চাঁদের ফাঁদে তারাবিহ, রোজা, ফেতরা ও ঈদ। রোজাদাররাও চাঁদের চাঁদনী খেলায় দিকভ্রান্ত; দলে-উপদলে বিভক্ত। আর মধুচন্দ্রিমা উদযাপনে ব্যতিব্যস্ত। “চাঁদ দেখে রোজা ও ঈদ” করার গোলকধাঁধায় পড়ে তারা কানামাছি ভোঁ ভোঁ খেলছে। যারফলে; কিছু লোক তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনোদনের নতুন মাত্রা যোগ করলেও অধিকাংশ মানুষ হয় দুর্ভোগের শিকার। এই প্রবন্ধটি ছয় পর্বে শেষ করা হয়েছে। এই পর্বে রোজা ও সিয়ামের আলোচনা করা হয়েছে। এটি তৃতীয় পর্ব।
এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় যে; রোজা ও সিয়াম এক নয়। কারণ; ফার্সি রোজা দ্বারা পরিত্রাণ উপোস বুঝায়। কিন্তু আরবি সিয়াম দ্বারা প্রাকৃতিক উপোস বুঝায়।
ইসলামী সংস্কার রোজা
((الإصلاح الإسلامي الصوم (ﺮﻮﺯﻩ)
(Islamic reformation Fasting (Roza))
ভূমিকা (Prolegomenon)
রোজা (ﺮﻮﺯﻩ) ফার্সি পরিভাষা। এটি ইসলামী সাম্প্রদায়িক মতবাদে বর্ণিত উপাসনামূলক একটি অনন্য পরিভাষা। রোজা (ﺮﻮﺯﻩ) পরিভাষাকে কেন্দ্র করে পারসিক বিশিষ্ট রূপকারগণ অগণিত চমৎকার/ Miracles/ (معجزات) (মু’জিযা) নির্মাণ করেছেন। সুমহান রূপকার মনীষীগণের নির্মিত অনন্য চমৎকারগুলো একত্র করেই সম্পাদিত হয়েছে বিশ্ববিখ্যাত অসংখ্য মহাগ্রন্থ। আলোচ্য চমৎকারটি মুসলমানদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাম্প্রদায়িক সংস্কারও বটে। এটা পারসিক রূপকারগণের বিশ্ববিখ্যাত, বিশ্ববিরল, অনন্য ও অনুপম সাম্প্রদায়িক সংস্কার। সাম্প্রদায়িক সত্তাগুলো ও সংস্কারগুলোর সাম্প্রদায়িক উপাসনা অনুষ্ঠান ও অলৌকিককাহিনী জানার পর; উক্ত পরিভাষাগুলোর প্রকৃত তথ্য, তত্ত্ব ও প্রকৃত তাৎপর্য জানাও প্রয়োজন। এজন্য; আলোচ্য পরিভাষাটির প্রকৃত সত্তা, প্রকৃত অর্থ ও পৌরাণিক পরিভাষার মূলক সত্তা উদ্ঘাটনের জন্য, নিচে কয়েকটি অভিধান অবিকল তুলে ধরা হলো। অতঃপর; সম্যক পর্যালোচনা শেষে সঠিক সমাধান প্রদানের চেষ্টা করা হলো।
রোজা (ﺮﻮﺯﻩ) পরিভাষাটির অনুবাদসমূহ
(Translations of fasting terminology)
১. আরবি ফার্সি তুর্কি হিন্দি উর্দু শব্দের অভিধান (বাংলা একাডেমি)।[২]
অত্র অভিধানে রোজা পরিভাষাটি সংকলন করাই হয় নি।
২. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (বাংলা একাডেমি)।[৬]
রোজা বি ইসলামী সাম্প্রদায়িক বিধি অনুসারে উপবাস, ঊষাকালের সামান্য পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সর্বপ্রকার আহার ও যৌনমিলন থেকে সম্পূর্ণ বিরতি {ফা.ﺮﻮﺯﻩ}
৩. ফরহঙ্গ.ই.রব্বানী (উর্দূ-বাংলা-অভিধান)।[৭]
ﺮﻮﺯﻩ (রোযা) ফাঃ নাঃ পুং; রোজা, উপবাস।
৪. উর্দু-বাংলা অভিধান (ফ’রহাঙ্গ-কাসেমী)।[৮]
ﺮﻮﺯﻩ (রোযা) ফাঃ নাঃ পুং; রোজা, সাওম, রোজার দিন, উপবাস।
বিভিন্ন অভিধান হতে প্রাপ্ত পরিভাষা
(Translations of Arabic standing terminology)
“রোজা, উপবাস, ইসলামী সাম্প্রদায়িক বিধি অনুসারে উপবাস, ঊষাকালের সামান্য পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সর্বপ্রকার আহার ও যৌনমিলন থেকে সম্পূর্ণ বিরতি।”
পর্যালোচনা (Reviews)
উপরোক্ত পরিভাষাগুলোর মধ্যে একটিও ফার্সি রোজা (ﺮﻮﺯﻩ) পরিভাষার বাংলা অনুবাদ নয়। প্রথমত; ‘রোজা’ রোজা (ﺮﻮﺯﻩ) পরিভাষার বঙ্গানুবাদ নয়। দ্বিতীয়ত; ‘উপবাস’ রোজা (ﺮﻮﺯﻩ) পরিভাষার একটি ‘বাঙালী পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’। তৃতীয়ত; ‘ইসলামী সাম্প্রদায়িক বিধি অনুসারে উপবাস, ঊষাকালের সামান্য পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সর্বপ্রকার আহার ও যৌনমিলন থেকে সম্পূর্ণ বিরতি’ এ অংশটি রোজার (ﺮﻮﺯﻩ) সাম্প্রদায়িক ব্যাখ্যা। তাই; এটিও ফার্সি রোজা (ﺮﻮﺯﻩ) বাংলা অনুবাদ নয়।
সমাধান (Solution)
রোজা ﺭﻭﺯﻩবি ১. কর্ম, বৃত্তি, উপায়, পন্থা, আয়ের মাধ্যম, অর্থ উপার্জনের পথ ২. ভাগ্য, নিয়তি, কপাল, ভাল, কপালের লেখন, দৈনিক আয়, প্রত্যাহিক উপার্জন, দৈনিক বেতন, প্রতিদিনের পারিশ্রমিক (বাসং) উপোস, উপবাস, অনশন, অনাহার, fasting (ব্য্য) ১. মরমীবাদে; মৈথুনে যোনিতে শুক্রপাত না করাকেই রূপকার্থে অনশন বা উপোস বলা হয়। পুরো পবিত্রতার ২৭ দিন শুক্রপাতহীন মৈথুন করার পর মানবদেহ হতে অমৃতসুধা আহরণ করা ২. ঋতুমতীদের রজস্রাব চলাকালীন তিন দিন মৈথুন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ তিন দিনই মৈথুন হতে আন্তর্জাতিক অবকাশ বা বিরতি (প্র) ১. বাঙালী সংস্কার অনুসারে; এক সন্ধ্যা হতে অন্য সন্ধ্যার পর; যে দেবতার জন্য উপোস রাখা হয়েছে; সে দেবতার পূজা শেষ হওয়ার পর পর্যন্ত উপোস পালন ২. ইসলামী সংস্কার অনুসারে; প্রভাত হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপবাস পালন করা ৩. আত্মজ্ঞানী ও মরমী মনীষীদের মতে; ঊষা হতে অর্যমা পর্যন্ত মৈথুনে যোনিতে শুক্র নিক্ষেপ না করা (শ্ববি) ঊর্ধ্বরেতা, ডুবুরী, নিষ্কামী, পারমী, ‘ﺜﺎﺑﺖ’ (সাবিত) (ইংপ) semener, spermer, spirited, strong, steadfast, consistent, resolute (ইপ) সিয়াম (ﺼﻴﺎﻢ) (ইদে) আলি (আ.