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।