গোপনে বিয়ে, মা হলেন রানা প্লাজার সেই রেশমা

ফয়সাল কবির
ফয়সাল কবির - ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
5 মিনিটে পড়ুন

সাময়িকী.কম

resma 22562 গোপনে বিয়ে, মা হলেন রানা প্লাজার সেই রেশমা


সাভারের রানা প্লাজা ধসের ১৭ দিন পর ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হওয়া পোশাকশ্রমিক রেশমা কন্যাসন্তানের মা হয়েছেন। তবে তার এই বিয়ের কথা জানতেন না রেশমার পরিবার। সন্তান জন্মের পর জানতে পারে প্রেমিক রাব্বির সঙ্গে রেশমার বিয়ের খবর। মাস ছয়েক আগে প্রেমিক রাব্বিকে নিয়ে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট বেড়িয়ে গেছেন রেশমা।
 
রেশমার সন্তান জন্মের দিনক্ষণ বলতে না পারলেও তার সৎবাবা আরজন আলী বাবু শুক্রবার জানান, সন্তান জন্ম দেয়ার পর ৪০ দিনের মতো পার হয়েছে। আরজন আলী বাবু বলেন, সন্তান জন্মের খবর পেয়ে গত ২২ মার্চ স্ত্রী জোবেদা খাতুনকে নিয়ে তিনি রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে গিয়েছিলেন রেশমা ও তার কন্যাসন্তানকে দেখতে। চলতি মাসের ২৬ তারিখে রেশমা দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে মায়ের বাড়ি আসবেন। সেখানেই নাম রাখা হবে তার কন্যাসন্তানের।
 
আরজন আলী জানান, রেশমার স্বামী রাব্বি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে।
 
এটি রেশমার দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম স্বামী আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর সাভারের রানা প্লাজার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়েছিলেন রেশমা। তার মাত্র ২২ দিনের মাথায় ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এক হাজার ১৩৮ জন নিহত এবং দুই হাজারের বেশি মানুষ আহত হন তাতে। রানা প্লাজা নরকের ধ্বংসস্তূপের ভেতর টানা ১৭ দিন খাবার ও পানি ছাড়া বেঁচে থাকা এবং প্রায় সুস্থ রেশমার উদ্ধারের ঘটনা দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় তোলপাড় তোলে। বিস্ময়ের জন্ম দেয় বিশ্বজুড়ে। সেদিন রেশমা পেয়েছিলেন ‘অলৌকিক কন্যা’ আখ্যা। দেশে তাকে নিয়ে নির্মিত হয় ‘রানা প্লাজা’ নামের চলচ্চিত্র। রেশমার সেই ‘অলৌকিক’ ঘটনার পর পাল্টে যায় তার জীবন। একজন জীর্ণ, বিধ্বস্ত পোশাকশ্রমিক থেকে রেশমা হয়ে ওঠেন জাতীয় চরিত্র। উঠে আসেন সংবাদপত্রের প্রথম পাতার শিরোনামে। শুধু তা-ই নয়, একই সঙ্গে বদলে যায় রেশমার ভাগ্যও। তার জন্য চাকরি নিয়ে এগিয়ে আসে র‌্যাডিসন, ওয়েস্টিনসহ বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। রেশমা বেছে নেন রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত আন্তর্জাতিক মানের পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিনকে। এখন সেখানেই আছেন রেশমা। বেশ উপভোগ করছেন ওয়েস্টিনে তার চাকরি।
 
আর কখনো পোশাক কারখানায় ফিরে যাবেন না উল্লেখ করে রেশমা বলেন, “আমার এখনকার কাজটা অনেক ভালো লাগে। গার্মেন্টস কারখানায় যে কাজ করতাম আমি, তার ঠিক উল্টো কাজ করি এখন। আমার এখনকার কাজ অনেক আরামের এবং সম্মানের।”
 
রানা প্লাজা দুর্ঘটনাস্থল থেকে কয়েক মিটার দূরে অবস্থিত বোন আসমার বাসায় বসে রেশমা জানান, দুর্ঘটনার ২২ দিন আগে তিনি রানা প্লাজায় একটি পোশাক কারখানায় কাজে ঢুকেছিলেন। দৈনিক ১০ ঘণ্টা কাজের বিপরীতে তখন তার মূল বেতন ছিল মাসিক চার হাজার ৭০০ টাকা।
 
দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান ও পুনর্বাসন তহবিল থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ নেননি রেশমা। তিনি বলেন, “শুধু প্রধানমন্ত্রী ও কয়েকটি বেসরকারি উৎস থেকে কিছু টাকা পেয়েছি আমি।”
 
রানা প্লাজা দুর্ঘটনার মাধ্যমে যে অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে, তারপর থেকে অনেকটাই ধার্মিক জীবনযাপন করছেন রেশমা। প্রাত্যহিক নামাজ শেষে তিনি পোশাক খাতে কর্মরত মানুষ এবং তার নিহত সহকর্মীদের জন্য নিয়মিত প্রার্থনা করেন বলে জানান রেশমা। বলেন, “আমি দোয়া করি যেন আমাদের পোশাক কারখানাগুলো নিরাপদ হয় এবং আর কাউকে এভাবে মৃত্যুবরণ করতে না হয়।”
 
এদিকে রেশমার কল্যাণে তার মা জোবেদা খাতুনের সংসারেও সচ্ছলতা এসেছে কিছুটা। রেশমার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের কোশিগাড়ীতে এখন ব্যস্ত রেশমার মা। ভাটা থেকে টুকরো ইট কিনে এনে তা ভেঙে খোয়া বানিয়ে বিক্রি করেন তিনি। রেশমাও প্রতি মাসে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠান মাকে।
 
সরকারিভাবে পাওয়া ৫০ হাজার, রানা প্লাজার ৫০ হাজার এবং বাড়ির জমিসংক্রান্ত বিরোধের সমঝোতায় এক ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া ৫০ হাজার এই দেড় লাখ টাকায় তিনটি পাকা ঘর তুলেছেন রেশমার মা। আরো দুটি ঘর তোলার প্রস্তুতি চলছে।
 
এদিকে রেশমার বাড়ির সামনের মহাসড়কের ধারে স্থান পেয়েছে মৃত্যুঞ্জয়ী রেশমার ছবিসংবলিত বিশাল সাইনবোর্ড। ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩ নম্বর সিংড়া ইউনিয়নের কোশিগাড়ী গ্রামের কৃষক মৃত আনসার আলী ও গৃহিণী জোবেদা খাতুনের দুই ছেলে তিন মেয়ের মধ্যে সবার ছোট রেশমা (২০)। আনসার আলীর মৃত্যুর পর জোবেদা খাতুনের বিয়ে হয় আরজন আলীর সঙ্গে। তিনি খাবার হোটেলে কাজ করেন।
 
এদিকে রেশমার পালিত বাবা আরজন আলী বাবু জানান, তাদের বাড়ির সামনে এক ব্যক্তি একটি ক্লিনিক তৈরি করছে। ক্লিনিকের প্রাচীর তাদের জায়গায় ঢুকে যাওয়ায় স্থানীয় সমঝোতা বৈঠকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে তাদের। ওই টাকা দিয়েই তারা আরও পাকা ঘর তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছেন। -সাম্প্রতিক দেশকাল 

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
অনুসরণ করুন:
কর্মজীবী এবং লেখক
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!