ﻋﻠﻰ), গাজি (আ.ﻏﺎﺯﯼ), হাজি (আ.ﺤﺎﺠﻰ), পালোয়ান (ফা.ﭙﻬﻟﻭﺍﻦ) বি বিলায়েত (ﻮﻻﻴﺖ), মর্দামি (ফা.ﻤﺭﺪﻤﻰ), মুরোত (আ.ﻤﺮﻮﺖ) (দেপ্র) এটি ‘পারসিক পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’র ‘শুক্রধর’ পরিবারের একটি ‘পারসিক পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’ বিশেষ (সংজ্ঞা) ১. সাধারণত; ইসলামী সংস্কার অনুসারে; ঊষা হতে অর্যমা পর্যন্ত উপবাসকে রোজা (ﺭﻭﺯﻩ) বলা হয় ২. মরমীবাদে; ঊষা হতে অর্যমা পর্যন্ত মৈথুনে কোনক্রমেই যোনিতে শুক্রপাত না করাকে রূপকার্থে বাংলায় ‘উপোস’ ও ফার্সিতে রোজা (ﺭﻭﺯﻩ) বলা হয় (বাপৌছ) নির্বাণ, মরা১ ও স্তম্ভন (বাপৌচা) ঋভু, ওজম্বল ও সম্রাট (বাপৌউ) ঊর্ধ্বরেতা, ডুবুরী ও স্বাধীন (বাপৌরূ) অটল (বাপৌমূ) শুক্রধর {ফা.রাউঝ.ﺮﻮﺯ>}
রোজা গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি
(Some highly important quotations of fasting)
১. “আগে শরিয়ত জেনে যাও হাক্বিক্বতের ঘরে, রোজা আর নামাজ শরিয়তের কাজ, আসল শরিয়ত বলছ কারে।” (পবিত্র লালন- ৭৮/১)।[৭৭]
২. “ত্বরিক্ব দিচ্ছে নবী জাহির বাতিনে, যথাযোগ্য লায়েক্ব চেনে, রোজা আর নামাজ- ব্যক্ত এ কাজ, গুপ্তপথ মিলে ভক্তির সন্ধানে।” (পবিত্র লালন- ১৬০/২)।[৭৭]
৩. “না করলে নামাজ রোজা, হাশরে হয় ভীষণ সাজা, চল্লিশ বছর নামাজ ক্বাজা, করেছেন রাসুল দয়াময়।” (পবিত্র লালন- ৮০৯/৩)।[৭৭]
৪. “নামাজ রোজা কালিমা যাকাত, তা করলে হয় শরিয়ত, শরা ক্ববুল করে, ভাবে বুঝা যায়- কালিমা শরিয়ত নয়, কালিমার পরমার্থ থাকতে পারে।” (পবিত্র লালন- ৭৮/২)।[৭৭]
৫. “বলো কোন নামাজে, খোদার দিদার হয়, নামাজ পড় রোজা করো, কেবলি দোজখের ভয়।” (পবিত্র লালন- ৬৮০/১)।[৭৭]
৬. “বিসমিল্লার দম্ভ ভারী, নামাজ রোজা তার সিঁড়ি, খায় রাত্রিদিনে পাঁচ আড়ি, ছিঁড়ল দড়া আচম্বিতে।” (পবিত্র লালন- ১৩১/৩)।[৭৭]
৭. “রোজা করো নামাজ পড়, নূর নবীজির ত্বরিক্ব ধর, নবীর ত্বরিক্ব যদি ছাড়, ঠেকবিরে রোজ হাশরেতে।” (পবিত্র লালন- ১৮৬/২)।[৭৭]
৮. “রোজা নামাজ কালিমা যাকাত, তা করলে হয় শরিয়ত, শরা ক্ববুল করে, ভাবে বুঝা যায়- কালিমা শরিয়ত নয়, শরিয়তের পরমার্থ থাকতে পারে।” (পবিত্র লালন- ৮৮২/২)।[৭৭]
৯. “রোজা নামাজ বেহেস্তের ভজন, তাই করে কী পাবে সেধন, বিনয় করে বলছে লালন, থাকতে পারে ভেদ গুরুর ঠাঁই।” (পবিত্র লালন- ১৮৭/৪)।[৭৭]
১০. “রোজা পূজা করলে সবে, আপ্তসুখের কার্য হবে, সাঁইয়ের করণ সহি পড়বে, ভাবে তাই।” (পবিত্র লালন- ৮৯১/২)।[৭৭]
১১. “রোজা পূজা জাতির আচার, মন যদি চাস কররে এবার, বিজাতির কাজ বেদান্তর, মায়াবাদীর কার্য নয়।” (পবিত্র লালন- ৩৫৭/৩)।[৭৭]
১২. “রোজা রাখো নামাজ পড়ো, কালিমা হজ যাকাত করো, তবে কী হবি পার, পাবি কী বেহেস্তখানা।” (পবিত্র লালন- ৮৭৭/৩)।[৭৭]
১৩. “শরিয়ত জ্ঞানবুদ্ধি শান্ত করে, কেমন করে, রোজা নামাজ শরিয়তের কাজ, আসল শরিয়ত বলছ কারে।” (পবিত্র লালন- ৮৮২/১)।[৭৭]
উপোসের পরিচয় (Identity of fasting)
উপোস তাপনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। উপবাসকে ইসলামী শাস্ত্রে সিয়াম (ﺼﻴﺎﻢ) এবং ফার্সিতে রোজা (ﺭﻭﺯﻩ) বলা হয়। বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংস্কারের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার উপবাস পালনের ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম দেখা যায়। যেমন; জোড় উপোস, বেজোড় উপোস, তিন উপোস, ছয় উপোস, দশ উপোস ও ত্রিশ উপোস ইত্যাদি। তবে; আত্মদর্শন বা মরমীবাদে প্রকৃত উপোস হলো; ‘রজকাল’ ও ‘পবিত্রকাল’ উভয়ই। অর্থাৎ; ঋতুমতীদের রজস্রাব চলাকালীন সময়ের মধ্যে মৈথুন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সারাবিশ্বের সব রমণীদের প্রতি লক্ষ্য করে বাঙালী সাধু সন্ন্যাসীগণ গড়ে সাড়ে তিন দিন সময়কে রজকাল ধরে থাকেন। অন্যদিকে; আরবীয় দরবেশগণ গড়ে তিনদিন সময়কে রজকাল বলে থাকেন। যারফলে; বাঙালী মুসলমান সাম্প্রদায়িক মনীষীদের মতে; বার্ষিক উপোস মোট (৩ ১/২ × ১২) ৪২টি। অন্যদিকে; আরবীয় সাম্প্রদায়িক মনীষীদের মতে; বার্ষিক উপোস মোট (৩ × ১২) বা ৩৬টি। এজন্য; বাঙালী ও আরবীয় উপোস সংস্কারের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়। যেমন; বাঙালী সাম্প্রদায়িক সংস্কারগুলোর মধ্যে প্রতি মাসের উপোস প্রতি মাসেই রেখে দেয়া হয়েছে। তাই; বাঙালী মনীষীগণ এক মাসে তিনটি (৩) ও অন্য মাসে চারটি (৪) উপোস পালনের নীতিমালা বর্ণনা করেছেন। কিন্তু; আরবীয় সাম্প্রদায়িক সংস্কারের মধ্যে ত্রিশটি (৩০) উপোসকে রমজান মাসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অবশিষ্ট ছয়টি (৬) উপোসকে পরবর্তী মাসে বা অন্য যে কোনো মাসে সমাপ্ত করার কথা বলা হয়েছে। তাপন ও বিরতি; এ দুটি মূল উপাসনার ওপর ভিত্তি করে; বিশ্বের বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংস্কারের অন্যান্য উপাসনার রূপক কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।
