কংক্রিট আর ইটের বড় একটি স্ল্যাবের নিচ থেকে উঁকি দিয়ে আবদুল আলিম মুয়াইনি উদ্ধারকারীদের দিকে দুর্বলভাবে ইশারা করছিলেন। তুরস্কের হতাই প্রদেশে ভয়াবহ ভূমিকম্পের আঘাতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ির নিচে দুই দিনেরও বেশি সময় ধরে আটকে আছেন তিনি।
আবদুল আলিমের পাশেই পড়ে আছে তার স্ত্রী এসরার নিথর দেহ। তার কাছে উদ্ধারকারীদের পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
সোমবারের ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তুরস্কের যেসব এলাকা, হতায়ে তার একটি। স্মরণকালের ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ১৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের আলোকচিত্রী উমিত বেকতাস দ্বিতীয় দিনের মতো হতায়ে ছিলেন।
শহরের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে তিনি অনুসন্ধানী দল ও উদ্ধারকারী স্বেচ্ছাসেবকদের একটি প্রশ্নই জিজ্ঞাসা করেছিলেন, যা আগেও বহুবার করেছেন- আপনারা কি জীবিত কারও কাছে পৌঁছাতে পেরেছেন?
আবদুল আলিমের পা কংক্রিটের নিচে আটকে থাকলেও তার জ্ঞান আছে এবং উদ্ধারকারীদের সাথে কথা বলতে পারছেন তিনি।
তারা বললেন, হ্যাঁ। কারণ তারা আবদুল আলিমকে জীবিত পেয়েছেন।
আবদুল আলিমের পা কংক্রিটের নিচে আটকে থাকলেও তার জ্ঞান আছে এবং উদ্ধারকারীদের সাথে কথা বলতে পারছেন তিনি।
রয়টার্সের আলোকচিত্রী উমিত আব্দুল আলিমের সাথে সরাসরি কথা বলতে পারেননি। তবে আলিমের দুই বন্ধু পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারা বললেন, আবদুল আলিম সিরিয়ার হোমস নগরীর বাসিন্দা। গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে তুরস্কে পাড়ি জমান তিনি। এখানে আসার পর তুর্কি নারী এসরাকে বিয়ে করেন।
এই দম্পতির দুই মেয়ে মাহসেন এবং বেসিরা। তখন পর্যন্ত মেয়েদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা পরিষ্কার ছিল না।
আবদুল আলিমকে উদ্ধারে দীর্ঘসময় লেগে যায়। কয়েক ঘণ্টা পর উমিত সেখানে ফিরে ঘটনাচক্রে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আবদুল আলিমকে উদ্ধার করতেও দেখেন।
উদ্ধারের সময় আবদুল আলিমের পুরো শরীর ধূসর ধুলায় আচ্ছাদিত ছিল। তার এক চোখ ফোলা ছিল এবং তিনি পানিশূন্যতায় ভুগছিলেন। তার চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল। তবে তিনি বেঁচে ফিরেছেন।
কিন্তু তার পরিবারের সদস্যরা বাঁচতে পারেনি। মাটিতে ও কম্বলে ঢাকা তিনটি মৃতদেহ— এসরা, মাহসেন আর বেসিরার।
সূত্র: রয়টার্স।