গতকাল (২৬ এপ্রিল) হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’ জান্নাত আরা ঝর্ণাকে জরুরিভাবে উদ্ধারের জন্য রাজধানীর কলাবাগান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তার বাবা মো. ওলিয়ার রহমান।
জিডিতে ওলিয়ার রহমান বলেন, গত ৩রা এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের ঘটনার পর তিনি জানতে পারেন, তার মেয়েকে ইসলামি শরিয়তের বিধান মোতাবেক বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করেন মামুনুল হক। ওই ঘটনার পর তিনি তার মেয়ের ঢাকার ঠিকানায় হাজির হয়েও মেয়ের পাননি। তিনি মনে করেন, মামুনুল হকের লোকজন তার মেয়েকে অপকৌশল প্রয়োগ ও ভয়ভীতির মাধ্যমে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখেছেন।
অভিযোগ পত্রে আরও উল্লেখ করেন, মামুনুল হকের অপকৌশলে ঝর্ণার সুখের প্রথম সংসার ভেঙে যায়। সেই সংসারে দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। একপর্যায়ে জীবনের তাগিদে কাজের সন্ধানে ঝর্ণা ঢাকায় আসেন। উত্তর ধানমন্ডির একটি বাসায় ঝর্ণা বসবাস করছিলেন বলে তাকে জানিয়েছিল।
দুই দিন আগে ঝর্ণা ফোনের মাধ্যমে তার নাতিকে (ঝর্ণার বড় ছেলে) জানান, তিনি গৃহবন্দী অবস্থায় আছেন। তার ওপর চাপ যাচ্ছে। তাকে জরুরিভাবে উদ্ধার করতে বলেন। যেকোনো সময় তাকে মেরে ফেলা হতে পারে। তিনি ঢাকায় মামুনুল হকের বোনের বাসায় আছেন। ঢাকায় কোথায় আছেন, জানতে চাইলে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
জিডিতে ওলিয়ার রহমান আরও উলেখ করেন, তিনি এই ঘটনা তার নাতির কাছ থেকে জানতে পেরেছেন। এ বিষয়ে তিনিসহ আত্মীয়স্বজন উদ্বিগ্ন-চিন্তিত অবস্থায় দিন পার করছেন।
জিডিতে অভিযোগ করা হয়, মামুনুল হকের লোকজন যেকোনো মুহূর্তে তার মেয়েকে অজ্ঞাত স্থানে অসৎ অভিপ্রায়ে আটকে তাকে হত্যার পর লাশ গুম করতে পারে বলে তাদের সন্দেহ হচ্ছে। এমন অবস্থায় তার মেয়েকে জরুরিভাবে উদ্ধার করা আবশ্যক বলে জিডিতে উল্লেখ করেন তিনি।
ওলিয়ার রহমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি সাবেক সেনাসদস্য। তিনি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। সম্প্রতি, দল থেকে ওলিয়ার রহমানকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ।
গত ৩রা এপ্রিল হেফাজত নেতা মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে এক নারীসহ অবরুদ্ধে হন। তখন ওই নারীকে তিনি তাঁর ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’ হিসেবে দাবি করেন। একের পর এক অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
মামুনুল হক সদ্য বিলুপ্ত হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন, পাশাপাশি ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিব এবং জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক। হেফাজতের বহুল বিতর্কিত নেতা মামুনুল হককে ১৮ এপ্রিল ঢাকার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখন দুইটি মামলার ৭দিনের রিমান্ডে আছেন। মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে নতুন-পুরোনো মিলিয়ে অন্তত ১৮টি মামলা এবং সারাদেশে প্রায় দেড় শতাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।