অবকাশ (সিয়াম.ﺼﻴﺎﻡ) ও উপবাস (রোজা.ﺮﻮﺯﻩ) পরিভাষা দুটির সমন্বয়
(The combinations of vacation and fasting two terminology)
ঋতুমতীদের রজঃকালে মৈথুন হতে বিরত থাকা প্রাকৃতিক অবকাশ বা আন্তর্জাতিক অবকাশ। এ অবকাশটি শুধু মুসলমান ও হিন্দুদের জন্য নয়; বরং সারাবিশ্বের সবার জন্যই সমান। বিশ্বের সব মানুষ সমানভাবে এ অবকাশের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও; ঊষার প্রথম প্রতিপদ হতে অর্যমার শেষ দিন পর্যন্ত যোনিতে শুক্রনিক্ষেপ না করা সাধু সন্ন্যাসীগণের বিশেষ উপোস। যদি; কেউ এ বিশেষ উপোস পালন করেন; তবে; তিনি সাঁই রাতের (শব ই বরাত. ﺸﺑﻰ ﺑﺭﺍﺀﺓ) সাঁই সাধন দ্বারা সুধা আহরণ করতে পারবেন। আবার; কাঁই রাতের (শব ই ক্বদর. ﺸﺑﻰ ﻘﺪﺭ) কাঁই সাধন দ্বারা মধু আহরণ করতে পারবেন। অতঃপর; উক্ত সুধা ও মধু পান করে জীবকুল হতে দেবতা কুলে পদার্পণ করতে পারবেন। তারপর; তিনি এই সাধন দুটি সার্বক্ষণিক সম্পাদনের দ্বারা; দেবতা কুল হতে ঈশ্বর কুলে পদার্পণ করতেও পারবেন। কিন্তু; বিশেষ বিরতিটি পালন না করলে; অর্থাৎ; যোনিতে শুক্রপাত করলে; পরবর্তীকালে জীবজল সুধা ও মধু আহরণ করার কোনো সুযোগ থাকে না। অর্থাৎ; মৈথুন সম্পাদন করতে গিয়ে শুক্ররুদ্ধ অবকাশ পালন করলে; অমৃতসুধা বেতন রূপে পাওয়া যায়। বাস্তবে দেখা যায় যে; অবকাশ কাটালে বেতন নাই। কিন্তু; মরমীবাদে দেখা যায় যে; বিশেষ অবকাশ কাটালে পরিপূর্ণ বেতন পাওয়া যায়। অর্থাৎ; মরমীবাদের এই সূত্র মতে; কর্ম করলে বেতন নাই; অবকাশ কাটালে বেতন পাওয়া যায়।
অবকাশ (সিয়াম. ﺼﻴﺎﻡ) ও উপবাস (রোজা. ﺮﻮﺯﻩ) সাধনের সময়সীমা
(Vacation and fasting practicing deadlines)
ইসলামী শাস্ত্রাদিতে বর্ণিত আছে যে; প্রত্যুষ হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইন্দ্রিয় ও রসনা বিরতিই হলো অবকাশ বা সিয়াম (ﺼﻴﺎﻡ) সাধনা। তারা আরও বলে থাকে নির্ধারিত মাসে ত্রিশটি (৩০) উপোস এবং পরবর্তী যে কোনো মাসে ছয়টি (৬) উপোস; বছরে মোট ছত্রিশটি (৩০ + ৬) = ৩৬ উপোস পালন করলে; সারা বছর উপোস পালন করার পুণ্যলাভ করা যায়। ব্যাখ্যাস্বরূপ তারা বলে যে; ছত্রিশটি (৩৬) উপোস পালন করলে দেবতাগণ (ফেরেস্তা. ﻔﺮﺸﺗﻪ) উপোস সংখ্যাকে দশ (১০) দ্বারা গুণ করে তিনশত ষাটটি (৩৬ × ১০) = ৩৬০ উপোস পরিপূর্ণ করে নেন। সৌর বছর তিনশত পঁয়ষট্টি (৩৬৫) দিনে। কিন্তু উপোস হলো তিনশত ষাটটি (৩৬০)। তাহলে পাঁচ (৩৬৫ – ৩৬০) = ৫ দিন উদ্বৃত্ত হয়। এ পাঁচ (৫) দিন উপোস পালন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সে নিষিদ্ধ দিবসগুলো হলো; ১. নির্বাণোৎসবের (ঈদুলফিতর. ﻋﻴﺪﺍﻟﻔﻄﺮ) দিন ২. মুক্তোৎসবের (ঈদুলআজহা. ﻋﻴﺪ ﺍﻻﺿﺤﻰ) দিন ও ৩ জিলহজ মাসের নবম হতে একাদশতম দিবস; অর্থাৎ; ৯, ১০ ও ১১ এ তিন দিন উপবাস পালন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
সাম্প্রদায়িক মুসলমান মনীষীদের ব্যাখ্যা হলো; সৌরবর্ষের তিনশত পঁয়ষট্টি (৩৬৫) দিবসের মধ্যে পাঁচ (৫) দিবস উপোস পালন করা নিষিদ্ধ। ছত্রিশটি (৩৬) উপোস পালন করলে দেবতাগণ দশ (১০) দ্বারা ছত্রিশ (৩৬) সংখ্যাকে গুণ করে; পরিপূর্ণ তিনশত ষাট (৩৬০) উপোসের পুণ্য যার যার কর্মফল গ্রন্থে লিখে দেন। কথার কথা রূপে বলা যায় যে; তাদের গণনা হলো; চান্দ্রবর্ষে। তাদের স্বর্গের গণনা হলো চান্দ্রবর্ষে। তাদের আল্লাহর গণনা হলো চান্দ্রবর্ষে। আর চান্দ্রবর্ষ হলো ৩৫৪ দিনে। তবে; তারা ৩৬০ বা ৩৬৫ দিনের গণনা পেল কোথায়? বাংভারতের অন্ধবিশ্বাসী মোল্লা-মুন্সিদের কে বলবে এসব বিষয়? তাই; এখন সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। তাদের ধুর্তামি ও ধুরন্ধর কৌশলের খপ্পর হতে আত্মরক্ষার সময় এসেছে।
মুসলমানরা রমজানের চাঁদ দেখে উপবাস আরম্ভ করে ও শাওয়ালের চাঁদ দেখে উপবাস বন্ধ করে। অর্থাৎ; চান্দ্রমাস অনুসারে উপোস পালন করে। অথচ; পুণ্যের গণনা করে সৌরবর্ষ অনুসারে। এটি কোন ধরণের গোঁজামিল দেওয়া সংস্কার? তা পাঠক-পাঠিকার বিচার্য বিষয়।
ইসলামী সংস্কার সিয়াম
(الإصلاح الإسلامي الصيام)
(Islamic reformation Fasting)
ভূমিকা (Prolegomenon)
সিয়াম (ﺼﻴﺎﻡ) আরবি পরিভাষা। এটি ইসলামী সাম্প্রদায়িক শাস্ত্রীয় পুস্তক-পুস্তিকায় বর্ণিত উপাসনামূলক একটি অনন্য সংস্কার। সিয়াম (ﺼﻴﺎﻡ) নামক এই সংস্কারকে কেন্দ্র করে; আরবীয় বিশিষ্ট রূপকারগণ অগণিত চমৎকার/ Miracles/ (معجزات) (মু’জিযা) নির্মাণ করেছেন। সুমহান রূপকারগণ কর্তৃক নির্মিত অনন্য চমৎকারগুলো একত্র করেই সম্পাদিত হয়েছে বিশ্ববিখ্যাত মহাগ্রন্থ। আরবীয় পুরাণে বর্ণিত অসংখ্য ‘আরবি পৌরাণিক রূপক পরিভাষা’র মধ্যে সিয়াম (ﺼﻴﺎﻡ) উপাসনামূলক একটি অনুপম ‘আরবীয় পৌরাণিক চারিত্রিক পরিভাষা’। এটি মুসলমানদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাম্প্রদায়িক সংস্কারও বটে। কিন্তু মোল্লা-মুন্সিরা এর প্রকৃত অর্থ ও তাৎপর্য বুঝতে না পেরে; শতাব্দীর পর শতাব্দী কেবল উপোসই পালন করে গেল। এখন পর্যন্ত প্রকৃত বিষয়ের সন্ধান পেল না।
