কয়েক শতাব্দী পূর্বে, ভারতের বিশ্বজোড়া নাম ছিল। এত সম্পদশালী দেশ পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় ছিল না। ব্রিটিশরা ভারতে আসার আগে গোটা পৃথিবীর জিডিপি তে ভারতের ২০ শতাংশেরও বেশি অবদান ছিল। বিশাল সমভূমি, খনিজ সম্পদ সম্পন্ন এই দেশ মশলা, বস্ত্র সহ অনেক কিছুতেই পৃথিবীতে অদ্বিতীয় ছিল।
এই দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারলে ভাগ্য খুলে যেত। কিন্তু একটা বিশাল সমস্যা ছিল। ইউরোপ থেকে সরাসরি ভারতে যাওয়ার জলপথের সন্ধান জানে না কেউ। ইউরোপ থেকে ভারতে আসতে গেলে তাকে পেরোতে হয় ভূমধ্যসাগর। আর ভূমধ্যসাগরের অধিকার ছিল অটোমান তুর্কীদের হাতে। ১৪৫৩ খ্রীষ্টাব্দে কনস্টান্টিনোপলের পতনের পর থেকেই এই অঞ্চলের অধিপতি হয় তারা।
[ছবিতে যে সবুজ, হলুদ রেখা দেখতে পাচ্ছেন, সেই পথে বাণিজ্য হত ইউরোপ থেকে ভারতে ও চীনে। পথটা সোজা চলে এসেছে অটোমান তুর্কী প্রভাবিত অঞ্চলের ভিতর দিয়ে। এছাড়াও স্থলপথে বাণিজ্য হত। কালো রেখার পথটি ভাস্কো-দা-গামা আবিষ্কার করেন। | ছবির উৎস]
এরা এত পরিমাণ কর বসাত ইউরোপের বণিকদের ওপর, যে লাভ হত খুব সামান্য। অনেক সময় লাভ হতও না। এই বিপদ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হল ভারতে পৌঁছানোর এমন এক জলপথ আবিষ্কার করা, যার ত্রিসীমানায় অটোমানদের চিহ্ন থাকবে না।
তাই ১৪৫৩ এর কয়েক বছর পরই শুরু হয় বিকল্প পথের সন্ধান। সরকারী ও বেসরকারী পক্ষ চরম উদ্যমে নেমে পড়ে ভারতে যাওয়ার রাস্তার সন্ধান করতে।
এরকমই একজন নাবিক ছিলেন কলম্বাস। যিনি ভারতে পৌঁছানোর জলপথ খুঁজতে বদ্ধপরিকর ছিলেন।
[কলম্বাস | ছবির উৎস]
তিনি ভারতে যাওয়ার জলপথ খুঁজতে বের হন। কিন্তু তিনি ভুল করে পৌঁছান সেই জায়গায়, যাকে আজকে আমরা আমেরিকা বলে জানি। কিন্তু তিনি মনে করেছিলেন যে তিনি ভারতেই এসে পৌঁছেছেন। তাই তো আজও আমেরিকার আদি অধিবাসীদের “ইন্ডিয়ান” বলা হয়।
কিন্তু ১৪৯২ সালে কলম্বাসের এই পথ খোঁজা পৃথিবীর ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ঘটনা গুলির অন্যতম।
দু’দিকে সমুদ্রবেষ্টিত, সুবিস্তৃত উর্বর সমভূমি, নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু বিশিষ্ট “নতুন পৃথিবী” অচিরেই বিভিন্ন দেশ থেকে বহু বসবাসকারী (সেটলার), ব্যবসায়ী, মিশনারি ইত্যাদিদের আকৃষ্ট করে। বহু সংখ্যায় মানুষ এই নতুন ভূমিতে বসবাস শুরু করেন।
এই নতুন জায়গার দখল নিয়ে সুদীর্ঘ দ্বন্দ্বের পর শেষ অবধি ইংরেজরা জয়ী হয়। উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূল কে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ কলোনি স্থাপিত হয়। এই কলোনি গুলি সরাসরি ব্রিটিশ সরকার দ্বারা শাসিত ছিল।
এখন, ব্রিটিশ শাসন যে কত সৎ এবং ন্যায়নিষ্ঠ হয়, তা আমাদের মতো ভারতীয় উপমহাদেশের বাসিন্দাদের থেকে বেশি ভালো কে-ই বা জানে?
পৃথিবী জোড়া সাম্রাজ্যে নানারকম যুদ্ধের কারণে, অন্যান্য খরচের কারণে ব্রিটিশরা ক্রমাগত আমেরিকান দের ওপর কর বাড়িয়ে যেতে লাগল। অন্য অনেক রকমের শোষণ তো ছিলই।
[আমেরিকার প্রথম ১৩টি কলোনি | ছবির উৎস]
অনেক অত্যাচারের পর, আমেরিকার ১৩ টা কলোনি সংঘবদ্ধ হয়ে জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে, ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
ফ্রান্সের নৌবাহিনীর সাহায্যে, এবং নিজেদের সাহস, বিবেচনা ও বীরত্বে ভর করে, বহু বছরের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৭৮৩ সালে আমেরিকা স্বাধীনতা লাভ করে[14]।
[আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ- জন ট্রাম্বুলের তুলিতে | ছবির উৎস]
[আমেরিকার আদি পতাকা, ১৩ টি তারা- ১৩ টি প্রথম কলোনির জন্য | ছবির উৎস]
আমেরিকার ১৩ টি কলোনি একসাথে যুক্ত হয়ে একটা দেশ গঠন করেছিল। এজন্য আমেরিকা কে যুক্তরাষ্ট্র বলা হয়। পরে আরও ৩৭ টি প্রদেশ একে একে আমেরিকায় যুক্ত হয়।
এ হল আপনার প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশের উত্তর- “এর ইতিহাস কী?”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুসারে আমেরিকা একটি ফেডেরাল দেশ। এই দেশ হল ৫০ টি রাজ্যের (রাষ্ট্রের) একটা ফেডারেশন। সেই জন্য এই দেশটিকে একটি যুক্তরাষ্ট্র ডাকা হয়। এই দেশের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন রাজ্যের অনেক বিষয়ে স্বায়ত্বশাসনের অধিকার আছে।
এই দেশে, গোটা দেশে কার্যকর বিভিন্ন ফেডেরাল আইন, বিভিন্ন প্রদেশের প্রাদেশিক আইন আছে। রাজ্য না কেন্দ্র- কে কোন বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারবে, তার একটি নির্দিষ্ট তালিকা আছে।
আমেরিকার একজন মানুষের দু’টি নাগরিকত্ব থাকে- একটি আমেরিকার অন্যটি তাঁর রাজ্যের।
এই কারণগুলির জন্য আমেরিকা হল একটি যুক্তরাষ্ট্র।