কিছুক্ষণ পরই রুশ সেনারা প্রতিবেশী সীমান্তে হামলে পড়বে; ইউক্রেনের নীল আকাশ ছেয়ে যাবে শকুনের বেশে রুশ ক্ষেপণাস্ত্রে, তাসের ঘরের মতো গুঁড়িয়ে পড়বে সুরম্য প্রাসাদ আর রক্তে ভিজে স্যাঁতসেঁতে হয়ে উঠবে স্বচ্ছ মাটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে আবারও স্থল, জল ও বিমান হামলায় কেড়ে নেওয়া হবে এই অসংখ্য মানুষের জীবন।
রাশিয়ার এই বর্বর হত্যাযজ্ঞ শুরু হওয়ার শেষ মুহূর্তটি যেন শান্তির শেষ নিশ্বাসটুকু বুকভরে টেনে নেওয়ার মতো। যা টেনে নিচ্ছিল সমগ্র ইউক্রেন। ঠিক সেই মুহূর্তেই ইউক্রেনীয় তথা শান্তিকামী গোটা বিশ্বের সামনে হাজির হলেন এক বীর, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি। যিনি যুদ্ধবাজ আততায়ীর সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে জয়ী হওয়ার প্রতিজ্ঞা জানালেন দ্ব্যর্থকণ্ঠে। যুদ্ধ শুরুর আগে, শান্তির শেষ ক্ষণে নিবিড়ভাবে ক্যামেরায় তাকিয়ে, ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি পুতিনকে ‘যন্ত্রণা, কলুষ, রক্ত ও মৃত্যুর ভয়াবহতা’ সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। গত বছর এই দিনে, ঠিক ভোরে।
থমথমে সেই ক্ষণে জেলেনস্কি স্পষ্ট ভাষায় পুতিনকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, ‘যুদ্ধ এক বিশাল বিপর্যয়। এই বিপর্যয়ের চড়া মূল্য দিতে হবে।’
এটিই ছিল তার স্যুট-টাই পরে দেওয়া শেষ ভাষণ। এরপর তিনি সামরিক ধাঁচে খাকি পোশাক পরতে শুরু করেন। প্রেসিডেন্ট নন, যেন এক রণাঙ্গনের যোদ্ধা।
দিনটি (২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি)– ইউক্রেনের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয়ের, রাশিয়ার জন্য পট পরিবর্তনকারী, বৃহত্তর বিশ্বের জন্য যুদ্ধের নতুন ইতিহাস লিখে দিলো।
দিন গড়াতে থাকে, অবশেষে মাস পেরিয়ে ছুঁয়ে দিলো বছরও। এ যেন ইউক্রেনের বিভীষিকা আর বিশ্ব উদ্বেগের প্রথম বার্ষিকী উদযাপন! হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ, হারানো আর বেদনার একটি বছর পূর্ণ হলো আজ (২৪ ফেব্রুয়ারি)। যা রাশিয়া ও ইউক্রেন সীমান্ত পেরিয়ে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়লো বিশ্বজুড়ে। যার মাত্র একটি নমুনা- লাগামহীন দ্রব্যমূল্য।
অগুনতি মৃত্যু আর লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতির এক বছর পূর্ণ হলো বটে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের উত্তর আজও অধরা; এ যুদ্ধ থামবে কবে?
