হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আমির ও বর্তমান আহ্বায়ক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সহিংসতার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও তাণ্ডবের জেরে, গত বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) হাটহাজারী থানায় মামলা দুটি হলেও আজ সোমবার জানা গেছে।
গত ২৬ মার্চের ঘটনায় প্রায় একমাস পরে কেন মামলা করা হয়েছে, জানতে চাইলে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম আজ সোমবার দুপুরে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, জড়িত আসামিদের শনাক্ত, নাম-ঠিকানা যাচাই করতে সময় লেগেছে। নিরীহ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন, তাই যাচাই করে প্রকৃত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। এখানে অন্য কিছু ছিল না।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মামলায় জুনায়েদ বাবুনগরীসহ ১৪৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় তিন হাজার জনকে আসামি করা হয়।
ঐ দুইটি মামলার মধ্যে একটি মামলার বাদী চট্টগ্রাম পুলিশের জেলা বিশেষ শাখার (ডিএসবি) কনস্টেবল মো. সোলায়মান। ওই মামলায় জুনায়েদ বাবুনগরী, হেফাজত নেতা মীর ইদ্রিস, নাছির উদ্দিন, জাকারিয়া নোমান, আহসান উল্লাহসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ১৫০ থেকে ২০০ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি রয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২৬ মার্চ দায়িত্ব পালনকালে হাটহাজারী জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর সামনে থেকে সোলায়মানকে ধরে নিয়ে মাদ্রাসায় আটকে রেখে তাকে সেখানে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
হাটহাজারী থানার পরিদর্শক আমির হোসেন বাদী হয়ে করা অপর মামলায় জুনায়েদ বাবুনগরী, হেফাজত নেতা জাকারিয়া নোমানসহ উপজেলা জামায়াতের আমিরসহ ৭৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকেআসামি করা হয়েছে।
এ মামলার এজাহারে বলা হয়, হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে আসামিরা ২৬ থেকে ২৮ মার্চ রাস্তায় দেয়াল নির্মাণ, থানা ও ভূমি অফিসে হামলা, অগ্নিসংযোগসহ পুলিশের ওপর হামলা করেন। এছাড়াও হাটহাজারী সদর, ইছাপুর বাজারে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও রাস্তায় দেয়াল দিয়ে আসামিরা অস্থিরতা সৃষ্টি করে।
হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব নাছির উদ্দিন বলেন, ‘কিছু বলার নেই। যা করার আইনগতভাবে মোকাবিলা করা হবে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দিনে, জুমার নামাজের পর ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। প্রতিবাদে হাটহাজারীতে মাদ্রাসাশিক্ষার্থীরা থানায় হামলা চালালে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোড়ে। পরে চারজন নিহত হন। চারজন নিহত হওয়ার জেরে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা হাটহাজারী ও পটিয়া থানা ভবন, হাটহাজারী ডাকবাংলো, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সদর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে হামলা চালান। সরকারি হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৯২ লাখ টাকা। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় হাটহাজারী থানায় সাতটি, পটিয়া থানায় একটিসহ আটটি মামলা হয় ঘটনার চার দিন পর। আর এসব ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় ৪ হাজার ৩০০ জনকে। সন্ত্রাসবিরোধী ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাগুলো হয়।