বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন
সাময়িকী.কম
উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্য আসামে অবৈধ বাংলাদেশি চিহ্নিতকরণের নামে ভারতের নাগরিকদের হেনস্থা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বরাক উপতক্যা সহ আসামের অনেক এলাকাতেই বৈধ ভারতীয় নাগরিকদের গত একমাসে বাংলাদেশি বলে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। আজ রাজ্য বিধানসভায় ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেসের তরফ থেকেই এই অভিযোগ তোলা হয়েছে।
ওই রাজ্যে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি হালনাগাদের কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত যাতে অবৈধ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার অভিযান বন্ধ থাকে, তার জন্য আদালতে আবেদন করার কথা ভাবছে সরকার।
আসামে ১৯৯৭ সাল থেকে অবৈধ বিদেশী নাগরিক বলে সন্দেহ হলেই ভোটার তালিকায় তাঁদের ডি ভোটার – অর্থাৎ ডাউটফুল বা সন্দেহজনক ভোটার বলে চিহ্নিত করা হয়। এঁদের তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয় বিদেশী ট্রাইবুনালে – আর আটক করে রাখা হয় শিবিরে।
বিদেশী চিহ্নিতকরণ ট্রাইবুনাল যাঁদের বিরুদ্ধে সন্দেহজনক বিদেশী বলে কয়েক বছর আগেই নোটিশ জারি করেছিল, অথচ মামলাগুলির নিষ্পত্তি হয় নি, তাঁদেরই গত এক মাসে তড়িঘড়ি গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করানো হচ্ছে। এই নিয়েই আজ বিধানসভায় প্রশ্ন তোলেন ক্ষমতাসীন কংগ্রেস দলেরই বিধায়ক সিদ্দিক আহমেদ।
তিনি বলছিলেন, “যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাদের প্রায় সকলেই ভারতীয়। কিন্তু অনেকেই অর্থের অভাবে উকিল লাগিয়ে ট্রাইবুনালে মামলা লড়তে পারেন নি – তাই একতরফা রায়ে তারা সন্দেহজনক বিদেশী বলে চিহ্নিত হয়ে গেছেন। এঁদেরই এখন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এমন একটা সময়ে যখন নাগরিক পঞ্জী হালনাগাদ করার কাজ চলছে।“
শুধু শিলচরের শিবিরেই আটক হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা জুন মাসের শেষে ৩৩ থেকে গতকাল পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০-এ। এছাড়াও অনেকেই আবার নিজেদের ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ দাখিল করে ছাড়া পেয়েছেন। যেমন ১০২ বছরের এক ব্যক্তি ও তাঁর ৯০ বছর বয়সী স্ত্রীকেও গ্রেপ্তার হয়ে জেলে থাকতে হয়েছে কয়েকদিন। আবার শিলচরের বাসিন্দা সুচন্দ্রা গোস্বামীর বাড়িতে এক অপরিচিত পুরুষ মানুষের নামে আদালতের নোটিশ এসেছিল, তবুও পুলিশ তিন দিন তাঁকে জেলে আটকে রেখেছিল। পরে জামিনে তিনি ছাড়া পান আর আদালত রায় দেয় যে তিনি আসলে জন্মসূত্রেই ভারতীয়।
বিধায়ক সিদ্দিক আহমেদ আরও অভিযোগ করছিলেন যে ডি ভোটার চিহ্নিতকরণের প্রাথমিক কাজেই গন্ডগোল থেকে গেছে।
আসাম সরকারের মুখপাত্র ও মন্ত্রী রকিবুল হোসেন বলছিলেন, “এই বিষয়টাতে সরকারের কিছু করণীয় নেই। হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইবুনালের মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে, সেজন্যই গ্রেপ্তারী চলছে। তবে এটাও ঠিক যে অনেক ভারতীয় নাগরিক এর জন্য হেনস্থা হচ্ছেন। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে উচ্চ আদালতে আপীল করা হবে, যাতে নাগরিক পঞ্জী হালনাগাদ শেষ করার আগে বিদেশী ট্রাইবুনালের পুরণো মামলাগুলি নিয়ে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়।“ আসামে ডি ভোটার বা বিদেশী ইস্যু রাজনৈতিকভাবে খুবই স্পর্শকাতর। সব দলই এই ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসে ভোটের সময়ে – যাতে অসমীয়া জাতীয়তাবাদী ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রাখা যায়।