একটি জবাব হতে পারে এমন, ‘খুব দ্রুত হচ্ছে না’। কারণ, ‘শান্তিচুক্তি’ নামক যে সূত্র, সেটি এখনও দূরবর্তী ছায়া। রাশিয়ার আক্রমণ দ্বিতীয় বর্ষে পা রাখছে নতুন আবহে, যুদ্ধরত দুই পক্ষই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি এখনও। তাই শান্তি বা সমাধানের সূত্রটি আজও নিখোঁজ।
রক্তাক্ত ৩৬৫ দিনের যন্ত্রণা এবং বিশ্বজুড়ে এর প্রভাব; সেটি আসলে শব্দ বা সূচকে পুরোপুরি তুলে ধরা কঠিন। যুদ্ধের পর থেকে রাশিয়া বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন প্রায়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে পরাজিত করতে পশ্চিমা দেশগুলো একত্রিত হচ্ছে বটে। একই সঙ্গে তারা জুয়া খেলছেন এভাবে, সাবেক কেজিবি (সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা) গুপ্তচর পারমাণবিক হামলা হয়তো চালাবেন না! চীন নিজে দীক্ষা নিচ্ছে তাইওয়ান দখল করতে গেলে কী কী ভুল করা যাবে না। তাইওয়ানকে ঘিরে বাড়ছে চীন-মার্কিন উত্তেজনা।
ধ্বংসস্তূপে পড়ে থাকা ইউক্রেনীয়দের কান্নার পরিমাপ কীভাবে করা যাবে, কীভাবে এই দুর্ভোগ ও নৃশংসতাকে বর্ণনা করা যাবে, কেউ জানে না এখনও।
এদিকে লাগামহীন দুর্দশা যে ইউক্রেনেই লেগে আছে তাও তো নয়। খবর মিলছে, লাখো রুশ পুরুষ যুদ্ধে যাওয়া এড়াতে অন্য দেশে পালাচ্ছে। লাখো ইউক্রেনীয় তাদের বাড়ি-ঘর-স্বজন-সম্পদ হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে আছে স্রষ্টার দিকে চেয়ে। শত শত কোটি ডলার অস্ত্রে বিনিয়োগ হয়েছে দুই রাষ্ট্রের, যা এই যুদ্ধকে আরও প্রাণঘাতী করছে, বৈশ্বিক অর্থনীতি আরও হাজার কোটি ডলার লোকসানের মুখে পড়েছে।
লাশের সংখ্যা–নিশ্চিতভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসাব, যা কব্জির আড়ালে রেখেছে উভয়পক্ষ। যা অনুমান করা যায়, তা নিশ্চিতভাবে ভয়ংকর। পশ্চিমা কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, সৈন্য আর সাধারণ মিলিয়ে কয়েক লাখ হতে পারে এবং অসহনীয়ভাবে এই সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
তবু ইউক্রেন অটল রয়েছে। তবে এটা জয়ের সূচক নয়, বরং এই টিকে থাকাই ক্রেমলিনের জন্য হতাশাজনক পরাজয়।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, পুতিন বিশ্বাস করেছিলেন তার বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আক্রমণের কয়েক দিনের মাথায় ইউক্রেনকে একটি পুতুল রাষ্ট্রে পরিণত করে ফেলবে। জব্দকৃত রুশ নথির ভিত্তিতে পরিচালিত একটি ব্রিটিশ থিংক-ট্যাংকের গবেষণায় বলা হয়েছে, আক্রমণ পরিকল্পনায় প্রতিরোধকামী ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের নিঃশেষ করা, সমূলে ধ্বংস করা অথবা পক্ষ ত্যাগে বাধ্য করার কথা বলা হয়েছিল।
