বাংলা ভাষা যে স্নিগ্ধ বিদ্রোহের ফসল
এটি সত্য যে, বিশ্বের বেশির ভাগ ভাষার সূচনা হয়েছে ইন্দো-ইউরোপীয় বা আর্য ভাষাগোষ্ঠী থেকে। আজকের দুনিয়ায় সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত যেসব ভাষা, সেগুলোর অনেকটাই এ ভাষা পরিবারের সদস্য। যাদের মধ্যে আছে বাংলা, ইংরেজি, ফরাসি, গ্রিক, আইরিশ, ফারসি, রুশ, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ, জার্মান, ইতালীয়।
খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে মধ্য এশিয়া থেকে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষিক আর্যরা ছড়িয়ে পড়ে নানা অঞ্চলে। তাদের ভাষায় নানাভাবে আসে আঞ্চলিক পার্থক্য। পরিবর্তন থেকে জন্ম নেয় আরো বিবিধ ভাষা।
ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী ছাড়াও অনেক ভাষা-পরিবার রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, সেমীয়-হামীয়, বান্টু, ফিন্নো-উগ্রীয়, তুর্ক-মঙ্গল-মাঞ্চু, ককেশীয়, দ্রাবিড়, অস্ট্রিক, ভোট-চীনীয়, উত্তর-পূর্ব সীমান্তীয়, এস্কিমো, আমেরিকার আদিম ভাষাগুলো ইত্যাদি।
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ দিয়ে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষিকদের একটি অংশ প্রবেশ করেন উপমহাদেশে। তাদের ভাষা পরিচিত ছিল আর্যভাষা নামে। তাদের পেছনে ছিল আরেকটি দল। যারা থাকতেন ইরান ও মধ্য এশিয়ায়। তারাও নিজেদের আর্য নামে অভিহিত করত। ফলে ইন্দো-ইরানীয় শাখাটি দু’টি উপশাখায় বিভক্ত হয়- ইরানীয় ও ভারতীয় আর্য। ইরানীয় উপশাখার প্রাচীন সাহিত্যনিদর্শন আবেস্তা। রচিত হয় খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৮০০ শতকে।
ভারতীয় আর্য ভাষার প্রাচীন নিদর্শন ঋগে¦দ-সংহিতা। ভারতের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে বসবাসকালে বেদ রচনা করে আর্যরা। যার রচনাকাল খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ১৫০০ থেকে ১১ শতক। বেদের কারণে এ ভাষার নাম হয় বৈদিক ভাষা।
বৈদিক ভাষার আরেক নাম ছিল ছান্দস বা উদিচ্যা। উদিচ্যার একটি রূপ প্রাচীন উদিচ্যা, যার নমুনা ঋগে¦দ, আরেক রূপ অর্বাচীন উদিচ্যা, যার সাহিত্যিক নমুনা আছে উপনিষদে।
আর্য ভাষাভাষীরা স্থানীয় অনার্য অধিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি আত্মসাৎ করে। প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের ভাষিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য। কিন্তু স্থানীয় অনার্যভাষীদের ভাষা মরে যায়নি। তাদের সাথে মিশ্রণ, কালের ব্যবধান ও জলবায়ুর প্রভাবে বৈদিক ভাষায় তৈরি হয় স্বতন্ত্র রূপ। যাকে বেদের পণ্ডিতরা মনে করতেন বিকৃতি। ফলত প্রয়োজন পড়ে ভাষা সংস্কারের। বৈদিক ভাষা পবিত্র। স্থানীয় অপবিত্র ভাষাসংশ্লেষ থেকে তাকে রাখতে হবে মুক্ত। বৈদিক আচার্যরা এর নিয়মকানুন নিয়ে ভাবতে থাকেন। রচিত হয় উনাদিসূত্র, ধাতুপাঠ, গণপাঠসহ বিভিন্ন কানুনগ্রন্থ। এক আচার্য ছিলেন বর্ষ। ব্যাকরণ শেখাতেন তিনি।
