মা দিবস:
একজন মায়ের কথা বলছি

ভায়লেট হালদার
ভায়লেট হালদার - প্রধান সম্পাদক
5 মিনিটে পড়ুন
রোমের ভ্যাটিকানে ঝর্ণা হালদার

মা দিয়েছো অনেক। নিয়েছি অনেক। এবার আমাদের দেবার পালা। ঋণ শোধ নয়, এটা দুঃখ সুখের ঊর্ধ্বে নিঃস্বার্থ ভালবাসার দায়িত্ব ও কর্তব্য। মা দিবসে তোমার চরণে হাজারবার মাথা নত করি। আমাদের প্রণাম নিও। অনেক অনেক শ্রদ্ধা, ভালবাসা আর কৃতজ্ঞতা।

6 মা দিবস: <br>একজন মায়ের কথা বলছি
৮০দশকে ঝর্ণা হালদারকে নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত কলাম

আমাদের মা ঝর্ণা হালদের একজন শিল্পী। তিনি এখন বার্ধক্যে উপনীত। ঘরটাই তার জগত এখন। এখনো তিনি নিয়মিত বই পড়েন, পেপার পড়েন। কেউ বাসায় আসলে তাদের সঙ্গে গল্প করেন। আর যার কণ্ঠস্বর আমাদের ভাল কর্মে উজ্জীবিত করে, তিনি আমাদের মা। যার ত্যাগস্বীকার আর অক্লান্ত পরিশ্রমে এতটা পথ পাড়ি দিয়ে আমরা আজও বেঁচে আছি। সর্বদাই তিনি আমাদের মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। আজ মা দিবস। প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্ত আমার কাছে মা দিবস। তবুও মায়ের জন্য বিশেষ এই দিনে মায়ের জন্য সবটুকু ভালবাসা। খুব ভালো থেকো মা। ‘মা তোমাকে ভালবাসি’- বাক্যটি ব্যক্ত করার পরেও হৃদয়ের অনুভূতির সবটুকু যেন অব্যক্তই থেকে যায়।

1 8 মা দিবস: <br>একজন মায়ের কথা বলছি
১৯৫৯ সালে শিল্পী চিত্ত হালদারের রংতুলিতে ঝর্ণা হালদার

আমাদের মা ১৯৫৯ সালে আমাদের বাবা মুক্তিযোদ্ধা ও ভাস্কর্য শিল্পী চিত্ত হালদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আমাদের বাবা পেশাগত জীবনে একজন ভাস্কর্য শিল্পী ও চিত্রশিল্পী ছিলেন। আমাদের মা জীবনসঙ্গী হিসেবে আমার বাবার পাশে থেকেছেন আমৃত্যু। বরিশাল শহরে ৬০’এর দশকে মা সমাজ সেবামূলক কাজের সাথে যুক্ত হন। বরিশাল লেডিস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাটা মিসেস হামিদ উদ্দিন আমাদের প্রতিবেশী ছিলেন। তাঁর সঙ্গে আমাদের পরিবারের স্বতঃস্ফূর্ত ও গভীর সম্পর্ক ছিল। বরিশাল লেডিস ক্লাবের প্রতিষ্ঠা লগ্নে আমার মা সেখানর সদস্য ছিলেন। বরিশালের আরেকজন মহীয়সী নারী মিসেস মহসীনা চৌধুরীর সঙ্গে নারীদের জন্য ‘সুই লেদার এন্ড ট্রেনিং সেন্টার।’ নানা সময়ে অসহায় দুঃস্থ নারীদের ব্যক্তিগতভাবেও করতেন সাহায্য সহযোগিতা। যদিও আমার বাবা আমাদের মা’কে এই কাজে উৎসাহ যুগিয়েছিলেন। বাবা যখন ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বোমা তৈরি করেছিলেন, আমার মা পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রান্না করেছেন। বাবা ও মায়ের দাম্পত্য জীবন ছিল সুখের ও শান্তির। আমাদের বাবা ১৯৭৮ সালে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। আমার মা ছিলেন গৃহবধু। যেদিন আমাদের বাবা মারা যান সেদিন মায়ের কাছে ছিল মাত্র পাঁচটাকা। সেদিন আমার মা জানতেন না, কিভাবে তিনি বেঁচে থাকবেন এবং আমাদের তিন বোনকে বাঁচিয়ে রাখবেন। আমাদের মা শিল্পী ছিলেন না। কিভাবে রঙতুলি ধরতে হয় তাও জানতেন না। শুধুমাত্র বাবার স্মৃতি রক্ষায় তিনি সেদিন হাতে তুলে নিয়েছিলেন রঙতুলি আর প্লাস্টার অব প্যারিস। বাবার রেখে যাওয়া ডাইস ব্যবহার করে তিনি তৈরি প্লাস্টার অব প্যারিসের ভাস্কর্য। সেগুলি বিক্রি করতেন। তা থেকে যা আয় হতো তাই দিয়ে তিনি সংসার চালিয়েছেন। প্রথম যেদিন আমার মা পারস্য কবি ওমর খৈয়ামের ভাস্কর্য বানিয়ে নিয়ে গেলে ঢাকায়। দেখা করলেন পটুয়া কামরুল হাসানের সঙ্গে। মায়ের বানানো ভাস্কর্য দেখে পটুয়া কামরুল হাসান খুশী হন এবং মাকে উৎসাহ দেন। কামরুম চাচা প্রায়ই চিঠি লিখতেন। ওনার সঙ্গে বাবার ভীষণ সখ্যতা ছিল। কামরুল চাচা বাবাকে ছোটও ভাই সম স্নেহ করে বাবাকে পাগলা বলে ডাকতেন। তৎকালীন জাতীয় যাদুঘরের মহাপরিচালক ড. এনামূল হক চাচাও আমাদের খোঁজ খবর নিতেন এবং মায়ের শিল্পকর্মের প্রশংসা করে উৎসাহ যুগিয়েছেন সেসময়ে।

