চলতি মাসরে শুরুতেই অলিম্পিক মার্শেইর কাছে হেরে ফ্রেঞ্চ কাপ থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল পিএসজিকে। প্যারিসিয়ানদের বিপক্ষে তাই একমাত্র ফরাসি ক্লাব হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা দলটির সামনে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের শিরোপা লড়াই জমিয়ে তোলার সুযোগ ছিল। তবে কিলিয়ান এমবাপ্পে এবং লিওনেল মেসির যুগলবন্দীতে অলিম্পিক মার্শেইকে সহজেই ৩-০ গোলে হারিয়েছে পিএসজি।
২৬ ফেব্রুয়ারি রবিবার ঘরের মাঠে লিগ ওয়ানের ম্যাচে অবশ্য প্রথমে এগিয়ে যেতে পারত অলিম্পিক মার্শেই। পাল্টা আক্রমণে পিএসজি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি ডোনারুম্মাকে একা পেয়ে গিয়েছিলেন নুনো তাভারেস। তবে তার শট নিতে বিলম্ব হওয়ায় পেছন থেকে দুর্দান্ত স্লাইডিং ট্যাকেলে কর্নারের বিনিময়ে দলকে রক্ষা করেন পিএসজি ফুলব্যাক নুনো মেন্ডেস।
তবে ২৫ মিনিটে পিএসজি সুযোগ কাজে লাগাতে কোনো ভুল করেনি। মাঝমাঠ থেকে লিওনেল মেসির বাড়ানো বল ধরে দারুণ গতিতে এগিয়ে গিয়ে আড়াআড়ি শটে বল জালে জড়িয়ে প্যারিসিয়ানদের এগিয়ে দেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। এরিক বেইলির গোলে মিনিট তিনেক পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু বল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার সময় এ ডিফেন্ডারের হাত ছুঁয়ে যাওয়ায় গোলটি বাতিল হয়ে যায়।
তবে পরের মিনিটেই দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় পিএসজি। পেনাল্টি স্পটের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা মেসিকে নিখুঁত পাসের মাধ্যমে খুঁজে নেন এমবাপ্পে। ঝাঁপিয়ে পড়া অলিম্পিক মার্শেই গোলরক্ষক পাও লোপেসকে ফাঁকি দিতে ভুল করেননি আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। এটি ছিল মেসির ক্লাব ক্যারিয়ারের ৭০০তম গোল, যার মধ্যে বার্সেলোনার হয়ে করেছেন ৬৭২টি এবং পিএসজির হয়ে ২৮টি।
লিওনেল মেসি ছাড়া ইতিহাসে আর মাত্র একজন খেলোয়াড়ই ক্লাব ফুটবলে ৭০০ গোল করতে পেরেছেন, তিনি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (৭০৯)। তবে সিআর সেভেনের যেখানে সৌদি প্রো লিগে ৮টি ও পর্তুগিজ প্রিমেরা লিগায় ৪টি গোল রয়েছে, সেখানে মেসির ৭০০ গোলই এসেছে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে।
ম্যাচ সংখ্যার দিক থেকেও পর্তুগিজ তারকার চেয়ে বেশ এগিয়ে আছেন মেসি। গত বছরের ৯ অক্টোবর প্রিমিয়ার লিগে এভারটনের বিপক্ষে ক্লাব ক্যারিয়ারে ৭০০তম গোল করতে রোনালদোর যেখানে ৯৪৩ ম্যাচ লেগেছিল, সেখানে মেসির প্রয়োজন হয়েছে ৮৪০ ম্যাচ। ৩৫ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের অবিশ্বাস্য কীর্তির বিশেষত্ব বুঝাতে কিংবদন্তি গ্যারি লিনেকার টুইটারে বলেন, মেসি ক্লাব ক্যারিয়ারের ৭০০তম গোল করল। ১৪ বছরে ধরে মৌসুমে ৫০টা করে গোল করলে এই কীর্তি গড়া যায়। পাগলামি!
চার মিনিট পর আবারও গোল হজম করতে পারত অলিম্পিক মার্শেই। কিন্তু মাত্র ছয় গজ দূর থেকে মেসির ডান পায়ের দুর্বল শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৩৬ মিনিটে কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে দুবার ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া করে পিএসজি। মেসির ডিফেন্স চেরা পাসে ডি-বক্সে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে একা পেয়েও পরাস্ত করতে পারেননি এমবাপ্পে। কিছুক্ষণ পর বিপজ্জনক জায়গা থেকে পিএসজি অধিনায়ক মার্কুইনহোসের নেওয়া আড়াআড়ি শট লক্ষ্যে থাকেনি।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে অলিম্পিক মার্শেইর সামনে ব্যবধান কমানোর সুযোগ এসেছিল। অ্যালেক্সিস সানচেজের নেওয়া ফ্রি-কিক প্রায় জালে আশ্রয় নিয়ে ফেলছিল। কিন্তু চিলিয়ান ফরোয়ার্ডের নেওয়া ফ্রি-কিক কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন ডোনারুম্মা।
দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণাত্মক খেলার ধরনে পরিবর্তন আনেনি পিএসজি। ৫৫ মিনিটে সেটিরই ফসল ঘরে তোলে প্যারিসিয়ানরা। মেসির দিকে বল বাড়িয়ে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের দিকে ছুটতে থাকেন এমবাপে। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের উঁচু করে বাড়ানো বল চমৎকার এক ভলিতে জালে জড়ান ফরানি ফরোয়ার্ড।
এর মাধ্যমে ১৭ গোল নিয়ে এ মৌসুমের লিগ ওয়ানের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে উঠলেন এমবাপ্পে। পাশাপাশি পিএসজির জার্সিতে ২০০তম গোলের মাধ্যমে এডিনসন কাভানির সঙ্গে যৌথভাবে ক্লাব ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতাও এখন ২৪ বছর বয়সী এ ফরাসি উইঙ্গার।
ম্যাচের বাকি সময়টায় বেশ কয়েকবারই ব্যবধান কমানোর সুযোগ পায় মার্শেই। ৬৫ মিনিটে খুব কাছ থেকে সানচেজের নেওয়া হেড ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন ডোনারুম্মা। ফিরতি বলে সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন জিয়াদ কোলাসিনাচও। শেষদিকে ব্যবধান কমানোর সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন ভিতিনিয়া। কিন্তু পিএসজি গোলরক্ষক বরাবর শট নিয়ে দলকে হতাশ করেন এ পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড।
অলিম্পিক মার্শেইর বিপক্ষে এ জয়ে লিগ ওয়ানের শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল পিএসজি। শিরোপা ধরে রাখার লড়াইয়ে ২৫ ম্যাচে ৬০ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকায় সবার ওপরে থাকল প্যারিসিয়ানরা। সমান সংখ্যক ম্যাচে ৫২ পয়েন্ট নিয়ে মার্শেই রয়েছে তাদের পরেই।