আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের (বিবিসি) দিল্লি ও মুম্বাই কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছেন ভারতের আয়কর দপ্তরের কর্মকর্তারা। দুই কার্যালয় থেকে ফোন ও ল্যাপটপ জব্দ করেছেন তারা।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকালের দিকে এই তল্লাশি অভিযান চালানো হয়।
গণমাধ্যমের কার্যালয়ে সরকারি আয়কর কর্মকর্তাদের তল্লাশির এই ঘটনায় দেশটির বিরোধী রাজনীতিকরা তীব্র সমালোচনা করেছেন। গত ২৪ জানুয়ারি বিবিসির শাখা সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বিবিসি ভারতের গুজরাট দাঙ্গায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে ‘ইন্ডিয়া: মোদি দ্য কোয়েশ্চেন’ নামের একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে।
এই তথ্যচিত্র প্রকাশের পর ভারতে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। চলমান এই বিতর্কের মাঝেই বিবিসির ভারতীয় দুই কার্যালয়ে অভিযান চালালেন আয়কর দপ্তরের কর্মকর্তারা।
বিবিসি সূত্রের বরাতে জানা গেছে, তল্লাশি চালানোর পর উভয় কার্যালয় সিলগালা করে দিয়েছেন আয়কর কর্মকর্তারা। বিবিসি দিল্লি ও মুম্বাই শাখার সংবাদকর্মীদের তারা জানিয়েছেন, বিবিসির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কর ও তথ্য স্থানান্তর মূল্যে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তার জেরেই মঙ্গলবার এই তল্লাশি চালিয়েছে আয়কর দপ্তর।
দুই অফিসে থাকা সাংবাদিকদের ফোন এবং ল্যাপটপও জব্দ করে নিয়ে গেছেন আয়কর কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে সাংবাদিকদের তারা নির্দেশ দিয়েছেন— তারা যেন নিজেদের মধ্যে ফোনে যোগাযোগ না করেন।
আয়কর দপ্তরের তল্লাশির পর বিবিসি দিল্লি ও মুম্বাই শাখার সাংবাদিকদের উদ্দেশে লিখিত বার্তা দিয়েছে বিবিসি লন্ডনের মূল কার্যালয়। সেই বার্তায় সংবাদকর্মীদেরকে সরকারের সঙ্গে ঝামেলায় না জড়াতে ও ভীত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বিবিসি হেডকোয়ার্টার। বার্তায় হেডকোয়ার্টার বলেছে, ‘আমরা বিবিসি ভারতের দিল্লি ও মুম্বাইসহ অন্যান্য শাখার কার্যালয়ের কর্মীদের অনুরোধ করছি— আপনার আতঙ্কিত হবেন না এবং সরকারের সঙ্গে কোনো প্রকার ঝামেলায় জড়াবেন না। পুরো পরিস্থিতি আমরা সামাল দিচ্ছি।।
কর্মকর্তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে বলেন, ‘কিছু ব্যাপারে অস্পষ্টতা ছিল। সেসব দূর নিরীক্ষার জন্য আমরা এখানে এসেছি। (বিবিসির) ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য আমরা খতিয়ে দেখব। এটা কোনো তল্লাশি নয়।’
ভারতের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল কংগ্রেস অবশ্য বলেছে, গুজরাট দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে তথ্যচিত্র প্রকাশের জেরেই বিবিসিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকার।
এ অভিযান নিয়ে ভারতের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল কংগ্রেস ভাষ্য, গুজরাট দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে তথ্যচিত্র প্রকাশের জেরেই বিবিসিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকার।
পাশাপাশি, বর্তমানে নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ট বলে পরিচিত শিল্পপতি গৌতম আদানির জালিয়াতি ও লুটপাট ঘিলে যখন ভারতের রাজনীতি সরব—সে সময় বিবিসির কার্যালয়ে অভিযানের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার জনগণের মনযোগ অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করছে বলেও মনে করছে কংগ্রেস।