ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় লবণ খনি সমৃদ্ধ শহর সলেদারে মস্কো সমর্থিত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে জেলেনস্কির যোদ্ধারা। এ বিষয়ে শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, তুমুল লড়াইয়ের কবলে পড়ে সেখানে শিশুসহ পাঁচ শতাধিক বেসামরিক নাগরিক আটকা পড়েছেন।
সলেদার নিয়ন্ত্রণে রাখাটা ইউক্রেন-রাশিয়া উভয় দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চল হওয়ায় শহরটিতে ভারী অস্ত্র নিয়ে হামলা চালাতে কিছুটা সুবিধা হচ্ছে মস্কোর বাহিনীর। উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
সলেদারের নিয়ন্ত্রণ রাখায় বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে ভার্চুয়ালি ভাষণে শহরের দুটি ইউনিটকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বিস্তারিত না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রেখেছে যোদ্ধারা। সেনারা নিজেদের অবস্থান এখনও ধরে রেখেছে।’
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ডনবাসের পূর্ব শিল্প এলাকায় সলেদার এবং পার্শ্ববর্তী শহরগুলোয় সামরিক শক্তিবৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা কতটুকু সে বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন আমাদের জ্যেষ্ঠ কমান্ডাররা। এর প্রেক্ষিতে তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে।
মস্কোর হয়ে আক্রমণের সম্মুখভাগে নেতৃত্বে দিচ্ছে আলোচিত সশস্ত্র রুশ ভাড়াটে গোষ্ঠী ওয়াগনার। যারা বাখমুতসহ বিভিন্ন শহরে ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। বিদায়ী বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ইউক্রেন যুদ্ধে আলোচনা এসেছে সশস্ত্র ভাড়াটে গোষ্ঠীটি। এর প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিন একাধিবার দাবি করেছেন, তারা সলেদারের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ইতোমধ্যে। যদিও মস্কো আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয় ঘোষণা করেনি এখনও।
ভয়াবহ লড়াই চলতে থাকায় সেখানকার সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে রয়টার্স স্বাধীনভাবে তদন্ত করতে পারেনি। ডনেস্কের গভর্নর পাভালো ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে জানিয়েছেন, সলেদারে ৫৫৯ জন বেসামরিক নাগরিক আটকা পড়েছেন। এর মধ্যে ১৫ শিশু আছে। যুদ্ধ শুরুর আগে শহরটিতে ১০ হাজার মানুষ ছিল। যাদের কেউকেই সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। ঝুঁকির কারণে বেশিরভাগ নিজ থেকেই চলে গেছে।
সলেদারের বেশ কিছু ফুটেজ রয়টার্সের হাতে এসেছে। তাতে দেখা গেছে, সেখানকার হাসপাতাল, সড়ক, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অবকাঠামো, ধ্বংস হয়ে গেছে রুশ হামলায়। সড়কে গাছ ভেঙে পড়ে আছে। পথে বেসামরিক বাসিন্দাদের দেখা পাওয়া কঠিন।
শহরের বাইরে থাকা ২৪ বছর বয়সী এক ইউক্রেনীয় সেনা বলেন, ‘পরিস্থিতি কঠিন কিন্তু স্থিতিশীল। আমরা শত্রুকে আটকে রাখছি… আমরা পাল্টা লড়াই করছি।’
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, সলেডারে রাশিয়ার বিজয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তারা শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছে কিনা এ নিয়ে মন্তব্য করেনি কেউ।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে তার বাহিনী। প্রথম দিকে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে মস্কোর কিছু সফলতা আসলেও তার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেনি। সূত্র: রয়টার্স