– কবি মিলি রায়
সূর্যগন্ধা
সহস্রকাল আমি ভেসে বেড়িয়েছি সাগরের ফেনিল আবর্তে
বিভ্রম রেখা ধরে হেঁটে গেছি কতো কাল
দিশাহীন নক্ষত্রের মতো ঘুরে বেড়িয়েছি
তোমার অনন্ত ছায়াপথে,
ভস্ম হৃদয় নিয়ে সূর্যের মতো পুড়িয়েছি নিজেকে
জলঘুঙুরের ভাষায় লিখবো বলে তোমায়
আমার কতো স্বপ্ন গেছে ভেসে।
তোমার তারেই বেঁধেছি আমার প্রাণ
বিবাগী বেহাগের সুরে,
পুষ্পিত ব্যাথার ব্যাকুল ঘ্রাণে,
এঁকেছি নিষাদের শ্লোক, জলের অক্ষরে।
রাত্রির বৃন্ত থেকে ছিঁড়ে এনেছিলাম প্রমিত সকাল
বিশুষ্ক ভূমিতে বপন করে গেছি জলজ ফসল অবিরত
ক্ষরাময় মাটির মতো চুষে নিয়েছিলাম বিন্দু বিন্দু জল
সলজ্জ প্রেমিকার মতো পরাবাস্তব জলের আয়নায়
মেঘের ছায়া ধরেছি কতো।
ইতিহাসের গন্ধ মাখানো পৌরাণিক আখ্যানের মতো
অবশেষে তুমি এলে, ঠোঁটে নিয়ে অমিত প্রণয় সন্ধ্যা
তোমার ছোঁয়ায় ফুটলো আমার
প্রেমের বৃন্দাবন, কবিতা সূর্যগন্ধা।
নির্বাসন
অরণ্যের আদিমতম গন্ধ মাখানো
নেশাচ্ছন্ন যুবকের মতো
চির সম্মোহনী হাসি তোমার,
মন মহুয়ায় মাতাল হয়েছিলাম আমি
তোমার হৃদয় উদ্গত সঞ্জীবনী আলোয়
ভেসে গিয়েছিলাম বরফ গলা নদীর মতো,
সম্মোহনের সূর্যগন্ধী ডানায় মেখেছিলাম বসরাই গোলাপের পাপড়ি।
সহজিয়া ছন্দে মেতে উঠেছিলো তারুণ্যের ভাষা
ধ্রুপদী পিপাসায় ছুঁয়েছিলো নির্মল জল
তোমার পূন্য জলে স্নান করে পুনর্জন্ম হয়েছিলো আমার।
তোমার মাছরাঙা ঠোঁটে, অমৃত অক্ষরে এঁকেছিলাম পৌরাণিক গুহাচিত্র,
ফেনিল উচ্ছ্বাসে মুখ ডুবিয়ে ছিলাম
তোমার চন্দনগন্ধী বুকের পুরুষালি উপত্যকায়
সাতরঙ অনুভূতিগুলো নকশা কেঁটে ছিলো প্রানের
পেলবতায়।
দুকূল উপচানো পাহাড়ি ঝর্ণায়
ভেসে এসেছিলো সাঁওতালি ধুন
ইথারে গা ভাসিয়েছিলো আমাদের লুকোনো কথার হাজারো ফুলঝুরি।
শুরু হয়েছিলো আমার নিঃশব্দ ভ্রমণ তোমার মনের অরণ্যে
চিলেকোঠায় লুকোনো এক টুকরো নরম রোদের মতো।
খাঁচা ভালোবেসে
নির্বাসিত মনের ক্লান্ত পাখি আজ উড়তে ভুলে গেছে,
প্রাচীন প্রেম আজ বন্দী কাঁচের দেয়ালে।