কিন্তু স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে নিশ্চিহ্ন হওয়ার হুমকি ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও বৃহত্তর পশ্চিমাদের কাছে যেকোনও সময়ের তুলনায় আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছে–যে ফলাফল পুতিন এড়াতে চেয়েছিলেন। ন্যাটোর প্রতিটি অস্ত্রের চালান, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পশ্চিমা সহযোগিতা এবং ‘যত দিন লাগে ততদিন’ ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি এতটাই শক্ত বন্ধন তৈরি করেছে। স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ সময় হলে এমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হতে কয়েক বছর লেগে যেতো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিলো ইউক্রেন। কিন্তু এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি নিরেট জাতি হিসেবে গড়ে উঠছে ইউক্রেনীয়রা। লড়াইর করে টিকে থাকতে গিয়ে ইউক্রেনীয়রা বুঝতে পারছে জাতীয় পরিচয়ের সত্যিকার অর্থ কী।
এর সঙ্গে প্রতিদিন জেলেনস্কির ভিডিও বার্তা, যা রণক্ষেত্রের যোদ্ধা থেকে অসহায় শিশুটির মনোবল বাড়ানোর টনিক হিসেবে কাজ করেছে। কিছু কিছু ভিডিওতে জেলেনস্কি কালো হুডি পরে হাজির হচ্ছেন, যাতে লিখে রাখছেন ‘আমি ইউক্রেনীয়’! রাষ্ট্রের প্রধান কর্তার এই জাতীয়তাবোধ উজ্জীবিত করছে প্রতিনিয়ত।
ইউক্রেনীয়দের প্রধান ভাষা হিসেবে রুশ ভাষাকে অস্বীকার করার তালিকায় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বেশিরভাগ ইউক্রেনীয়। রুশদের ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সড়কের নাম পাল্টে ফেলা হয়েছে এবং স্কুলের পাঠ্যবই থেকে রাশিয়ার ইতিহাসও মুছে ফেলা হয়েছে এক বছরে।
পেশায় আইনজীবী ও সাবেক আইন প্রণেতা ওলেনা সটনিক বলেন, ‘আমাদের জন্য পুতিন এমন কিছু করেছেন যা কেউ কখনও করতে পারেনি। তিনি আমাদের একটি স্বাধীন জাতি হতে সহযোগিতা করেছেন।’
বিদেশেও হৃদয় ও মন জয় করেছে ইউক্রেন। এর প্রমাণ হলো নীল ও হলুদ পতাকা বিভিন্ন দেশের শহরে উড়ছে। বিদেশি যুদ্ধবিমান এবং কর্মীরা ঝুঁকি নিচ্ছেন–এবং অনেক সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মতো বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের রণাঙ্গনে জীবন হারাচ্ছেন বিদেশিরাও।
জেলেনস্কির অন্যতম ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা মিখাইলো পডোলিয়াক বলেন, ‘কেউ আর কখনও ইউক্রেন ও রাশিয়া নিয়ে সংশয়ে পড়বে না। কেউ আর বলবে না, ইউক্রেন হলো রাশিয়ার একটা অংশ।’
ইউক্রেনীয়রা এখন দাবি করছেন, রুশ সেনাদের এই প্রতিহত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা নৃশংস ও বিপজ্জনক শত্রু হিসেবে বিশ্বের কাছে পুতিনের মুখোশ উন্মোচন করতে পেরেছেন। কারণ, একসময় পুতিনে মুগ্ধ হয়েছিলেন জর্জ ডব্লিউ. বুশ। ২০০১ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘আমি লোকটির (পুতিন) চোখের দিকে তাকিয়েছি। তাকে আমার খুব সহজবোধ্য ও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে।’ শুধু বুশ নন, ২০১৭ সালে পুতিনকে ভার্সাই প্রাসাদের বাগানে অভ্যর্থনা দিয়ে গলফ মাঠে নিয়ে গিয়েছিলেন তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। পশ্চিমা রাষ্ট্রপ্রধানদের বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছিলেন রুশ নেতা। সেই পুতিন এখন পশ্চিমা নেতাদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। কাছাকাছি যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কেবল চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