এটা আরবীয় রূপকারগণের বিশ্ববিখ্যাত, বিশ্ববিরল অনন্য সাম্প্রদায়িক সংস্কার। সাম্প্রদায়িক সত্তা ও সংস্কারগুলোর সাম্প্রদায়িক উপাসনা অনুষ্ঠান ও অলৌকিককাহিনী জানার পর; তাদের প্রকৃত তথ্য, তত্ত্ব ও তাৎপর্য জানাও প্রয়োজন। তাই; আলোচ্য পরিভাষাটির প্রকৃত সত্তা, অর্থ ও পৌরাণিক পরিভাষার মূলক সত্তা উদ্ঘাটনের জন্য; নিচে কয়েকটি অভিধান অবিকল তুলে ধরা হলো। অতঃপর; সম্যক পর্যালোচনা শেষে সঠিক সমাধান প্রদানের চেষ্টা করা হলো।
এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় যে; রোজা ও সিয়াম এক নয়। কারণ; ফার্সি রোজা দ্বারা পরিত্রাণ উপোস বুঝায়। কিন্তু আরবি সিয়াম দ্বারা প্রাকৃতিক উপোস বুঝায়।
সিয়াম (ﺼﻴﺎﻡ) পরিভাষাটির অনুবাদসমূহ
(Translations of fasting terminology)
১. আরবি-বাংলা অভিধান (বাংলা একডেমী)।[১]
ﺼﻴﺎﻢ (সিয়ামু)- রোজা, অনাহার, উপবাস। (ﺝ) ﺼﻮﻢ (ﻮ)
২. আরবি ফার্সি তুর্কি হিন্দি উর্দু শব্দের অভিধান (বাংলা একাডেমি)।[২]
সিয়াম বি রোজা, উপবাসব্রত [সিয়াম. ﺼﻴﺎﻢ আ.]।
৩. আল-কাওসার (আধুনিক আরবি-বাংলা অভিধান)।[৩]
ﺼﻮﻡ (সাওমুন) রোজা, রমজান মাস।
৪. আল কুরানের বাংলা অভিধান[৪]
ﺼﻴﺎﻢ সিয়াম (বহুবচন) রোজা, সিয়াম।
৫. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (বাংলা একাডেমি)।[৬]
সিয়াম [শিয়াম] বি রোজা, উপবাসব্রত {আ.সিয়াম.ﺼﻴﺎﻢ. একব.সয়ম.ﺼﻮﻢ}
৬. ফরহঙ্গ.ই.রব্বানী (উর্দূ-বাংলা-অভিধান)।[৭]
ﺼﻮﻢ (সওম) আঃ নাঃ পুং; রোজা, উপবাস।
পর্যালোচনা (Reviews)
আরবি-বাংলা অভিধানের মধ্যে “ﺼﻴﺎﻢ (সিয়ামু); রোজা, অনাহার, উপবাস। (ﺝ) ﺼﻮﻢ (ﻮ)”; এখানে; তিনটি বাংলা অনুবাদ দেখা যায়; তারমধ্যে; সর্বপ্রথম ‘রোজা’; পরিভাষাটি আদৌ বাংলা অনুবাদ নয়। কারণ; রোজা (ﺮﻮﺯﻩ) ফার্সি পরিভাষা। এটি কখনই আরবি সিয়াম পরিভাষার বঙ্গানুবাদ হতে পারে না। অতঃপর; “অনাহার, উপবাস”; এ পরিভাষা দুটির একটিও সিয়াম (ﺼﻴﺎﻢ) পরিভাষার বঙ্গানুবাদ নয় বরং ‘বাঙারী পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’। এজন্য; এটি আরবি-বাংলা অভিধান হতে পারে না; বরং এটি আরবি-ফার্সি অভিধান বলা-ই যুক্তিযুক্ত।
আল-কাওসার অভিধানের মধ্যে “ﺼﻮﻡ (সাওমুন) রোজা, রমজান মাস”; এখানে; দুটি অনুবাদ দেখা যায়; তারমধ্যে; সর্বপ্রথম ‘রোজা’ পরিভাষাটি আদৌ বাংলা পরিভাষা নয়। কারণ; রোজা (ﺮﻮﺯﻩ) পরিভাষাটি ফার্সি। এটি কখনই আরবি সাওম (ﺼﻮﻡ) পরিভাষাটির বঙ্গানুবাদ হতে পারে না। অতঃপর; ‘রমজান মাস’ এ পরিভাষাটিও আরবি সাওম (ﺼﻮﻡ) পরিভাষাটির বঙ্গানুবাদ নয়। এজন্য; এটি আরবি-বাংলা অভিধান হতে পারে না। বরং এটি আরবি-ফার্সি অভিধান বলা-ই যুক্তিযুক্ত।
আল কুরানের বাংলা অভিধানের মধ্যে; “ﺼﻴﺎﻢ সিয়াম (বহুবচন) রোজা, সিয়াম”; এখানে; দুটি অনুবাদ দেখা যায়; তারমধ্যে; একটিও বাংলা অনুবাদ নয়। প্রথম ‘রোজা’ পরিভাষাটি আদৌ বাংলা পরিভাষা নয়। কারণ; রোজা (ﺮﻮﺯﻩ) পরিভাষাটি ফার্সি। দ্বিতীয় পরিভাষাটি হলো; ‘সিয়াম’। আরবি সিয়াম পরিভাষাটির বঙ্গানুবাদ সিয়াম হতে পারে না। এজন্য; এটি কুরানের বাংলা অভিধান হতে পারে না; বরং আরবি-ফার্সি অভিধান বলা-ই যুক্তিযুক্ত।
ফরহঙ্গ.ই.রব্বানী অভিধানের মধ্যে “ﺼﻮﻢ (সওম) আঃ নাঃ পুং; রোজা, উপবাস”; এখানে; দুটি অনুবাদ দেখা যায়। তারমধ্যে; সর্বপ্রথম ‘রোজা’ পরিভাষাটি আদৌ বাংলা পরিভাষা নয়। কারণ; রোজা (ﺮﻮﺯﻩ) পরিভাষাটি ফার্সি। এটি কখনই আরবি সিয়াম (ﺼﻴﺎﻢ) পরিভাষার বঙ্গানুবাদ হতে পারে না। অতঃপর; ‘উপবাস’; এটিও সিয়াম পরিভাষাটির বঙ্গানুবাদ নয় বরং ‘বাঙালী পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’। এজন্য; এটি উর্দু-বাংলা অভিধান হতে পারে না বরং এটি আরবি-ফার্সি অভিধান বলা-ই যুক্তিযুক্ত।
আরবি ফার্সি তুর্কি হিন্দি উর্দু শব্দের অভিধানের মধ্যে “সিয়াম বি রোজা, উপবাস [সিয়াম. ﺼﻴﺎﻢ আ.]”; এখানে; যে দুটি অনুবাদ দেখা যায়; তারমধ্যে; সর্বপ্রথম ‘রোজা’ পরিভাষাটি আদৌ বাংলা পরিভাষা নয়। কারণ; রোজা (ﺮﻮﺯﻩ) পরিভাষাটি ফার্সি। এটি কখনই আরবি সিয়াম (ﺼﻴﺎﻢ) পরিভাষাটির বঙ্গানুবাদ হতে পারে না। অতঃপর; ‘উপবাস’ এটিও সিয়াম পরিভাষাটির বঙ্গানুবাদ নয় বরং ‘বাঙালী পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’। এজন্য; এটি আরবি-বাংলা ও ফার্সি-বাংলা ইত্যাদি অভিধান হতে পারে না; বরং এটি আরবি-ফার্সি অভিধান বলা-ই যুক্তিযুক্ত।
