ইউক্রেনে সম্পূর্ণ নতুন মাত্রার যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া। দেশটি সতর্ক করে বলেছে, সামরিক জোট ন্যাটো যদি ইউক্রেনে যুদ্ধ ট্যাংক এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মতো ভারী অস্ত্র দেয় তাহলে চলমান যুদ্ধ ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক ভাবে’ বৃদ্ধি পাবে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে এই হুঁশিয়ারি দেয় ক্রেমলিন। শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড দখলে রাশিয়ার আক্রমণ জোরদার হওয়ায় ইউক্রেনের প্রধান দাতা ও মিত্র দেশগুলো কিয়েভকে আরও শক্তিশালী সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর কথা বিবেচনার মধ্যেই বৃহস্পতিবার ক্রেমলিনের হুঁশিয়ারিমূলক এই বিবৃতিটি সামনে এলো।
অবশ্য অন্য দেশগুলোর মধ্যে বিশেষ করে জার্মানি কিয়েভকে ট্যাংক সরবরাহ করার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের সম্মুখীন হয়েছে এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পশ্চিমাদের কাছ থেকে যথেষ্ট ভারী অস্ত্র না পাওয়ার বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
মূলত যুক্তরাজ্য গত সপ্তাহে ইউক্রেনে চ্যালেঞ্জার ২ ট্যাংক পাঠানোর কথা ঘোষণা করায় বার্লিন তার লিওপার্ড ২ ট্যাংক সরবরাহ করার জন্য বা অন্তত পোল্যান্ডের মতো অন্য দেশগুলো তাদের নিজস্ব স্টক থেকে জার্মান তৈরি সরঞ্জাম সরবরাহ করার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের সম্মুখীন হয়েছে।
অন্যদিকে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী এবং রুশ ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম ভারী অস্ত্র ইউক্রেনকে না দিতে পশ্চিমা দেশগুলোকে বরাবরই চাপ দিয়ে আসছে ক্রেমলিন।
বৃহস্পতিবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সম্ভবত, এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। এর অর্থ হলো- সংঘাতকে সম্পূর্ণ নতুন স্তরে নিয়ে যাওয়া যা অবশ্যই বৈশ্বিক এবং সমগ্র-ইউরোপীয় নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে ভালো হবে না।’
এদিকে শুক্রবার ইউক্রেনকে সামরিকভাবে সহায়তা করার বিষয়ে একটি নতুন দফা আলোচনার জন্য জার্মানির রামস্টেইনের বিমানঘাঁটিতে মিত্রদের জড়ো করছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিরক্ষা প্রধান লয়েড অস্টিন এই সমন্বয় বৈঠকের আয়োজন করছেন।
তিনি বলছেন, ‘দীর্ঘ পথ চলার জন্য ইউক্রেনের আত্মরক্ষার কাজকে সহায়তা করতে আমরা আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিশ্রুতি পুনর্নবীকরণ করব’। তবে নির্দিষ্ট নতুন কোনও সরঞ্জামের উল্লেখ তিনি করেননি।
কিয়েভের পশ্চিমা অংশীদারদের আশঙ্কা, ইউক্রেন রাশিয়ার ভূখণ্ড বা ক্রিমিয়ার অভ্যন্তরে হামলার জন্য দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। যদিও কিয়েভ সেই ধরনের কোনও হামলা করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে মস্কোর রাষ্ট্রদূত আনাতোলি আন্তোনভ বলেছেন, ইউক্রেন রাশিয়া বা ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালাতে পশ্চিমা সরবরাহকৃত অস্ত্র ব্যবহার করলে রাশিয়া প্রতিশোধ নেবে।
তিনি বলেন, ‘এটা সবার কাছে সুস্পষ্ট হওয়া উচিত: জেলেনস্কি সরকারকে আমেরিকান বা ন্যাটো যে অস্ত্রই সরবরাহ করুক না কেন, আমরা তা ধ্বংস করব। রাশিয়াকে পরাজিত করা অসম্ভব।’
ইউক্রেনের বিষয়ে মার্কিন বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্য ‘আরও বেশি যুদ্ধভাবাপন্ন’ হয়ে উঠছে বলেও দাবি করেন তিনি।
আন্তোনভ আরও বলেন, একদিকে ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের অংশ বলে উল্লেখ করা এবং অন্যদিকে কিয়েভ তার ভূখণ্ড রক্ষার জন্য মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে বলে উল্লেখ করে ওয়াশিংটন ‘মূলত রাশিয়ায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে ইউক্রেনীয় সরকারকে চাপ দিচ্ছে’।
পৃথকভাবে সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ সতর্ক করেছেন, ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমাদের অব্যাহত সহায়তা চলমান যুদ্ধকে পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
মেদভেদেভ টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে লিখেছেন, ‘প্রচলিত যুদ্ধে পরমাণু শক্তিধর দেশের পরাজয় পারমাণবিক যুদ্ধকে উস্কে দিতে পারে। পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো বড় সংঘাতে হারেনি কারণ এর ওপরই তাদের ভাগ্য নির্ভর করে।’
মেদভেদেভের এই মন্তব্যকে রাশিয়ার পারমাণবিক মতবাদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।