ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ মলদোভায় কিছুদিন ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা চোখে পড়ার মতো। পশ্চিমা নেতাদের দাবি, রুশপন্থী বিদ্রোহীরা ইইউপন্থী সরকারকে অবৈধ উপায়ে সরিয়ে দিতে চায়। এদিকে মলদোভার প্রেসিডেন্ট অভিযোগ বলছেন, তার দেশে অভুথ্যান ঘটিয়ে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দেশটির পার্লামেন্টের সামনে না জড়ো হন রুশপন্থী লোকজন। তাদের অনেকের কণ্ঠে ছিল হতাশার গল্প। বেশিরভাগই রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
রবিবার মলদোভার পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হন কয়েক হাজার মানুষ। সারা দেশ থেকেই তারা জড়ো হন এখানে। কেউ কেউ কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, ‘আমরা হাসির পাত্র, সরকার আমাদের উপহাস করছে।’
সংসদের সামনে অংশ নেওয়া নীল রঙের টুপি পরা অলা বলেন, এখানে চার-পাঁচটি বাচ্চা আছে, যাদের আসলে খাওয়ার কিছুই নেই।
এখানকার বাসিন্দারা তাদের আয়ের ৭০ শতাংশের বেশি ব্যয় করে জ্বালানি বিল দিতে গিয়ে। অলা বলেন, ‘তার পেনশনের অর্ধেক শেষ করে দিয়েছে এই সরকার। সরকার নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বেতন এবং পেনশন বাড়াবে। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত একটি পয়সাও দেখিনি।’
রবিবারের কর্মসূচি আয়োজন করে রুশপন্থী সোর পার্টি। আন্দোলনকারীদের সমর্থন দিচ্ছে তারা। সারা দেশ থেকে পার্লামেন্টের সামনে আসতে যে খরচ হয়েছে তা বহন করে পার্টি। মলদোভার এমন অস্থিরতা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় দেশগুলো।
রুশপন্থীদের এমন সমাবেশের কয়েকদিন আগেই মলদোভার প্রেসিডেন্ট মাইয়া সান্দু সতর্ক করে বলেছিলেন, পশ্চিমাপন্থী সরকার উৎখাতে বেসামরিক ছদ্মবেশে নাশকতার জন্য সামরিক প্রশিক্ষিত লোকদের মলদোভায় পাঠানোর ষড়যন্ত্র করছে রাশিয়া। তবে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে মস্কো জানিয়েছে, এটি মলদোভার অভ্যন্তরীণ সামাজিক সমস্যা। দেশটির অর্থনৈতিক সংকট অন্যদিকে ঘুরাতে চেষ্টা চালাচ্ছে সান্দু প্রশাসন।
অর্থনৈতিক সংকটে থাকা মলদোবো রাশিয়ার গ্যাসের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। মস্কো ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিলে তার বড় একটা প্রভাব পড়ে ছোট্ট দেশটির ওপরও।
১৯৯০ সালে মলদোভা থেকে ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চলের একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা করে সেখানকার রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। যদিও এটি ঘোষণা পর্যন্তই থেকে যায়। এই ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চলের অবস্থান আবার ইউক্রেন সীমান্তে। ফলে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধে উদ্বেগ বাড়ছে মলদোভার। দেশটির সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যালেক্সান্দ্রু তানাসে-র বলেছিলেন, ‘ইউক্রেনের পতন হলে মলদোভা নিয়ে ছক কষবে রাশিয়া।’
গত শরৎ-এ মলদোভায় গ্যাস এবং বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি হু হু করে বাড়তে থাকে। কয়েকদিন ধরে চলা অস্থিরতা নিয়ে গত সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) মলদোভার প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, রাশিয়া ইতিমধ্যে জ্বালানি সংকটের মাধ্যমে তার দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীলতার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা জনগণের মধ্যে বড় ধরনের অসন্তোষ সৃষ্টি করছে। আন্দোলন যেন সহিংসতার দিকে যায়।
এ বিষয়ে বেরেনচি বলেন, আমরা ভীত নই। কারণ মলদোভা যদি রাশিয়া নিয়ে নিতে চায় তারা অর্ধেক দিনেই তাদের দ্বারা সম্ভব। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। এখনকার চেয়ে রাশিয়ার চেয়ে অনেক ভালো থাকবো।
অলা এবং তার বন্ধুদের সঙ্গে আওয়াজ তুলে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা চাই রাশিয়া এখানে আসুক, তাদের আসতে দেওয়া হোক। আমরা রাশিয়ার অংশ হতে চাই’। সূত্র: বিবিসি