ব্যবহারিক বাংলা অভিধানের মধ্যে “সিয়াম [শিয়াম] বি রোজা, উপবাস {আ. সিয়াম.ﺼﻴﺎﻢ. একব.সয়ম.ﺼﻮﻢ}”; এখানে; দুটি অনুবাদ দেখা যায়; তারমধ্যে; সর্বপ্রথম ‘রোজা’ পরিভাষাটি আদৌ বাংলা পরিভাষা নয়। কারণ; রোজা (ﺮﻮﺯﻩ) পরিভাষাটি ফার্সি। এটি কখনই আরবি সিয়াম (ﺼﻴﺎﻢ) পরিভাষার বঙ্গানুবাদ হতে পারে না। অতঃপর; ‘উপবাস’ এটিও সিয়াম (ﺼﻴﺎﻢ) পরিভাষার বঙ্গানুবাদ নয়; বরং ‘বাঙালী পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’। এজন্য; একে বাংলা অভিধান বলা যেতে পারে না; বরং এটি আরবি-ফার্সি অভিধান বলা-ই যুক্তিযুক্ত।
অর্থাৎ; সিয়ামের দেহতত্ত্ব উদ্ঘাটন করা অনেক দূরের কথা। এর আভিধানিক অর্থ করার অবস্থা বুঝতেই পারছেন। এসব কারণে মুসলমানদের মধ্যে এতো দল, উপদল, এতো উগ্রবাদ, এতো অশান্তি। কারণ; এখনও মুসলমানরা পৌরাণিক কাহিনীকে ইতিহাস মনে করে। কারবালার উপন্যাসকে ইতিহাস মনে করে।
বিভিন্ন অভিধান থেকে প্রাপ্ত পরিভাষা
(Terminologies obtained from several dictionaries)
“রোজা, অনাহার, উপবাস, উপবাসব্রত, সিয়াম।”
পরিশেষে বলা যায়; বিভিন্ন অভিধান হতে প্রাপ্ত পরিভাষাগুলোর মধ্যে একটিও আলোচ্য সিয়াম (ﺼﻴﺎﻢ) পরিভাষার প্রকৃত বঙ্গানুবাদ নয়।
সমাধান (Solution)
সিয়াম ﺼﻴﺎﻢবি অবকাশ, বিরতি, নিষ্কৃতি, নিস্তার, অবসর, অবকাশ, অব্যাহতি, কর্মবিরতি, ছাড়, রহিত, কর্ম হতে অব্যাহতি গ্রহণ (বাসং) উপবাস, উপোস, উপোসন, অনাহার, অনশন (পরি) রজস্বালা রমণীদের রজস্রাব চলাকালীন তিনদিন বা সাড়ে তিন দিন সময় মৈথুন হতে সম্পূর্ণ বিরত থাকা (প্র) ১. বাঙালী সংস্কার মতে; সৌর-পঞ্জিকার এক সন্ধ্যাকাল হতে অন্য সন্ধ্যাকাল পর্যন্ত; উপোস পালন করা। অর্থাৎ; যে দেবতার নিমিত্ত উপোস পালন করা হয়; সে দেবতার পূজা শেষ হওয়া পর্যন্ত উপোস পালন ২. ইসলামী সংস্কার মতে; সৌর-পঞ্জিকার প্রভাত হতে সন্ধ্যা বা ঊষা হতে অর্যমা পর্যন্ত উপোস পালন ৩. মুসলমান পারম্পরিকদের ৪০ মূলক সত্তার একটি মূলক সত্তা বিশেষ ৪. পুরো পবিত্রতার ২৭ দিন শুক্রপাতহীন মৈথুন (ব্য্য) বাঙালী সাধু ও সন্ন্যাসীগণের মতে; রজস্রাবের স্থায়ীত্বকাল মানবদেহে সাড়ে তিন দিন। যারফলে; বছরে তাঁর স্থায়ীত্বকাল (১২ × সাড়ে তিন) = ৪২ দিন। এ বিয়াল্লিশ (৪২) দিন মৈথুন বিরতি হতেই পানাহার বিরতির মতো উপোসের সাম্প্রদায়িক সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু; আরবীয় দরবেশগণের মতে; তাদের ‘নবী’ এর স্থায়িত্বকাল মানবদেহে মাত্র তিনদিন। যারফলে; বছরে তার স্থায়ীত্বকাল (১২ × ৩) = ৩৬ দিন। এ ছত্রিশ (৩৬) দিন মৈথুন বিরতী হতেই পানাহার বিরতির মতো উপোসের সাম্প্রদায়িক সংস্কার করা হয়েছে। উল্লেখ্য; মুসলমান রূপকারগণ ত্রিশটি (৩০) উপোসকে একমাসে যুক্ত করে অবশিষ্ট ছয়টিকে (৬) অন্য মাসে পূরণের ব্যবস্থা করেছেন। প্রকৃতিগতভাবে; বিরতি বা অবকাশ ছত্রিশটি (৩৬) বা বিয়াল্লিশটি (৪২) যাই হোক না কেন; এটিই হলো; মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক উপোস চমৎকারের (Mythology) প্রকৃত আত্মদর্শন (Theology)। উপোস পালনের নিয়মাবলী সাম্প্রদায়িক সংস্কার মাত্র। আবারও বলতে হয়; বিশ্বের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অনুসারীরা প্রতি মাসের উপোসকে মাসেই রেখে দিয়েছে। কিন্তু আরবীয় মুসলমান রূপকারগণ ত্রিশটি (৩০) উপোসকে এক মাসে এবং অবশিষ্ট ছয়টিকে (৬) অন্য মাসে পালনের সাম্প্রদায়িক বিধান সংস্কার করেছেন (শ্ববি) ঊর্ধ্বরেতা, ডুবুরী, নিষ্কামী, পারমী, ‘ﺜﺎﺑﺖ’ (সাবিত) (ইংপ) semener, spermer, spirited, strong, steadfast, consistent, resolute (ইদে) আলি (আ.ﻋﻠﻰ), গাজি (আ.ﻏﺎﺯﯼ), হাজি (আ.ﺤﺎﺠﻰ), পালোয়ান (ফা.ﭙﻬﻟﻭﺍﻦ) বি বিলায়েত (ﻮﻻﻴﺖ), মর্দামি (ফা.ﻤﺭﺪﻤﻰ), মুরোত (আ.ﻤﺮﻮﺖ), সিয়াম (ﺼﻴﺎﻢ), রোজা (ﺭﻭﺯﻩ) (দেপ্র) এটি ‘আরবীয় পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’র ‘শুক্রধর’ পরিবারের ‘আরবীয় পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’ বিশেষ (সংজ্ঞা) ১. সাধারণত; ইসলামী শাস্ত্রে অবকাশ বা বিরতিকে আরবিতে সিয়াম (ﺼﻴﺎﻢ) বলা হয় ২. মরমীবাদে; মৈথুনে কোনক্রমেই জননপথে শুক্রপাত না করাকে রূপকার্থে বাংলায় ‘অটল’ ও আরবিতে সিয়াম (ﺼﻴﺎﻢ) বলা হয় (বাপৌছ) নির্বাণ, মরা১ ও স্তম্ভন (বাপৌচা) ঋভু, ওজম্বল ও সম্রাট (বাপৌউ) ঊর্ধ্বরেতা, ডুবুরী ও স্বাধীন (বাপৌরূ) অটল (বাপৌমূ) শুক্রধর {আ}
আন্তজার্তিক অবকাশ কী?
(What is international vacation?)
কুরানে এই আন্তর্জাতিক অবকাশের কথা পুনঃপুন বলা হয়েছে। আবার; এও বলা হয়েছে যে; এ অবকাশটি পূর্ববর্তী সবার ওপর বিদ্যমান ছিল। এ হতেই বুঝা যায়; মানবের সৃষ্টিলগ্ন হতে এ অবকাশটি ছিল; এখনও আছে; এবং তা চিরকাল থাকবে।
