শাহজাদপুরের তাঁতিরা সারা বছর তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় থাকতে হয় পহেলা বৈশাখ আর ঈদুল ফিতরের বাজার ধরার জন্য। কারণ এই দুই সময়ে হাটে তাঁতিরা দাম ভাল পান ও বিক্রিও সারা বছরের তুলনায় ভাল হয়। এসময় তাঁতিরা ভালো দামে শাড়ি লুঙ্গি বিক্রি করতে পারেন। এ দুই মৌসুম হলো তাঁতিদের অর্থনৈতিক ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর উত্তম সময়। তাই বাংলার নববর্ষ বৈশাখ ও ঈদুল ফিতরের ঘিরে দেড় থেকে দুইমাস আগে থেকেই তাঁতিদের চোখে ঘুম থাকেনা ব্যস্ততার কারণে। কিন্তু ২০২০ সালের মতো এ বছরেও অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্যয়ে পড়ার শঙ্কা করছেন শাহজাদপুরের তাঁতিরা।
করোনারভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সারা দেশে লকডাউন থাকায় হাটে বিক্রির জন্য কাপড় আনতে পারছেন না তারা। হাট বন্ধ থাকায় আগের তৈরী শাড়ি ও লুঙ্গী জমা হয়ে আছে। পূঁজির স্বল্পতার কারণে ছোট তাঁতিদের তাঁতও বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তাই নতুন করে আর শাড়ি ও লুঙ্গী তৈরী করছে না তাঁরা। তাঁতিরা জানান বাংলা পহেলা বৈশাখকে ঘিরে এখানকার তাঁতিরা বৈচিত্রময় বড়দের শাড়ির পাশাপাশি ছোটদের শাড়ি বুনন করে থাকেন। আর তাদের কাছে সব চেয়ে বড় বাজার অপেক্ষা করে ইদুল ফিতরের সময়। বৈশাখে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ভারতে শাড়ি রপ্তানী হয়ে থাকলেও পর পর দুই বছর করোনার কারনে অভ্যন্তরিন বাজারের সাথে ভারতের বাজারও হারাতে হয়েছে তাদের। তাঁতিরা আরো জানান ঈদুল ফিতরের আগের দুই থেকে তিন মাস তাঁতিদের কাছে কাঙ্ক্ষিত সময়। সারা বছর ধরে তারা এ সময়ের জন্য অপেক্ষা করেন। মৌসুমের এ সময় যে আয় হয় তা দিয়ে মহাজন ও ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করেন। গত বছরের মতো এবারের বছরও সব চেয়ে মূল্যবান সময় কর্মহীন অবস্থায় তাঁতিদের কাটাতে হচ্ছে। শাহজাদপুরই শুধু নয়, পাশের উল্লাপাড়া ও বেলকুচি উপজেলার ক্ষুদ্র ও মাঝারি তাঁতিদের একই পরিনতিতে পরতে হয়েছে। খবর নিয়ে জানা যায় শাহজাদপুরেই এক সময় ৪০ হাজারেরও বেশী হস্তচালিত তাঁত থাকলেও তা এখন কমতে কমতে ৪ থেকে ৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে। সপ্তাহের শনি রবি ও বুধবার কাপরের হাট শাহজাদপুরে।
গতকাল রবিবার লকডাউন শিথিল হওয়ায় এদিন এই হাট ঘুরে হতাশার ছবি দেখতে পাওয়া গেছে। হাটে প্রচুর শাড়ি লুঙ্গী উঠলেও ক্রেতার দেখা নেই। এদিন হাটে আগত শাহজাদপুর উপজেলার হাবিবুল্লাহ নগর ইউনিয়নের পুঠিয়া গ্রামের চাঁদ মিয়া একই উপজেলার গাড়াদহ গ্রামের শফিকুল ইসলাম উল্লাপাড়া উপজেলার নেওয়ার গাছা গ্রামের সেরাজুল ইসলাম একই উপজেলার মহেষপুর গ্রামের বাবলু মিয়া ও হাসান জানান তাদের অনেকেরই ১৫ থেকে ২০ খানা তাঁত ছিলো। এখন কমতে কমতে কারো ২খানা কারো আবার ৫ খানায় ঠেকেছে।
তাঁত শিল্পীরা জানান, আমাদের উৎপাদিত শাড়ি ও লুঙ্গী সরাসরি শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে থাকি। এরা আবার আমাদের কাছ থেকে কিনে পাবনার আতাইকুলা সিরাজগঞ্জের সোহাগপুর ও নারায়নগঞ্জের ভুলতা হাটে বিক্রি করে।
সম্প্রতি সরেজমিন শাহজাদপুরের তাঁতসমৃদ্ধ খুকনী, জালালপুর, পোরজনা, কৈজুরী বেলতৈল, গ্রাম গুলো সুনসান পরিবেশ লক্ষ করা যায়। এসময় একাধিক শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা যায় তাঁত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের পেশা পরিবর্তন করেও সংসার চালাতে পারছেন না। শাহজাদপুর পৌর এলাকার তাঁত শ্রমিক স্বপনের (৩০) সাথে কথা বলে জানা যায় অনেক মহাজন তাঁত বন্ধ করে বসে আছেন।
তাঁত শ্রমিক স্বপন জানান যারা কাজ হারিয়েছেন তাদেরকে ভাগ্যে সরকারি সাহায্যও জোটে নাই ।