তার এক প্রসিদ্ধ ছাত্র পাণিনি। যদিও গো সু স্টুকারের মতে, পাণিনি খ্রিষ্টপূর্ব অষ্টম শতকের কিংবা আহমদ শরীফের মতে, খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম শতকের, কিন্তু ম্যাক্সমুলার দেখিয়েছেন, তিনি মূলত খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকের লোক। পাকিস্তানের লাহোর শহরের নিকটে শালাতুর গ্রামে তার জন্ম। তিনি রচনা করেন সংস্কৃত ভাষার মৌলিক রূপের ৩৯৫৯ নিয়মসংবলিত ব্যাকরণগ্রন্থ, অষ্টাধ্যায়ী। নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে, এর অধ্যায় সংখ্যা ৮। প্রতি অধ্যায়ে চারটি পর্ব। পুরো বইয়ে ৩৮৬৩টি সূত্র; যা উপস্থাপন করে বৈদিক ভাষাসংস্কারের পদ্ধতি।
পাণিনির সমালোচক কাত্যায়ন এবং কাত্যায়নের সমালোচক পতঞ্জলী মূলত পাণিনির সংস্কারকেই দেন ব্যাপকতা। সেই সংস্কারের ফসল হিসেবে যে ভাষা টিকে রইল, তার নাম হলো সংস্কৃত। সীমিত সংখ্যক উচ্চবর্গীয় মানুষ এ ভাষার ব্যবহার করতেন। একে বলা হতো দেবভাষা। আর্যরা দাবি করত, এ হচ্ছে দেব ও উপদেবদের ভাষা। এ হচ্ছে ধর্ম শিক্ষার ভাষা, এর রয়েছে ব্যাপক মহিমা। একে গ্রহণ না করার মধ্যে রয়েছে হীনতা ও হেয়তা। কিন্তু এ সংস্কারকে না মেনে বিদ্রোহী নদীর মতো যে ভাষা গণজীবনে বয়ে চলল, সে হলো প্রাকৃত। এ ছিল প্রাকৃতজন তথা সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা। কিন্তু এটি ঠিক নয় যে, এ ভাষায় কথা বলত কেবল নীচ ও অশিক্ষিতরা, যেমনটি দেখানো হয়েছে সংস্কৃত কাব্যনাট্যে। যেমনটি দেখাতে চেয়েছেন খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর ভাষাপণ্ডিত পতঞ্জলী। তার ‘মহাভাষ্যে’ গ্রন্থে প্রাচীন ভারতীয় প্রাকৃত ভাষাকে অপভ্রংশ নামে অভিহিত করেন।
তিনি সংস্কৃত ভাষার বিচারে প্রাকৃতজনের ভাষাকে অধঃপতিত ভাষা হিসেবে দেখাতে এ নাম দেন। তার মতে, অপভ্রংশ হলো, শাস্ত্রহীনের ভাষা, অশিষ্ট লোকের ভাষা।
কিন্তু বিজ্ঞ-শিক্ষিত লোকেরাও প্রকৃত ভাষা ব্যবহার করছিলেন। খ্রিষ্টীয় প্রথম শতক অবধি এ ভাষায় কোনো সাহিত্য না মিললেও রয়েছে প্রচুর শিলালিপি, অশোকের ব্যবহারিক নিদর্শন।
পরবর্তীতে এ ভাষায় রচিত হয় প্রচুর সাহিত্য। যার মধ্যে রয়েছে আনুমানিক প্রথম শতকে রচিত গুণাঢ্যের বড্ডকহা বা বৃহৎকথা, দ্বিতীয় বা তৃতীয় শতকে রচিত হালের গাহাসত্তসঈ বা গাঁথাসপ্তশতী। এ রচনাধারা জারি থেকেছে বহু শতক ধরে। অষ্টম শতকে দেখা যায় বাক্পতিরাজ লিখেছেন গউডবহো বা গৌড়বধ কাব্য। দশম শতকে পুষ্পদ- লিখেন, জসহরচরিউ বা যশোধরচরিত ও নায়কুমারচরিউ বা নাগকুমারচরিত, একাদশ শতকে গুণচন্দ্র গণী লিখেন মহাবীরচরিয় বা মহাবীরচরিত, কোঊহল লিখেন, লীলাবঈকহা বা লীলাবতীকথা, হেমচন্দ্র লিখেন কুমারপালচরিয় বা কুমারপালচরিত প্রভৃতি গ্রন্থ।