দ্রুত ইউক্রেন জয় নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলেও ক্ষমতায় পুতিনের মুষ্টি শক্তভাবেই রয়েছে, বিক্ষোভ দমন করা হয়েছে এবং বেশিরভাগ রুশ নাগরিক দৃশ্যত মনে হচ্ছে চলমান যুদ্ধকে সমর্থন করছেন। এরপরও, অতীতে কেউ ভাবেনি এতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হবে রাশিয়াকে।
এই লড়াইয়ে পুতিন ক্রমশ ওয়াগনার গ্রুপের ভাড়াটে যোদ্ধাদের প্রতি নির্ভরশীল হচ্ছেন। বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠান কারাগার থেকে আসামিদের যোদ্ধা হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছে। রণক্ষেত্রে তাদের মৃত্যুও হচ্ছে বেশি। ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহ করা থেকে সুবিধা পেতেন পুতিন, তাও হারিয়েছেন। বেশিরভাগ ইউরোপীয় ক্রেতা রুশ তেল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত রুশ অর্থনীতি। পুতিন যখন চারপাশ থেকে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন, অনেকে আশঙ্কা করছেন নতুন পথ ধরতে পারেন তিনি। হয়তো পারমাণবিক শক্তি প্রদর্শন অথবা আরও খারাপ কিছু।
কিন্তু ইতিহাস সাধারণত লিখে থাকে যুদ্ধজয়ীরা। এবং এই মুহূর্তে আক্রমণের ফলাফল স্পষ্ট হওয়া থেকে অনেক দূরে রয়েছে।
গত এক বছরের হিসাব কষলে, পুতিনের প্রাথমিক ভুলের একটি ছিল তিনি ফ্রান্সের আয়তনের সমান একটি দেশ দখল করতে চেয়েছেন অল্প সেনা নিয়ে। পশ্চিমাদের ধারণা অনুসারে যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির ডি-ডে বাহিনীর চেয়ে একটু বড়। ১৯৪৪ সালের ৬ জুনের মিশন ছিল অনেক ছোট: ফ্রান্সের পাঁচটি সৈকতে আক্রমণ করে তা মুক্ত করা। যা দিয়ে নাৎসি বাহিনীর দখলকৃত ইউরোপে প্রবেশ করবে মিত্র বাহিনী।
পুতিন এখন নিজের সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য আরও সরঞ্জাম ও লোকবল মোতায়েন করছেন, নতুন আক্রমণের জন্য প্রায় ৩ লাখ নতুন নিয়োগ পাওয়া সেনা পাইপলাইনে রয়েছে। যদিও রাশিয়া এখন পর্যন্ত নতুন আক্রমণের ঘোষণা দেয়নি–কিন্তু পশ্চিমা ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এই নতুন আক্রমণ ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে এরমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
ব্রিটেনের রয়্যাল এয়ার ফোর্সের সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল এডওয়ার স্ট্রিঞ্জার সতর্কতার সঙ্গে বলছেন, ‘তেজস্বী ছোট্ট ইউক্রেন দ্বারা প্রলুব্ধ হবেন না। কারণ, রাশিয়া অনেক বড়। এটি ইউক্রেনকে গ্রাস করে ফেলতে পারে। রুশদের সম্মুখ সমরে পাঠিয়ে ইউক্রেনীয়দের গুলি শেষ হতে বাধ্য করে ফেলতে পারে। পুতিনের এমন মানুষের সংখ্যা শেষ হওয়ার আগে ইউক্রেনের সব গুলি শেষ হয়ে যেতে পারে।’
জেলেনস্কির উপদেষ্টা পডোলিয়াক বলছেন, ‘এখন সময় ইউক্রেনের পক্ষে নয়। একেবারে বিপরীত। একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ ইউক্রেনের জন্য সুবিধাজনক নয়।’ যদিও আক্রমণের এক বছর পূর্তিতে তিনি জোর দিয়েই বললেন, ‘কিন্তু আমরা সঠিক পথে রয়েছি। আমরা এখন একটি ভিন্ন ইউক্রেন। যা একেবারে ভিন্ন।’
