তাইওয়ান ঘিরে চীনের সামরিক মহড়া শুরু
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকারের সঙ্গে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের বৈঠক নিয়ে ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাতে তাইওয়ানের আশপাশে তিনদিনের সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন।
শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই মহড়ার বিপরীতে শান্ত প্রতিক্রিয়া দেখানোর আশ্বাস দিয়েছে স্বশাসিত দ্বীপ তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, লস এঞ্জেলেসে মার্কিন স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থির সঙ্গে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের বৈঠকের এর প্রতিক্রিয়ায় স্বশাসিত দ্বীপটির কাছে চীন মহড়া করবে বলে আগে থেকেই অনুমান করা হচ্ছিল; সাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পরদিন চীনের ঘোষণায় সেই অনুমান সত্য হল।
চীন তাইওয়ানকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসেবে দেখে; দ্বীপটিকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ থেকেও পিছপা হবে না বলে হুঁশিয়ার করেছে বেইজিং।
ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতার চীন সফর শেষ হওয়ার কয়েকঘণ্টা পর বেইজিং তাইওয়ানের আশপাশে সামরিক মহড়া শুরুর ঘোষণা দেয়।
চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড জানায়, তারা ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী’ তাইওয়ান প্রণালী ও তাইওয়ানের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব অংশে যুদ্ধপ্রস্তুতি মূলক টহল ও ‘জয়েন্ট সোর্ড’ মহড়া শুরু করতে যাচ্ছে।
“তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি ও বাইরের শক্তির মধ্যে মিথস্ক্রিয়া এবং উসকানির বিরুদ্ধে এটা গুরুতর হুঁশিয়ারি এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার সুরক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ,” সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলে ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড।
এর পাল্টায় তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ও ব্যাপক মাত্রায় সতর্ক রয়েছে। দ্বীপের নিরাপত্তা রক্ষায় যথাযথ প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে বলেও সতর্ক করেছে তারা।
চীন সাইয়ের যুক্তরাষ্ট্র সফরকে তাদের সামরিক মহড়ার জন্য ‘অজুহাত হিসেবে’ কাজে লাগাচ্ছে, এসব সামরিক মহড়া অঞ্চলের ‘শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার’ গুরুতর ক্ষতি করে আসছে, বিবৃতিতে বলেছে স্বশাসিত দ্বীপটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
“সামরিক বাহিনী ধীরস্থির, যৌক্তিক ও গুরুতর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় ‘না উত্তেজনা বৃদ্ধি না বিরোধ’ এই নীতি অনুসারে পাহারা ও পর্যবেক্ষণে থাকবে,” বলেছে তারা।
শনিবার ভোরে দ্বীপটির এ মন্ত্রণালয় আগের ২৪ ঘণ্টায় তাইওয়ানের আকাশ সুরক্ষা অঞ্চলে ৪টি চীনা আকাশযান শনাক্ত করার কথা জানায়।
তাইওয়ানের আকাশ সুরক্ষা অঞ্চলে চীনা আকাশযানের এই সংখ্যা ‘অস্বাভাবিক নয়’, বলছে রয়টার্স।
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান মাইকেল ম্যাককল নেতৃত্বাধীন একটি দল এখন তাইওয়ান সফর করছেন। শনিবার সাইয়ের সঙ্গে ওই দলটির বৈঠক হওয়ার কথা।
চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র পিপলস ডেইলি’র শনিবারের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, তাইওয়ানের বিচ্ছিন্ন হওয়ার যে কোনও ধরনের চেষ্টাকে আটকে দেওয়ার শক্তিশালী সক্ষমতা রয়েছে চীন সরকারের।
“চীন সরকারের নেওয়া সমস্ত পাল্টা ব্যবস্থা জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় চীনের বৈধ ও আইনি অধিকারের অন্তর্গত,” বলা হয়েছে এতে।
সাই বলছেন, তাইওয়ানের জনগণই কেবল তাদের ভবিষ্যৎ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
তিনি একাধিকবার চীনের সঙ্গে বসার প্রস্তাবও দিয়েছেন, কিন্তু তাকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ মনে করা বেইজিং প্রতিবারই সেসব প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ম্যাককার্থির সঙ্গে সাইয়ের বৈঠক হলে ‘পাল্টা ব্যবস্থা’ নেওয়ার হুমকি আগেই দিয়ে রেখেছিল বেইজিং। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা কাঠামোতে প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্টের পরই প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকারের অবস্থান।
গত বছর অগাস্টে সেসময়কার মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পাল্টায় চীন তাইওয়ানের আশপাশে তাজা ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়াসহ ব্যাপক সামরিক মহড়া চালিয়েছিল।