ভরতের নাট্যশাস্ত্রম্, কালিদাসের বিক্রমোর্বশীয়ম্, শূদ্রকের মৃচ্ছকটিকম্ প্রভৃতি গ্রন্থে প্রেমবিষয়ক অনেক গীতিকবিতা প্রাকৃতে রচিত হয়েছে। প্রাকৃত ভাষায় গদ্যধর্মী রচনাও রয়েছে। রয়েছে বিজ্ঞান ও দর্শনগ্রন্থ। খ্রিষ্টীয় প্রথম ও দ্বিতীয় শতকে রচিত হয় দর্শনগ্রন্থ প্রবচনসার, নিয়মসার ও পঞ্চাস্তিকায়সার। সিদ্ধান্ত চক্রবর্তীর বিখ্যাত নেমিচন্দ্র দ্রব্যসংগ্রহসহ পাঁচটি দার্শনিক গ্রন্থ প্রাকৃত ভাষায় রচিত। জ্যোতিষবিষয়ক রচনার মধ্যে আছে দিগম্বর জৈনাচার্য দুর্গাদেবের রিষ্ট সমুচ্চয়, অর্ঘকাণ্ড ও মন্ত্রমহোদধির মতো বিখ্যাত গ্রন্থ।
এমনকি রচিত হয়েছে অভিধানগ্রন্থও। যেমন, দশম শতকে রচিত ধনপালের পাইয়লচ্ছী-নামমালা এবং দ্বাদশ শতকে রচিত হেমচন্দ্রের দেশি-নামমালা।
এটি ঠিক নয় যে, প্রাকৃতে কোনো ব্যাকরণ ছিল না। বররুচির প্রাকৃতপ্রকাশ, হেমচন্দ্রের শব্দানুশাসন, ত্রিবিক্রমের প্রাকৃত ব্যাকরণ, মার্কন্ডেয়ের প্রাকৃতসর্বস্ব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
প্রাকৃতভাষার স্থায়িত্ব থেকেছে একাদশ-দ্বাদশ শতক অবধি। কালের ব্যবধানে এ ভাষা ভারতের নানা অঞ্চলে নানা রূপ গ্রহণ করে। একটির সাথে আরেকটির বাড়তে থাকে দূরত্ব। একেক রূপ ধারণ করে একেক নাম। যার মধ্যে আছে মাগধি প্রাকৃত, সৌরসেনী প্রাকৃত, পৈশাচী প্রাকৃত, মহারাষ্ট্রী প্রাকৃত, অর্ধমাগধি প্রভৃতি।
মহারাষ্ট্রী প্রাকৃত গুরুত্বের বিচারে প্রাধান্য দাবি করে। এর আদিনাম ছিল দাক্ষিণাত্যা। এর অন্যতম লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে ব্যঞ্জনবর্ণের লোপ, সংস্কৃত স-স্থানে হ এর ব্যবহার ইত্যাদি। মারাঠী ইত্যাদি ভাষা আসে মহারাষ্ট্রী অপভ্রংশ থেকে।
শৌরসেনীর নামকরণ মথুরার রাজা সুরসেনের নামে। মথুরা ও এর আশপাশে ঘটে এর বিস্তার। সংস্কৃত ত-এর স্থলে দ, থ ও হ-এর স্থলে ধ এর ব্যবহার হয় এ ভাষায়। সংস্কৃত সাহিত্যে কোনো শিক্ষিতের মুখে এ ভাষার ব্যবহার দেখানো হতো না। হিন্দির জন্ম হয় শৌরসেনী অপভ্রংশ থেকে।
অর্ধমাগধির আরেক নাম জৈনপ্রাকৃত। এটি মূলত ছিল জৈনদের ভাষা। জৈনধর্মের গ্রন্থাবলি প্রধানত এ ভাষায় রচিত হয়। যার মধ্যে রয়েছে জৈনদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ আগমশাস্ত্র বা সিদ্ধান্ত (আয়রঙ্গসুত্ত, সূয়কডয়ঙ্গসুত্ত ইত্যাদি), আগমের ব্যাখ্যাগ্রন্থ নিজ্জুত্তি, চুণ্ণী, পউমচরিঅম্ (জৈন রামায়ণ), হরিবংশপুরাণ (জৈন মহাভারত) ইত্যাদি।
এ ভাষায় ব্যঞ্জনবর্ণের লোপ ঘটে, কেবল স এর ব্যবহার আছে, পদান্ত অ-এর জায়গায় এ/ও ব্যবহৃত হয়। উত্তর প্রদেশ, নিম্ন দোয়াব অঞ্চল ও নেপালের তরাই অঞ্চলের অবধি প্রভৃতি ভাষার জন্ম অর্ধমাগধী থেকে। দেবনাগরি লিপি, কাইথি এবং পরবর্তীতে আরবি-ফারসি লিপিতে এর লেখন পদ্ধতি জারি থেকেছে।
পৈশাচীকে বলা হতো পিশাচদের ভাষা। ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অধিবাসীদের পিশাচ আখ্যা দিয়েছিল আর্য আধিপতিরা। এখানকার অধিবাসীদের মুখে যে প্রাকৃত বিকাশ লাভ করল, সে পেয়ে গেল পৈশাচিক নাম। এ ভাষায় পদান্তে ম-স্থলে থাকে ং, যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি শব্দের আদিতে ছাড়া অন্যত্র যুগ্মধ্বনিতে পরিণত হয়, শব্দরূপ ও ধাতুরূপে দ্বিবচন বিলুপ্ত হয়। এতে ণ- এর ব্যবহার নেই, আছে ন। গ-এর বদলে আছে ক, ঘ- এর বদলে আছে খ, জ-এর বদলে আছে চ ইত্যাদি। পৈশাচী অপভ্রংশ থেকে পাঞ্জাবি প্রভৃতি ভাষা জন্ম নেয়।
