এ-পথে হাঁটতো আমার পিতামহ পিতামহি
হাঁটতো তাদের সময়ের আরো কত কতজন!
হাঁটতো আমার পিতা, কাকা, কাকি
তাদের সময়ের আরো কত কতজন!
তাদের কতজনেরই আজ পদচারণা থেমে গেছে চিরদিনের জন্য!
পৃথিবীর পথে তাদের চরণ আর পড়ে না, পড়বে না কোনোদিন।
এ-পথে প’ড়ে আছে তাদের কতজনের পদচিহ্ন!
আরো কতজনের পায়ের দাগ কালের ধুলোয় চাপা প’ড়ে গেছে।
কুড়িটি বছর আমি হেঁটেছি এ-পথ বেয়ে
এই এঁটেলমাটির কাদা আর ধুলি-ওড়া পথে আমি
জীবনের কুড়িটি বছর হেঁটেছি দিনে রাতে দুপুরে সন্ধ্যায়
শাওনে ভাদরে শরতে হেমন্তে।
আমার সেইসব পদচিহ্ন কি আছে আজও এই পথের বুকে?
নাকি কালের ধুলোর নিচে চাপা প’ড়ে গেছে?
চৈত্রের খাঁ-খাঁ রোদের সময়
এই তেঁতুলগাছের চিরল-চিরল পাতার শীতল ছায়ার নিচে
আমার পিতা ব’সে থাকতো মাদুর পেতে,
উদাস চোখে তাকিয়ে থাকতো, দেখতো অদূরে
তার পালিত গরু-ছাগলদের ঘাস খাওয়া।
আর কথা কইতো তার সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া সব পথচারীদের সঙ্গে,
কখনো বা দখিনা বাতাসের পরশে ঘুমিয়ে পড়তো মাদুরে শুয়ে।
পিতার নিঃশ্বাস আর তেঁতুলপাতার নিঃশ্বাস একাকার হয়ে
ঝিরঝির শব্দ করতো।
আজ পিতা ঘুমোচ্ছে ঘাসের নিচে।
পিতার নিঃশ্বাস কি এখনো জড়িয়ে আছে পাতাদের নিঃশ্বাসের সাথে?
এই আমগাছ আর তেঁতুলগাছেদের ডালে-ডালে আমার ছোট্টবেলার সাথীরা
কাঠবিড়ালির মতো লাফিয়ে লাফিয়ে ফুল চিকুটি খেলতো।
আর পাখির মতো চিবিয়ে খেতো দাঁত-পড়া কঠিন টক কাঁচা আম, তেঁতুল।
আমার খেলাধুলা বারণ ছিল
তবুও চুরি ক’রে দেখতে যেতাম ওদের খেলা আর আম-তেঁতুল খাওয়া।
গাছেও তেমন চড়তে পারতাম না।
তেঁতুলগাছের নিচে দাঁড়িয়ে
কচি-কচি পাতা চিবুতাম আর ওদের খেলা দেখতাম।
আমার ছোট্টবেলার সব সাথীরা,
তোমরা কি আজও গাছের ডালে-ডালে ফুল চিকুটি খেলো?
আজও কি তোমরা কাঁচা কঠিন টক আম তেঁতুল পাখির মতো চিবিয়ে খাও?
নাকি তোমরা সবাই আজ অনেক বড় হয়ে গেছ?
এইসকল গাছের গায়ে কি আমার হাতের ছোঁয়া লেগে আছে আজও?
নাকি মুছে গেছে বৃষ্টির জলে অথবা সময়ের তলে?
✍️এই নিবন্ধটি সাময়িকীর সুন্দর এবং সহজ জমা ফর্ম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। আপনার লেখা জমাদিন!