১. “ وَيَسْأَلُونَكَ عَنْ الْمَحِيضِ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ وَلَا تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمْ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ” অর্থ; “আপনার নিকট তারা নারীদের রজ সম্পর্কে জানতে চায়। আপনি বলে দেন; এটা অত্যন্ত কষ্টকর। রজকালে তোমরা নারীসঙ্গ হতে বিরত থাকো; তারা পবিত্র হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাদের নিকট গমন করো না। যখন; তারা উত্তমভাবে পরিশুদ্ধ হয়; তখন; কাঁই তোমাদের যেভাবে গমন করার আদেশ দিয়েছেন ঠিক সেভাবে গমন করো। নিশ্চয় কাঁই প্রত্যাবর্তনকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালোবাসেন।” (কুরান, সুরা- বাক্বারা-২২২)।[৩৬]
উপরোক্ত অনুচ্ছেদটি ছিল নারীদের রজ সম্পর্কে উম্মুক্ত আলোচনা। কিন্তু আত্মতত্ত্বের লজ্জাস্কর সত্তার উম্মুক্ত আলোচনা করাও লজ্জাস্কর। এজন্য; পবিত্র গ্রন্থের রজ সম্পর্কিত রূপক আলোচনার বিশেষ বিশেষ উদ্ধৃতগুলো তুলে ধরা হলো।
২. “يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمْ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ” অর্থ; “হে বিশ্বাসীগণ তোমাদের ওপরও অবকাশ ঘোষিত হলো; যেমন অবকাশ ঘোষিত হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা সাধু হতে পারো।” (কুরান, সুরা- বাক্বারা-১৮৩)।[৩৬]
৩. “أَيَّامًا مَعْدُودَاتٍ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ فَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَهُ وَأَنْ تَصُومُوا خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنتُمْ تَعْلَمُونَ” অর্থ; “গণনার কয়েকটি দিবস মাত্র; তবে; যদি; তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ থাকে বা পর্যটনে থাকে; তবে; পরবর্তীকালে সে দিবসগুলো অবশ্যই গণনা (মান্য) করতে হবে। যারা সে শক্তি রাখে; তারা যেনো নিঃস্বদের খাদ্য দান করে; যে হৃষ্টচিত্তে কর্ম করে; তার জন্য মঙ্গল, যদি অবকাশ কাটাও তবে উত্তম। যদি; তোমরা তা বুঝতে পারো।” (কুরান, সুরা- বাক্বারা-১৮৪)।[৩৬]
৪. “شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنْ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمْ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمْ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمْ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ” অর্থ; “প্রসিদ্ধ উষ্ণভূমি- যেই ভূমিতে প্রেরিত হয় উপাদেয় পানীয়; যা মানবের পথপ্রদর্শক এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য পথনির্দেশক ও পার্থক্যকারী। অতঃপর; তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি নির্বাণলাভ করবেন; তিনি বিরত থাকবেন। তবে; যদি; তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ থাকে বা পর্যটনে থাকেন; তবে; তিনি পরবর্তীকালে সে দিবসগুলো অবশ্যই গণনা (মান্য) করবেন। কাঁই ইচ্ছে করেন; যা তোমাদের জন্য সহজ হয়। তিনি তোমাদের কাঠিন্য কামনা করেন না; যাতে তোমরা গণনাগুলো পূরণ করো; এবং তোমাদেরকে সৎপথ প্রদর্শন করেছেন। সেজন্য; তোমরা কাঁইয়ের মহত্ত্ব বর্ণনা করো। সম্ভবত; তোমরা প্রশংসাকারী হবে।” (কুরান, সুরা- বাক্বারা-১৮৫)।[৩৬]
৫. “أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَائِكُمْ هُنَّ لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتَانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنْكُمْ فَالآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمْ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنْ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنْ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَقْرَبُوهَا كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ” অর্থ; “রজকালে সঙ্গম নিষিদ্ধ হলো; নারীদের মতামতের ভিত্তির ওপর; তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। কাঁই অবগত আছেন যে; তোমরা আত্মপরিচয় করেছিলে! আবার; তিনি তোমাদের প্রতি প্রত্যাবর্তন করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন। তোমরা তাদের জন্য অটল হও; এবং তোমাদেরকে যাকিছু দিয়েছেন; তা অন্বেষণ করো। আর পানাহার করতে থাকো; যে পর্যন্ত ঊষার শুভ্রসূত্র হতে কৃষ্ণসূত্র দৃষ্ট না হয়। অতঃপর; অর্যমা পর্যন্ত বিরতি পরিপূর্ণ করো। তাদের সঙ্গ করো না ও তাদের প্রতি আসক্ত হয়ো না। যখন; তোমরা মন্দিরে গমন করো; এটাই হলো; কাঁইয়ের বিধান। অতএব; তার নিকটবর্তী হয়ো না। এমনভাবে কাঁই নিজের নিদর্শনাদি মানুষের জন্য ব্যক্ত করে থাকেন; যাতে তারা সাধু হয়।” (কুরান, সুরা- বাক্বারা-১৮৭)।[৩৬]
