স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ও তাণ্ডবের পর হেফাজতের সমর্থনে ইস্যুতে এক যুবকের হাত কেটে আনার বিনিময়ে দুই লাখ টাকা পুরষ্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকার এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬৭ নম্বর ওয়ার্ড ডেমরা এলাকার কাউন্সিলর মো. ইবরাহীম। তিনি চরমোনাই পীরের বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের ডেমরা থানা সহ-সভাপতি। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার এই ঘোষণায় বিস্মিত হয়েছেন অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একজন কাউন্সিলরের ফেসবুকে দেওয়া এই ঘোষণা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
যোগাযোগ করা হলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইবরাহীমের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে ফেসবুক মেসেঞ্জার কলে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি ফেসবুকের পোস্ট দেওয়ার কথা স্বীকার করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, একটি অন্যায়ের প্রতিবাদে তিনি এই পোস্ট দিয়েছি। ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইবরাহীম বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন নেই। এজন্যই আমি এই পোস্ট দিয়েছি। এজন্য আমার কিছু ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে তবু আমি মনে করি আগের অন্যায়টি না হলে পরের অন্যায় করার ঘোষণাটি আসতো না- খবর বাংলা ট্রিবিউন
একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে সাধারণ মানুষকে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন কি না জানতে চাইলে ইবরাহীম বলেন, ‘বিষয়টি আমার ভুল হয়েছে। জনপ্রতিনিধি হয়ে আমি একাজ করতে পারি না। কিন্তু আমার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে বলে আমি এটি দিয়েছি।’
বাংলা ট্রিবিউনের সংবাদ মাধ্যমে জানা গেছে, গত ২৭ মার্চ ফেসবুকে এই পোস্ট দেওয়ার পর সেখানে অনেকেই এসে এর পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্য করতে থাকেন। অনেকেই ছবির ওই তরুণকে পল্টন থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য বলে মন্তব্য করেন। কেউ কেউ তাকে কদমতলী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি বলেও মন্তব্য করেন। এছাড়া মন্তব্যকারীদের অনেকেই সেই তরুণের পরিচয় প্রকাশ করে তার জিহ্বা কেটে আনার হুমকি দেন। আরেকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী তার হাত কেটে আনার বিনিময়ে ২০ হাজার টাকা পুরষ্কার দেওয়ার ঘোষণা করেন।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মো. ইবরাহীমের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের আইডি ঘেঁটে রাষ্ট্রবিরোধী অনেক বক্তব্যও পাওয়া গেছে। সর্বশেষ রবিবার (২৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তিনি বর্তমান রাজনীতি নিয়ে একটি পোস্ট দেন। সেখানেও তিনি ‘মানব রচিত মনগড়া এই জাহেলি সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে আল্লাহ প্রদত্ত (ইসলামিক শরীয়ত মোতাবেক রাষ্ট্রব্যবস্থা) রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পরিবর্তন’ আনার কথা বলেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলছেন, বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। তারা কাউন্সিলর হাজী মো. ইবরাহীমকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছেন। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে তিনি প্রকাশ্যে কারও হাত কেটে আনার জন্য পুরষ্কার ঘোষণা করতে পারেন না। তার এই ঘোষণার কারণে ছবিতে থাকা যুবকের ওপর যদি সত্যিই কেউ হামলা চালায় তবে এই দায় কাউন্সিলর ইবরাহীমকেই নিতে হবে। আমরা তাকে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।