জামিন পেলেন সাংবাদিক শামসুজ্জামান
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দি প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে পুলিশ প্রতিবেদন হওয়া পর্যন্ত জামিন দিয়েছে আদালত। ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর সোমবার ২০ হাজার টাকা মুচলেকায় শামসের জামিন মঞ্জুর করেন।
শামসের পক্ষে আদালতে ছিলেন আইনজীবী মাহবুবুল হক, আশরাফ-উল-আলম, চৈতন্য চন্দ্র হালদার, সুমন কুমার রায়, বাহাউদ্দিন ইমরান, আমিনুল গণি ও প্রশান্ত কুমার কর্মকার।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে। দুই পক্ষের প্রায় এক ঘণ্টা শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন বিচারক।
এর আগে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন গত ৩০ মার্চ জামিন নাকচ করে শামসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন।
স্বাধীনতা দিবসে এক সংবাদ প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, জাতির জন্য মানহানিকর’ তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ ও প্রচারের অভিযোগে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ মামলা করেন আইনজীবী মশিউর মালেক।
এ মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এবং নাম উল্লেখ না করে একজন সহযোগী ক্যামেরাম্যানকেও আসামি করা হয়েছে। মতিউর রহমান রোববার হাই কোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পান।
প্রথম আলোয় গত ২৬ মার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একজন শ্রমজীবী মানুষকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, “পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।”
ওই মন্তব্য ধরে শিরোনাম করা হলেও ছবি দেওয়া হয় আরেক শিশুর, যার কথা প্রতিবেদনের ভেতরে ছিল। ওই ছবি ও শিরোনাম দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় একটি কার্ড পোস্ট করা হয়, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাত্তর টেলিভিশনে একটি প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা ওই প্রতিবেদনে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ উপাদান থাকার কথা বলেন।
পরে প্রথম আলো প্রতিবেদনটি থেকে ছবি সরিয়ে শিরোনাম বদলে দেয়। পাশাপাশি তাদের সোশাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্টও প্রত্যাহার করা হয়।
প্রতিবেদন প্রকাশের তিন দিন পর ২৯ মার্চ ভোরে শামসকে তার সাভারের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় সিআইডি। প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
এর মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের নেতা মো. গোলাম কিবরিয়া ঢাকার তেজগাঁ থানায় এবং আইনজীবী মশিউর মালেক রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা করেন।
এর মধ্যে রমনা থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শামসকে আদালতে তোলা হলে বিচারক জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
চার দিন পর সোমবার সকালে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আবারও জামিনের আবেদন করা হলে এবার তা মঞ্জুর হল।