পূর্বভারতীয় বিহারের মগধ অঞ্চলে প্রচলিত হয় মাগধি। কালিদাসের অভিজ্ঞানশকুন্তলম-এর মতো গ্রন্থ মাগধির আদি নিদর্শন ধারণ করে। এ ভাষায় ব্যঞ্জনবর্ণ লোপ পেয়ে যায়। এতে রয়েছে কেবল শ-র ব্যবহার, র এর উচ্চারণ এতে ল দিয়ে, জ এর জায়গায় য, ত-এর জায়গায় দ/ড, ইত্যাদি ছিল এ ভাষার লক্ষণ। মাগধি ভাষার রয়েছে নানা ভাগ। প্রধান এক ভাগ হচ্ছে পূর্বাঞ্চলীয় মাগধি, আরেক ভাগ পশ্চিমাঞ্চলীয় মাগধি।
মাগধি প্রাকৃতের পূর্বাঞ্চলীয় অপভ্রংশ থেকে জন্ম নিয়েছিল ভোজপুরি, মগহি ও মৈথিলি এ তিন বিহারি ভাষা এবং বাংলা, অসমীয়া ও উড়িয়া এ তিন গৌড়ীয় ভাষা।
ড. পরেশচন্দ্র মজুমদার সংশয় প্রকাশ করেছেন মাগধি অপভ্রংশের অস্তিত্ব নিয়ে। তার মতে, আদর্শ কথ্য প্রাকৃত থেকে বাংলা ভাষার জন্ম। কিন্তু মাগধি প্রাকৃতের অস্তিত্ব অস্বীকার একটি বাস্তবতারই অস্বীকার। অন্য দিকে আদর্শ কথ্য প্রাকৃত একটি অনুমান, এর কোনো লিখিত নমুনা নেই।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে : ‘গৌড়ীয় প্রাকৃত হতেই গৌড়ীয় অপভ্রংশের মাধ্যমে বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে।’ তিনি দেখান, গৌড় অপভ্রংশ থেকে প্রথমে মৈথিলি ভাষা জন্ম নেয় এবং পৃথক হয়ে যায়। এরপরে জন্ম নেয় উড়িয়া, এরপর বঙ্গকামরূপী ভাষা। এই বঙ্গ-কামরূপী দ্বিধাবিভক্ত হয়ে বাংলা ও অসমিয়ায় পরিণত হয়। তিনি তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বের সাহায্যে গৌড় অপভ্রংশের রূপ কল্পনা করেছেন এভাবে, অমহেহি রেট্টিয়া খাইঅব্বী (আমি রুটি খাইব), রহিআ কঁহি গইল্লি (রাই কোথায় গেল?), গচ্ছকের ফল গচ্ছহু মট্টিআএ পড়ই (গাছের ফল গাছ থেকে মাটিতে পড়ে)। দণ্ডীর উল্লেখে গৌড় অপভ্রংশ রয়েছে। শহীদুল্লাহর মতে, এর পূর্বŸর্তী ভাষা গৌড় প্রাকৃত। কিন্তু তিনি স্বীকার করেন, গৌড় প্রাকৃতের কোনো নিদর্শন পাওয়া যায় না। তবে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বের সাহায্যে এর পুনর্গঠন সম্ভব।
জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ার্সন, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ ভাষাবিজ্ঞানীর গবেষণাপ্রসূত সিদ্ধান্ত হচ্ছে বাংলা ভাষার জন্ম মাগধি অপভ্রংশ থেকেই। সুনীতি দেখান, ‘মাগধি প্রাকৃত থেকেই বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে’ এবং ‘মাগধি প্রাকৃতের পূর্বতর রূপ হচ্ছে গৌড় প্রাকৃত।’
সংস্কৃত ভাষার নানা সংলাপে একেবারে নিম্নশ্রেণীর মানুষের মুখে জুড়ে দেয়া হতো মাগধি প্রাকৃত সংলাপ। এর প্রতি তাদের তাচ্ছিল্যবোধ প্রবল ছিল, বোঝাই যায়। কিন্তু কালিদাস গৌরবিনী রাজকন্যাকে ‘মাগধি’ সম্বোধন করেছেন।
বস্তুত সংস্কৃতের প্রভুত্বের বিরুদ্ধে অব্যাহত বিদ্রোহের ফসল হচ্ছে বাংলা ভাষা। যার উৎস বহিরাগত ভাষিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রাকৃত ভূমিপুত্রদের আপন লড়াই।