এতই ভিন্ন যে আক্রমণপূর্ব জীবনকে মনে হয় ধোঁয়াশাপূর্ণ স্মৃতি। তখন, রাজধানী কিয়েভের ভাস্কর্যগুলো বালুর দেয়ালে আড়াল হয়ে যায়নি। রুশ হামলায় সরবরাহ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় বিমান হামলার সংকেত শুনতেই মানুষদের বাথটাব পূর্ণ করতে হতো না। তাদের ফোনের জন্য এমন অ্যাপস ডাউনলোড করতে হতো না, যা দিয়ে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বা খুনি ড্রোন হামলার সতর্কবার্তা পাওয়া যায়।
এই অ্যাপসগুলোতে ‘স্টার ওয়ার্স’-এর অভিনেতা মার্ক হামিলের ‘বিপদ কেটে গেছে’ বলে বলার মতো কোনও ঘোষণা নেই। পুনরায় লুক স্কাইওয়াকের কণ্ঠে কেউ বলছে না, ‘বিমান হামলার বিপদ সংকেত শেষ। ভাগ্য আপনার সহায় হোক।’ পরাবাস্তব।
এক বছর আগের এই দিনে (২৪ ফেব্রুয়ারি) কিয়েভে রাশিয়ার প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র যখন আঘাত হানতে শুরু করে, তখন যে আতঙ্ক গ্রাস করেছিল জনমনে, সেই স্মৃতিচারণ করেছেন দেশটির সাবেক আইনপ্রণেতা সটনিক। তিনি মাকে ডেকে তোলেন এবং গোছগাছ করতে বলেন। অথচ এখন শহরজুড়ে বিমান হামলার সংকেত সম্পর্কে অনেক ভালো জানেন এবং স্থির রয়েছেন নিজ শহরেই।
‘এমন নয় যে আমরা সাহসী হয়ে গেছি। তবে আমরা আরও সচেতন হয়েছি, বুঝে গেছি যুদ্ধ বলতে আসলে কী বোঝায়’, তিনি বলেন।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি আক্রমণের আগে বিশ্বের ইতিহাসে দিনটি খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। যেমন ১৯৮১ সালে তারিখটিতে তৎকালীন প্রিন্স চার্লস ও লেডি ডায়ানা তাদের বিয়ের বাগদানের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ১৯৫৫ সালের এই দিনে (২৪ ফেব্রুয়ারি) জন্ম হয়েছিল অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের। ১৯৩৮ সালের এই তারিখটিতে প্রথম নাইলন-ব্রিস্টল টুথব্রাশ ‘‘ড. ওয়েস্ট’স মিরাকল টুথব্রাশ’’ বাজারে এসেছিল।
কিন্তু ১৯২০ সালে জার্মানিতে, এই ২৪ ফেব্রুয়ারি হলো সেই তারিখ, যেদিন অ্যাডলফ হিটলার তার ২৫ দফা নতুন নাৎসি পার্টির কাছে তুলে ধরেছিলেন। ওই সময়, হিটলারের শ্রোতাদের জানার সুযোগ ছিল না যে মিউনিখে একটি বিয়ার হলে তার দেওয়া ভাষণটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি পদক্ষেপ হয়ে যাবে। যদি তারা বুঝতে পারতেন, তারা কি মুখ ঘুরিয়ে নিতেন সেদিন?
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়নি। হতাশাবাদীরা হয়তো বলবেন–‘এখন পর্যন্ত’! তবে এটুকু সত্যি- গত একটি বছর ছিল, যেমনটি জেলেনস্কি প্রথমদিনই সতর্কবার্তায় গোটা বিশ্বকে বলেছিলেন- যুদ্ধ মানেই যন্ত্রণা, কলুষ, রক্ত আর মৃত্যুতে পূর্ণ। আগামীতে, আরও ভয়াবহতা আসছে- বিশ্ব ভূখণ্ডে।
[মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি’র প্রতিবেদনটি লিখেছেন প্যারিসভিত্তিক সাংবাদিক জন লেইচেস্টার। ১৯৯৩ সাল থেকে এপির জন্য দুই ডজনের বেশি দেশ থেকে সংবাদ লিখেছেন। ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর পর এটি ছিল তার তৃতীয় অ্যাসাইনমেন্ট।]