হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধেতার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা মামলা দায়ের করেছেন। আজ শুক্রবার সকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় মামলাটি করেন তিনি।
সোনারগাঁ থানা পুলিশ সূত্র জানায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বিয়ের প্রলোভন, প্রতারণা ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। মামলার নম্বর ৩০।
গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ে অবস্থানের সময় মামুনুল হক ও ঝর্ণা অবরুদ্ধ করেছিল স্থানীয়রা। সে সময় মামুনুল হক দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করলেও মামলায় জান্নাত নিজেকে মামুনুল হকের স্ত্রী বলেননি। বিয়ের প্রলোভন ও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক জান্নাত আরা ঝর্ণার সঙ্গে সম্পর্ক করেছেন। কিন্তু ঝর্ণা তাকে বিয়ের কথা বললে মামুনুল করছি, করব বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। ২০১৮ সাল থেকে ঘোরাঘুরির কথা বলে মামুনুল তাকে বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্টে নিয়ে যান।
হেফাজত নেতা মামুনুলের সঙ্গে পরিচয় প্রসঙ্গে জান্নাত বলেন, ২০০৫ সালে তার স্বামী মাওলানা শহীদুল ইসলামের মাধ্যমে মামুনুল হকের সঙ্গে পরিচয় হয়। স্বামীর বন্ধু হওয়ায় আমাদের বাড়িতে মামুনুলের অবাধ যাতায়াত ছিল। মামুনুলের সঙ্গে পরিচয়ের আগে আমরা সুখে–শান্তিতে বসবাস করছিলাম। আমাদের স্বামী-স্ত্রীর ছোট ছোট মতানৈক্যের মধ্যে প্রবেশ করে মামুনুল হক শহীদুল ও আমার মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে থাকেন। মামুনুলের কারণে আমাদের দাম্পত্য জীবন চরমভাবে বিষিয়ে ওঠে। সাংসারিক এই টানাপোড়েনে একপর্যায়ে মামনুলের পরামর্শে বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
অভিযোগে জান্নাত বলেন, বিচ্ছেদের পর তিনি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিকভাবে অসহায় হয়ে পড়েন। এ সময় মামুনুল আমাকে খুলনা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ঢাকায় মামুনুল আমাকে তার অনুসারীদের বাসায় রাখেন। সেখানে নানাভাবে আমাকে প্রস্তাব দেন। একপর্যায়ে পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তার প্রলোভনে পা দিই। এরপর তিনি উত্তর ধানমন্ডির নর্থ সার্কুলার রোডের একটি বাসায় আমাকে সাবলেট রাখেন। একটি বিউটি পার্লারে কাজের ব্যবস্থা করে দেন। ঢাকায় থাকার খরচ মামুনুলই দিচ্ছিলেন।
জান্নাত আরা ঝর্ণা অভিযোগে বলেন, গত ৩রা এপ্রিল মামুনুল হক ঘোরাঘুরির কথা বলে আমাকে নিয়ে সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থানকালে কিছু মানুষ আমাদের আটক করে ফেলে। পরে মামুনুল হকের অনুসারীরা রিসোর্টে হামলা করে আমাদের নিয়ে যায়। কিন্তু মামুনুল আমাকে নিজের বাসায় ফিরতে না দিয়ে পরিচিত একজনের বাসায় অবৈধভাবে আটকে রাখেন। কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেননি। পরে কৌশলে আমি আমার বড় ছেলেকে আমার দুরবস্থার সব কথা জানাই এবং আমাকে বন্দিদশা থেকে উদ্ধারের জন্য আইনের আশ্রয় নিতে বলি। পরে ডিবি পুলিশ আমাকে উদ্ধার করলে জানতে পারি, আমার বাবা রাজধানীর কলাবাগান থানায় আমাকের উদ্ধারের জন্য একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। পুলিশ আমাকে উদ্ধারের পর বাবার জিম্মায় দেয়। সেখানে আমি আমার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করায় অভিযোগ দায়ের করতে বিলম্ব হয়।
জান্নাত আরা ঝর্ণার বাবা ওলিয়ার রহমানকে গত ২৪ এপ্রিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয় ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর ২৬ এপ্রিল নিখোঁজ ঝর্ণাকে উদ্ধারে পুলিশের সহায়তায় চেয়ে রাজধানীর কলাবাগান থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেন তিনি। পরদিন মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে ঝর্নাকে উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। ঝর্না উদ্ধার হওয়ার তিন দিনের মাথায় এই মামলা করলেন।
গত ১৮ই এপ্রিল একটি নাশকতা মামলায় রাজধানীর মহম্মদপুর থেকে হেফাজত নেতা মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়।