2 7 মা দিবস: <br>একজন মায়ের কথা বলছি
ঝর্ণা হালদার

আমাদের মা কারো দয়া, দান দক্ষিনা নেননি। আর আমাদের লেখাপড়া ও বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে তিনি করেছেন কঠোর পরিশ্রম। এমন অনেক দিন গেছে, ঘরে পর্যাপ্ত খাবার না থাকায় তিনি না খেয়ে থেকেছেন, আমার মধ্যে খাবারটুকু ভাগ করে দিয়েছেন। কিন্তু হাল ছাড়েননি। আমাদের মা শিল্পকর্মের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকারের জন্য কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। ৮০’দশকে বরিশালের জাহানারা হলে মায়ের শিল্পকর্ম একাধিকবার প্রদর্শনী করা হয়েছে। পত্রিকা শিরোনাম হয়েছেন, তাকে নিয়ে ছাপা হয়েছে সংবাদ ও প্রতিবেদন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি তিনি পাননি কোন পুরুস্কার। আমরা তার তিন সন্তানই তার একমাত্র পুরস্কার। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একজন নারীর কতখানি দম থাকলে তিনটি কন্যা সন্তান নিয়ে জীবন সংগ্রাম করে টিকে থাকা যায়, আমাদের মা তারই জ্বলন্ত প্রমান।

- বিজ্ঞাপন -
ma 1 মা দিবস: <br>একজন মায়ের কথা বলছি
২০২১ সালে ঝর্ণা হালদার

মায়ের প্রতি সন্তানের অনভূতি যতটা অনুভূত হয় সেই তুলনায় তার প্রকাশ অতি নগন্য। প্রতি মুহূর্তে মায়ের কথা মনে পড়ে, কিন্ত আমরা মুখ ফুটে তা প্রকাশ করি না। আমি জানি, আজ অনেক মা বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রিত, এসব মায়েদের সন্তানেরাও আজ মায়ের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করছে। বৃদ্ধাশ্রমের ঠাই পাওয়া মায়েরা যদি শুনতে পেত তার সন্তানেরা মাকে ভালবাসি বলতে শিখেছে, হৃদয়ের আকুতি প্রকাশ করছে! সন্তানের অপেক্ষায় প্রহর গুনে থাকা মায়েদের মনের লালিত কষ্ট দূর হয়ে যেত। সন্তানের মুখটি দেখার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করে আছে অনেক মা। সকল সন্তান তার মা’কে ভালবাসুক নিঃস্বার্থে ও নিঃশর্তে। পৃথিবীর সকল মাকে আমার শ্রদ্ধা আর ভালবাসা।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
প্রধান সম্পাদক
প্রধান সম্পাদক (২০২১-২০২৩), সাময়িকী
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!