আজ শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) মধ্যরাত থেকে ছয় ইলিশের অভয়াশ্রমে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে। গত ১লা মার্চ থেকে বরিশাল বিভাগের তিনটি অভয়াশ্রমের ২৭২ কিমি সহ মোট ছয় অভয়াশ্রমের ৪৩২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিল বলে জানিয়েছেন মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
মৎস্য অধিদপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, চাঁদপুরের ষাটনল পয়েন্ট থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার চরআলেকজান্ডার পর্যন্ত ১০০ কিমি, ভোলা জেলার চরইলিশা থেকে চরপিয়াল পর্যন্ত ৯০ কিমি, ভোলা জেলার চরভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী জেলার চররুস্তম ১০০ কিমি, বরিশাল জেলার সদর, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ৮২ কিমি, শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া ও ভেদেরগঞ্জ জেলার ২০ কিমি ও পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিমি এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় ২ মাস মাছ ধরা বন্ধ ছিল।
মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাসুদ আরা মমি জানান, ২০০৫ থেকে চারটি অভয়াশ্রমের মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে বরিশাল বিভাগের তিন জেলা ছাড়াও চাঁদপুর, শরীয়তপুর ও লক্ষ্মীপুরের নদ-নদীতে এটি কার্যকর করা হয়েছিল।
‘এবারে অভিযানের সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি লকডাউনের কারনে জেলেদের নদীতে নামার প্রবণতাও আগের চেয়ে কম থাকায় আমরা মনে করছি নিষেধাজ্ঞা সফল হয়েছে। তবে এরফলে মাছের বৃদ্ধি ঠিক কতটুকু পারবে তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। এখন খরা পরিস্থিতির কারনে নদ নদীতে পানি প্রবাহ কম ও লবানাক্ত হয়ে উঠেছে, এটি দীর্ঘ সময়ে থাকলে মাছের ওপরে প্রভাব পড়তে পারে। জুন জুলাই এর সময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে হয়ত আবার ঝাঁকে ঝাঁকে মাছের দেখা পাওয়া সম্ভব।’
বরিশাল বিভাগীয় মৎস অফিস জানায় বরিশাল বিভাগে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ১৯১ জন। এর মধ্যে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে ৬০ ভাগের কম জেলেকে, ২ লাখ ১ হাজার ৯৭৯ জনকে। ফ্রেবুয়ারী থেকে মে পর্যন্ত জেলে কার্ডধারীদের প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা তাদের। এর মধ্যে তারা পেয়েছে মার্চ মাস পর্যন্ত।
মংস্য বিভাগের মতে জাটকা সংরক্ষণ ও মৎস্য আইন প্রতিপালনে এই খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়ে থাকে। তবে দীর্ঘদিন ধরে অভয়াশ্রমের জেলেরা তাদের জন্য আলাদা বরাদ্দের দাবী জানালেও তা বাস্তবায়িত হয়নি বলে জানান, বরিশাল বিভাগীয় ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি ইসরাইল পন্ডিত।
তিনি জানান, এবারে ২ মাসের নিষেধাজ্ঞার সাথে লকডাউনের ৮ মাসের জাটকা নিষেধাজ্ঞায় জেলে পরিবার গুলো কঠিন সময় পার করছে। তাদেরকে ২ মাসের নিষেধাজ্ঞার সময়ে চাল দেয়া প্রতিশ্রিুতি বাস্তবায়িত হয়নি।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আড়িয়াল খা নদী তীরের লোহালিয়া ও রাজগুরু গ্রামের জেলে প্ল্লীতে সরেজমিনে খোজ নিয়ে গেলে জেলেরা জানায় এখানে জেলেদের অর্ধেক এই কার্ড পেয়েছে। তাদের মধ্যে সবাই খাদ্য সহায়তা পাচ্ছে না।
লোহালিয়া গ্রামের প্রবীন জেলে শাহ আলম জানান এই গ্রামে জেলেদের সংখ্যা প্রায় ৪০০ হলেও কার্ড পেয়েছে ৫৫ জন। এমনি ভাবে রাজগুরু গ্রামে ৭শ জেলেথাকলেও জেলে কারড রয়েছে মাত্র ২শ জনের।
তিনি জানান তিনি বয়স্ক ভাতা পাওয়ায় তার নাম জেলে কার্ড থেকে বাদ গেছে।
এই গ্রামে ধলু মিয়া, মোকতার, কামাল শাহ আলম জানান, তাদের জেলে কার্ডই নেই তারা সহায়তা পাবেন কিভাবে?
বাবুগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাইদুজামান জানান এই উপজেলায় ৩২৭৫ জন জেলে কার্ড পেয়েছে। তবে দীর্ঘদিন নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ ছিল, তবে বর্মানে তা হালনাগাদ করার নির্দেশ এসেছে। সেই অনুযায়ী জেলে কার্ডের জন্য আরো ৬শ আবেদন রয়েছে।
বরিশাল জেলার মৎস কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস জানান, বিভাগে জেলেদের বর্তমান সংখ্যার চেয়ে ১০ ভাগ জেলে তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে। সে অনুযায়ী জেলায় ৩০ হাজার জেলে নাম যুক্ত হতে পারে।
মমতাজ বেগম (৭০) জানান, অনেকে জেলে পেশার সাথে সংযুক্ত না থাকলেও জেলে কার্ড পেলেও যারা প্রকৃত জেলে তারা এখনও পায়নি।
জেলেরা জানায় ২মাসের অভয়াশ্রমের নিষেধাজ্ঞা, ৮ মাস জাটকা ধরা নিষিদ্ধ, সেই সাথে চলমান লকডাউন তাদের জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে।
‘মাঝে মাঝে অভিযানে আমাদের জাল ধ্বাংস করা হয় যা আমাদের রুজির উপরে আঘাত পরে আমরা কিভাবে এই কঠিন সময় অতিক্রম করছি তা দেখার কেউ নেই’ জানান শাহ আলম প্যাদা।
‘এই দুই গ্রামের প্রায় ৩শ শিশু সন্তান যারা স্কুলে পড়া লেখা করত তাদের পড়াশুনা একরকম বন্ধ’ জানান কহিনুর বেগম।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস অফিসের উপপরিচালক জানান ’অভিযান সফল হয়েছে আশাকরি মৎস উৎপাদন বাড়বে।’
তিনি জানান বিগত বছরে বরিশাল বিভাগে মৎস উৎপাদন ছিল ৩.৫ লাখ মেট্রিক টন যা এবারে ৩.৬ লাখ টন হবে বলে আশা করছি। অভিযান সফল হওয়ায় ও চলামান লকডাউনের কারনেই এই বৃদ্ধি হবে বলে মনে করছি।