১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে’ অথবা বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের স্বীকৃতি দেয়া হয় ৩রা মে৷ সেই থেকে প্রতি বছরই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ইউনেস্কো দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচির আয়োজন করে। আর এ উপলক্ষে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ২০০২ সাল থেকে মুক্ত গণমাধ্যম এর সূচক প্রকাশ করে আসছে। ২০২১ সালের এই সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫২তম। এই সূচকে একবারে প্রথম দিকে নরওয়ের নাম রয়েছে।
২০২০ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫১তম। এর আগের বছর সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫০তম। অর্থাৎ, ধারাবাহিক ভাবে সূচক কমছে।
এবারের সূচকে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান (১৪৫), ভারত (১৪২), মিয়ানমার (১৪০), শ্রীলঙ্কা (১২৭), আফগানিস্তান (১২২), নেপাল (১০৬), মালদ্বীপ (৭৯), ভুটান (৬৫)।
১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সবর্জনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে: ‘প্রত্যেকের মতামত ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে।’ বাকস্বাধীনতার বিষয়টি প্রেসের স্বাধীনতার মতো একই আইনের আওতায় আসে, যার ফলে কথিত এবং প্রকাশিত মত প্রকাশের জন্য সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। সুইডেন বিশ্বের প্রথম দেশ যেটি ১৭৬৬ সালের ফ্রিডম অফ প্রেস অ্যাক্টের মাধ্যমে প্রেসের স্বাধীনতাকে তাদের সংবিধানে সংরক্ষণ করেছিল । সারা বিশ্বেই প্রেসের স্বাধীনতা কে খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। সাংবাদিকতার স্বাধীনতার দিকটি উপেক্ষিত হলে আসলে দেশের মুক্ত তথ্য প্রবাহ বা মতামত বাধা গ্রস্থ হয়ে থাকে।
প্রাচীন গ্রীসে মতপ্রকাশ যতক্ষণ না শাসকের কাছে বিব্রতকর হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত মতপ্রকাশকে গ্রহণ করা হয়েছে- আবার তা যখন মানতে পারছে না শাসকরা তখন সক্রেটিশ কে বিষপানে বাধ্য করেছে। শাসকরা যখন যেমন পেরেছেন গণমাধ্যমকে নিজের মত করে সাজিয়ে তুলতে চেষ্টা করে গেছেন। গণমাধ্যম যেন হয়ে ওঠে শাসকের প্রচারযন্ত্র। শাসনকার্যের সমালোচনা কোন কালেই তাদের কাছে গ্রহণীয় ছিল না, এর ফলে সারা বিশ্বেই গণমাধ্যমের ঝুঁকি বেড়ে চলেছে- আমাদের দেশও তা থেকে ব্যাতিক্রম নয়। একদিকে শাসক শ্রেণী, প্রভাবশালী ব্যাক্তিবর্গ , ছাড়াও স্ব আরোপিত বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে খুবই কম। এরফলে গণমাধ্যম কোন ভাবেই প্রবল রাষ্ট্রের কাছে আর চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না।
একদিকে ব্যাক্তি সাংবাদিক ও সাংবাদিক প্রতিষ্ঠান আজ চরম ভাবে বৈরী অবস্থানের শিকার। অর্থনৈতিক, রুটি রুজির ঝুকি, সকল ক্ষেত্রে বৈরী পরিবেশে আজ সাংবাদিকতা উপেক্ষিত, লাঞ্ছিত, এমনকি দিক ও লক্ষ্যহীন হিসেবে উপস্থাপিত। সবচেয়ে প্রবল ঝুকি তৈরী হয়েছে প্রযুক্তির পরিবর্তন, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে, গণমাধ্যমের ভূমিকা একটি নতুন সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। গণমানুষ আজ বাছ বিচারহীন হয়ে ঝুঁকে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনেক সময় এই মাধ্যমে উপস্থাপিত বিষয় নিয়ে আবার গণমাধ্যমে সংবাদ হচ্ছে। এসবই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সর্বগ্রাসী প্রভাবের ফল।গণমাধ্যমেও সারাক্ষণ এই মাধ্যমের সাথে কান খাড়া করে রাখতে হচ্ছে, যেন সাধারণ মানুষের প্রবল ক্ষমতার উৎস হিসেবে এটি যেন দেখা দেয়ার মতো। কিন্তু এটি সত্য নয়।
বাছ বিচারহীন তথ্যের অবাধ প্রবাহের কারনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সকল প্রকার সহিংসতা, দাঙ্গা ফ্যাসাদ, অপপ্রচারেরও উৎসে পরিণত হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গণমাধ্যমও কোন প্রকার সম্পাদকীয় নীতি ব্যাতিরেকে পরিচালিত হচ্ছে। এসব কারণেই গণ মাধ্যমকে দিনদিন তার ধার ও ভাড় হারিয়ে ফেলতে বাধ্য করেছে। সকল নতুন নতুন ভাবনার বিষয়টি নিয়েই বিশ্বের অপরাপার দেশের সাথে নানা সংকট, উত্তরণ ও সম্ভাবনা নিয়ে গণমাধ্যম কতটুকু মানুষের দ্বারে যেতে পেরেছে না করোপরেট দুনিয়ায় লুটিয়ে পড়েছে, তার খোজ সাংবাদিকদেরই নিতে হবে। কেননা মানুষকে সঠিক বার্তা দেয়ার দায়িত্ব শেষ পরযন্ত সাংবাদিকদেরই। আর এই মহান দায়িত্ব পালন করতে তাদেরকে রক্তচক্ষু. জেল, জুলুম এমনকি জীবন দিতে হয়েছে। সত্য জানানোর দায় ও দায়িত্ব থেকে তাদেরকেই এগিয়ে আসতে হয়েছে বারংবার।