৬. “وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ فَإِنْ أُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنْ الْهَدْيِ وَلَا تَحْلِقُوا رُءُوسَكُمْ حَتَّى يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهُ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيضًا أَوْ بِهِ أَذًى مِنْ رَأْسِهِ فَفِدْيَةٌ مِنْ صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍ فَإِذَا أَمِنتُمْ فَمَنْ تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنْ الْهَدْيِ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ فِي الْحَجِّ وَسَبْعَةٍ إِذَا رَجَعْتُمْ تِلْكَ عَشَرَةٌ كَامِلَةٌ ذَلِكَ لِمَنْ لَمْ يَكُنْ أَهْلُهُ حَاضِرِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ” অর্থ; “তোমরা কাঁইয়ের জন্য পর্যটন ও পারমিতা অর্জন করো। যদি টল হও; তবে; উপঢৌকনগুলো প্রেরণ করো; উপহার সামগ্রি যথাস্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত মাথামুণ্ডন করো না। যারা কষ্টে পতিত হয় বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে; তারা বিরত থাকবে ও পণ প্রদান করবে; দান করবে এবং পুনঃ সাধন করবে। আর তোমাদের মধ্যে; যারা এমন করতে চাও যে; পর্যটন দ্বারা পারমিতা অর্জন করবে; তবে; যথাযথ উপহার প্রদান করো। অতঃপর; যদি; কেউ না পায়; তবে; পারমিতার জন্য তিন দিন বিরত থাকবে এবং প্রত্যাবর্তনকালে সাত দিন। এমন দশ দিনেই পূর্ণতা। এ বিধানটি হলো; তাদের জন্য; যাদের পরিজন পবিত্র মন্দিরের নিকটে অবস্থান করে না। তোমরা কাঁইকে ভয় করো; জেনে রেখো কাঁইয়ের শাস্তি বড়ই কঠিন।” (কুরান, সুরা- বাক্বারা-১৯৬)।[৩৬]
এমনিভাবে; বিশ্বের সব মহাকাব্যে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রূপকার্থে পুনঃপুন যে আন্তর্জাতিক বিরতির কথা বলা হয়েছে; তা হলো ঋতুমতী রমণীদের রজকাল। কারণ; সারা মাস ধরে মৈথুন সম্পন্ন করলেও রজকালের সাড়ে তিন দিন সময় মৈথুন চির নিষিদ্ধ। কারণ; রজকালে রমণীদের জননপথ অত্যন্ত কোমল থাকে। এজন্য; এ সময়ে মৈথুনে গেলে; নর-নারী উভয়ের জননাঙ্গের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। উল্লেখ্য যে; সুস্থ দেহে প্রকৃতিগত রজকাল তিন দিন। এ তিন দিনই হলো; মৈথুন সাধনের আন্তর্জাতিক অবকাশ। বিষয়টি লজ্জাস্কর হওয়ার কারণে; সরাসরি বলা যায় না। এজন্য; মহাগ্রন্থাদির মধ্যে রূপকার্থে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলা হয়।
আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক অবকাশ কী?
(What is international natural vacation?)
আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক অবকাশ কী? বিষয়টি নিয়ে বিশিষ্ট মরমী কবি লালন সাঁইজির একটি বাণী নিচে উপস্থাপন করা হলো।
“ত্রিধারা বয়রে নদী ত্রিধারা বয়, কোন ধারাতে কী ধন প্রাপ্তি হয়। ত্রিধারায় যোগানন্দ, কার সঙ্গে কী সম্বন্ধ, শুনলে ঘুচে মনের ধন্ধ, প্রেমানন্দ বাড়ে সদায়, শক্তি তত্ত্ব পরম তত্ত্ব সত্য সত্য যাহার হৃদয়। কারুণ্য তারুণ্য এসে, লাবণ্যেতে কখন মিশে, যার আছে এসব দিশে, সচেতন বলা যায়, আমার মতি মন্দ, সে পথে ডুবে না মনোরায়। কখন হয় শুকনা নদী, কখন হয় বর্ষাপাতি, কোনখানে তার কুলের স্থিতি, সাধকে করে নির্ণয়, অধীন লালন না বুঝে, ডুবে কিনারায়।” (পবিত্র লালন- ৫০৩)।[৭৭]
সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মতবাদের বিভিন্ন শাস্ত্রীয় পুস্তক-পুস্তিকা হতে অনেক প্রকার উপবাসের বিবরণ জানা যায়। যেমন; জোড় উপোস, বেজোড় উপোস ও নিয়মিত উপোস ইত্যাদি। তেমনই; মরমীবাদেও উপবাস বা বিরতি দুই প্রকার। যথা; ১. প্রাকৃতিক উপবাস ও ২. পরিত্রাণ উপবাস।
১. প্রাকৃতিক উপবাস (Natural fasting):
ঋতুমতী নারীর রজকালে মৈথুন বিরতি পালন করাকে প্রাকৃতিক উপবাস বলে।
প্রাকৃতিক উপবাস সারাবিশ্বের সব পুরুষ-নারীর ওপর সমানভাবে আবশ্যক। সেজন্য; বিশ্বের সব সাম্প্রদায়িক গ্রন্থে এই উপোসের ন্যূনাধিক আলোচনা দেখা যায়। এখান হতে সাম্প্রদায়িক ঠাক-পুরুৎরা ও মোল্লা-মুন্সিরা উপবাসকে নারী ও পুরুষ উভয়ের ওপর আবশ্যক করেছে। বর্তমানে এটি সাম্প্রদায়িক মতবাদের অনুসারীদের সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস হতে বিরত থাকাই উপোস নামে পরিচিত।
বিবরণ (Description):
কিশোরী প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর রজস্রাব আগমন করে। এটা প্রাকৃতিক নিয়ম। রজস্রাব প্রবাহ সময়কে ঋতুকাল বলা হয়। ঋতুকালে রমণীর সাথে পুরুষের মৈথুন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তেমনই; ঋতুকালে ঋতুমতীর সব ধরণের পুরুষের সাথে মৈথুন ও নিজে নিজে যৌনশৃঙ্গার (হস্তমৈথুন) সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অর্থাৎ; রাবার; প্লাস্টিক, ফোম ও ধাতব লিঙ্গ এবং ঝিঙ্গা, শশা ও বেগুন এই জাতীয় ফল দ্বারা নিজে নিজে যৌনশৃঙ্গার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এতদ্বিষয়ে বিবেচনা করেই বিশ্বের সব সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মতবাদে প্রাকৃতিক উপবাসকে বিশেষ বিশেষ পুরুষ-নারীর ওপর আবশ্যক করা হয়েছে। এককথায়; বলা যায় ঋতুকালে যোনিতে পুরুষের শিশ্ন ঢুকিয়ে শৃঙ্গার ও মৈথুন অথবা ঋতুমতী নিজেই অন্যকিছু ঢুকিয়ে শৃঙ্গার বা মৈথুন করা চির নিষিদ্ধ। সেজন্য; উক্ত কাজ হতে বিরত থাকা উভয়ের জন্যই আবশ্যক। অর্থাৎ; প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও ঋতুমতী নারীর ওপর প্রাকৃতিক উপবাস আবশ্যক। অন্যদিকে; অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর, অরজা কিশোরী ও মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ বৃদ্ধার কোনো উপবাস নেই। তাই; এরা সব সময়ই শাস্ত্রীয় উপোসের আওতামুক্ত। