ইরানে বিক্ষোভের ফলে যে পরিবর্তন এসেছে

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
4 মিনিটে পড়ুন

গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাপক বিক্ষোভ-সহিংসতা চলতে থাকে ইরানে। দেশটিতে পোশাক পরা নিয়ে এক তরুণীকে আটক করে পুলিশ। পরে পুলিশি হেফাজতে তার মৃত্যু হলে দেশজুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ। সরকারের কঠোর দমন-পীড়ন সত্ত্বেও ১০০ দিনের ওপর চলে এই সরকারবিরোধী আন্দোলন।

ইরানজুড়ে ওই বিক্ষোভ-সহিংসতায় ৬৩ জন শিশুসহ ৫০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। সাংবাদিক-অধিকারকর্মীসহ প্রায় ১৮ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করে দেশটির শাসক। এর জেরে ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে ইরান।

তবে ইরান ইসলামী প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলছেন তাদের নিয়ন্ত্রণে সবকিছু ঠিকঠাক আছে। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি দেশটির হাজার হাজার কারাবন্দিকে ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যাদের অনেকে সরকার বিরোধী বিক্ষোভের সময় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

প্রতিবাদের ভাষা বদলে গেছে

ইরানে সরকারের সমালোচনাকারী কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সে সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য নেই। সম্প্রতি তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী সাঈদ মাদানির ৪৪ পৃষ্ঠার একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে। এই লেখাটি তিনি কারাগহারে বসে লিখেছেন। পরে সেটি কৌশলে বাইরে নিয়ে এসে প্রকাশ করা হয়। মাদানিকে গত বছরের মে মাসে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি দেশটির মুদ্রাস্ফীতি ও খাদ্য ঘাটতি নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। পরে তাকে “অপপ্রচার” চালানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার করে দেশটির পুলিশ।

- বিজ্ঞাপন -

তিনি তার ৪৪ পৃষ্ঠার লেখায় ইরানের সমাজপরিবর্তনকে চিহ্নিত করেছেন। তিনি লিখেছেন, ইরানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার মানসিকতা তরুণদের ভেতরে বেড়েছে। জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা প্রতিবাদের ভাষাকে বদলে দিয়েছেন। এর সবশেষ তরঙ্গ লক্ষ্য করা গেছে সাম্প্রতিক সরকার বিরোধী বিক্ষোভে।

বিক্ষোভের পর বেড়েছে দমন-পীড়ন

যেকোনো বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মুহূর্তে পরিস্থিতি স্বাভঅবিক রাখতে স্বৈরাচারী শাসক দমন-পীড়ন বাড়িয়ে দেয়। ইরানের ক্ষেত্রেও সেটিই হবে বলে মনে করেন বার্লিন ইউনিভার্সিটির শান্তি ও সহিংসতা কেন্দ্রের গবেষক জেনিস গ্রিম।

তিনি মিশরের উদাহরণ টেনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, “২০১৩ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর সমস্ত প্রতিরোধকে দমাতে মিশরে ব্যাপক দমন-পীড়ন জোরদার করা হয়েছিল। তবে সরকারের এমন নীতির মধ্যে সম্ভাব্য প্রতিরোধের বীজও থাকে। কারণ দমন-পীড়নকারী সরকার সব সময় সংঘাত আর শান্তি বিনষ্ট করে চলে। তারা যতবেশি দমন চালারেত চায় ততবেশি সমাজের একশ্রেণির ভেতর প্রতিরোধের ভাষা গভীর হয়। বিক্ষিপ্ত ক্ষোভকে ঐক্যবদ্ধ করতে সহায়তা করে।”

দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তানে এমনই সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ লক্ষ্য করা গিয়েছিল। প্রাদেশিক রাজধানী জাহেদান প্রতিবাদের শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছিল। গত পাঁচ মাস ধরে সেখানকার পরিস্থিতি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর জাহেদানে গণহত্যা চালায় সরকার। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সেখানে ৮০ জনেরও বেশি মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওইদিন শুক্রবার ছিল। ওই দিনটিকে স্থানীয়রা “ব্লাক ফ্রাইডে” হিসেবে অবিহিত করেছেন।

সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মানবাধিকারকর্মী ফারিবা বালুচ ডয়চে ভেলেকে বলেন, “নিরাপত্তা বাহিনী সর্বত্রই রয়েছে। শহরে কমপক্ষে ১৫টি রাস্তা অবরোধ করা হয়েছে। ইন্টারনেট এখনও সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।”

- বিজ্ঞাপন -

নারীদের সংহতি

সরকারের দমন-পীড়নের ফলে নারীদের প্রতি সংহতি জানানোর মানসিকতা সমাজে বেড়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে রক্ষণশীল ইরানের এমন অনেক প্রদেশে নারীর প্রতি সংহতি জানাতে এবং নারীদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে।

মানবাধিকারকর্মী ফারিবা বালুচ বলেন, ওই বিক্ষোভের সময় তার রাজ্যটিতে নারীরা তাদের ওপর চাপানো পোশাক পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা ইসলামী বিপ্লবের আগে যে ধরনের পোশাক পরতেন সেটি পরতে শুরু করেছেন। এমনকি শুক্রবারের নামাজ শেষে নারীর সমঅধিকারের পক্ষে কথা বলা হচ্ছে। যা আগে দেখা যায়নি।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!