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় হলো; সাম্প্রদায়িক মতবাদের ধ্বজাধারী ঠাক-পুরুৎ ও মোল্লা-মুন্সিরা সাত (৭) বছরের কিশোর-কিশোরী হতে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পর্যন্ত সবাইকে সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস হতে বিরত থাকার শাস্ত্রীয় উপোস পালনের অন্তর্ভুক্ত করেছে। তাই; বলা যায়; সাম্প্রদায়িক দাসত্ব বা সাম্প্রদায়িক শৃঙ্খল হতে মুক্ত হতে হলে অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর, অরজা কিশোরী ও মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ বৃদ্ধাকে শাস্ত্রীয় উপবাসের আওতামুক্ত ঘোষণা করা সময়ের দাবি।
অনুসিদ্ধান্ত (Corollary):
১. কেবল ঋতুমতী নারী ব্যতীত অন্য কোনো নারীর (কিশোরী, গর্ভবতী নারী ও ঋতুস্রাব বন্ধ বৃদ্ধা) ওপর প্রাকৃতিক উপোস আবশ্যক নয়।
২. ঋতুকালে মৈথুন বিরতি পালন করা সকল সক্ষম পুরুষের আবশ্যক।
২. পরিত্রাণ উপবাস (Salvation fasting)
ঋতুমতী রমণীর পবিত্রকালে মৈথুনের সময়ে যোনিনালিতে শুক্রপাত বন্ধ রাখাকে পরিত্রাণ উপবাস বলে।
বিবরণ (Description):
পরিত্রাণ উপোস সবার জন্য নয়। এই উপোস কেবল সাধক পুরুষের জন্য আবশ্যক। তাই; সব ধরণের নারী (কিশোরী, রজস্বলা, রজমণ্ডা, রজখণ্ডা ও বৃদ্ধা); কিশোর, সাধারণ যুবক ও বৃদ্ধরা এই উপোসের আওতামুক্ত। অর্থাৎ; কেবল সাধক পুরুষ ভিন্ন অন্য কারো জন্য এই উপোসটি প্রযোজ্য নয়। এক কথায়; কেবল শুক্র নিয়ন্ত্রণ প্রশিক্ষণকারী, সাঁই দর্শন সাধনকারী ও কাঁই দর্শন সাধনকারীর জন্য পরিত্রাণ উপোস আবশ্যক।
এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় যে; প্রাকৃতিক উপোস ও পরিত্রাণ উপোসকে মূলভিত্তি ধরে সাম্প্রদায়িক মনীষীরা শাস্ত্রীয় উপোসের কাঠামো নির্মাণ করেছে। তাই; সাম্প্রদায়িক উপোস বা শাস্ত্রীয় উপোসকে প্রাকৃতিক উপোস ও পরিত্রাণ উপোসের ছায়া ধরা হয়। যেমন; সিনেমার মূল নায়ক নায়িকা যার যার বাড়িতে থাকে কিন্তু তাদের ছায়াছবি সিনেমার হলের পর্দায় দেখানো হয়। অনুরূপভাবেই বলা যায়; সাম্প্রদায়িক ও শাস্ত্রীয় সব উপাসনার মূলভিত্তি মানবদেহ। কিন্তু সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক ঠাক-পুরুৎ ও মোল্লা-মুন্সিরা ছায়া উপাসনাকেই প্রকৃত উপাসনা মনে করে। আর সমাজের সর্ব শ্রেণির মানুষের ওপর আবশ্যক করে দেয়। আশা করা যায়; এই আলোচনার দ্বারা সমাজের সর্ব শ্রেণির মানুষই উপকৃত হবে।
এবার বলা যায়; হিন্দু ও বৌদ্ধ সমাজে প্রচলিত দেবতার উদ্দেশ্যে দেবতার পূজা আরম্ভ হওয়ার লগ্ন হতে পূজা শেষ হওয়ার লগ্ন পর্যন্ত অন্ন-পানীয় গ্রহণ ও মৈথুন হতে বিরত থাকার উপোস সাধনটি প্রাকৃতিক উপোস ও পরিত্রাণ উপোসের ছায়া মাত্র। অন্যদিকে; ইহুদী, খ্রিস্টান ও মুসলমান সমাজে প্রচলিত সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার করা ও মৈথুন হতে বিরত থাকার উপোস সাধনটি প্রাকৃতিক উপোস ও পরিত্রাণ উপোসের ছায়া মাত্র।
তবে; বড় বেদনাবিধুর (বেদনাদায়ক) বিষয় হলো; সমাজের সামান্য জানা মুসলমান মোল্লা-মুন্সিরা তাদের রমজান মাসে যেরূপ বাড়াবাড়ি করে; যেমন; তারা অকারণে (অযথা) হোটেল-রেস্তরা বন্ধ করে। তাদের এই অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির সুযোগে মহাজনরা কালোবাজারি আরম্ভ করে। যারফলে; রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। সাম্প্রদায়িক উপোস সম্পর্কে তারা নিজেরাও যেমন অজ্ঞ তাদের অনুসারীরাও তেমনই অজ্ঞ। (তথ্যসূত্র; আত্মতত্ত্ব ভেদ (দেহ) (১ম খণ্ড))
অনুসিদ্ধান্ত (Corollary):
১. কেবল সাধক পুরুষ ব্যতীত অন্য কোনো কারো (কিশোর, সাধারণ পুরুষ ও পুরুষত্বহীন, খোজা, কাপুরুষ ও হিজড়া) ওপর পরিত্রাণ উপোস আবশ্যক নয়।
২. পরিত্রাণ উপোস কেবল সাধক পুরুষের সাধনকাল ব্যতীত অন্য সময়ে আবশ্যক নয়।
এখানেও দেখা যায়; পুরো আলোচনাটি দেহ পুঞ্জিকা অনুসারে। তাহলে; মুসলমানরা সৌর পঞ্জিকা অনুসারে যে উপোস পালন করছে তা কতটুকু সমীচীন? হাসির ব্যাপার হলো; মুসলমানরা চান্দ্রমাস অনুসারে উপোস পালন ও উপোস ভঙ্গ করে কিন্তু তারা সৌরবর্ষ অনুসারে পুণ্যের গণনা করে। তাই; কোন চাঁদ দ্বারা তারাবিহ, রোজা, ফেতরা, ঈদ, সাহরি ও ইফতার করবেন সিদ্ধান্ত আপনার।