তাকসিম এ খানের আমেরিকায় পাচারকৃত বিপুল সম্পদ নিয়ে কথা হচ্ছে৷ বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ ধনী ব্যক্তির নাম সার্চ দিন৷ বিভিন্ন রকমের ১০ জনের নাম পাবেন৷ নামের ভিন্নতা থাকলেও একটা বিষয়ে মিল পাবেন আর তা হল রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা৷ রাজনৈতিক শীর্ষ দুই পরিবারের দুজনের নাম পাবেন৷ এর বাইরে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের নাম পাবেন৷ তিনি বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের না হলেও আগের ক্ষমতাসীন দলের৷ বাকিরা সবাই বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের সাথে সম্পৃক্ত৷ ওয়াসার এমডির লুটপাটের বিষয়টা অনুমিতই ছিল৷ তাকে নিয়ে বহু সংবাদই পত্রিকায় এসেছে৷ আমাদের মিডিয়া কর্মীদের অনুসন্ধানে সীমাহীন সীমাবদ্ধতায় সবটা আসেনি৷
টাকা লুটপাটে দেশে দারিদ্রতা ও বৈষম্য বাড়িয়ে দেয়৷ কিন্তু সেই টাকা যখন পাচার হয়ে যায় তখন রাষ্ট্রের আরো বহুমাত্রিক ক্ষতি হয়৷ যেমন- রিজার্ভও কমে যায়, শিল্প-বাণিজ্যের বিকাশ ঘটে না, মেধা পাচার হয় ইত্যাদি৷ দুর্নীতিবাজরা জানেন যে, লুটের টাকা দেশে রাখলে ক্ষমতা বদল হলে ঝামেলায় পড়তেই হবে— জেলে যেতে হবে ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত হবে৷ তাই তারা টাকা পাচারই করে৷ প্রথমে বেগমপল্লীতে নিজের বেগম ও সন্তানদের পাঠিয়ে দেয়৷ দেশে জড়িয়ে পড়ে পরকীয়ায় কোন সুন্দরী তরুণীর সাথে৷ তখন ভিন্ন দেশে নতুন বাড়ির দরকার পড়ে নতুন উপপত্নীকে নিয়ে পালানোর জন্য৷ যারা বেগমপল্লীতে স্ত্রীকে পাঠিয়েছেন তাদের সবারই নাকি দেশে এক বা একাধীক রক্ষিতা রয়েছে! ফলে দুর্নীতি তাদের শেষ পর্যন্ত করতেই হয়৷
একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রধান নির্বাহীর বক্তব্য শুনছিলাম৷ তিনি তার কর্মীদের বললেন, ‘যারা নিজেরা খেতে পারে না তারা অন্যদেরও খাওয়াতে পারে না৷ আপনাদের মধ্যে যারা দুর্নীতি করেন না তারা চাকরি ছেড়ে দিয়ে তাবলিগে চলে যান৷ প্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রেখে দুর্নীতি করেন৷ নিজে ১০ টাকা খান আর খেয়াল রাখেন খাওয়ার জন্য যাতে প্রতিষ্ঠান বেঁচে থাকে৷ আমি দেশে কোন সম্পদ করিনি৷ সবই বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর৷ এবার অনুমান করুন ব্যাংকে আমার কত টাকা আছে?’ কেউ তাঁর প্রশ্নের জবাব দেয়নি৷ এরপর বহুবারই পত্রিকায় তার নাম এসেছে৷ যেদিন দুদক তাকে ধরতে রওনা দেন ঠিক তখনি সে অফিস ফেলে মালেশিয়ায় যেতে এয়ারপোর্টে রওনা দেয়৷ সাথে নিয়ে যায় তার মামীকে যার সাথে তার পরকীয়া প্রেম ছিল৷ কিন্তু তার স্ত্রী-সন্তানদের আগেই পাঠিয়েছিলেন কানাডাতে৷
এই দুর্নীতিবাজরা সরকারী দলকেও শেষ পর্যন্ত সাপোর্ট দেয় না৷ দল এক সময় তাদের কাছে দায় হয়ে উঠে৷ তারা সম্পর্ক ছিন্নই করে৷ আজিজ খান সাহেবরা আরো চতুর৷ তারা আগেই সিংগাপুরের নাগরিকত্ব নিয়ে ও অবস্থান করে বাংলাদেশে ব্যবসা করছে৷ তাকসিম এ খান আমেরিকায় বসে চাকরি করার আবদার করেছিল ওই কারণেই৷ শেষে যদি পালানোর সময় না পায় তাহলে বিপদ হবে৷ তাকসিমও ওসি প্রদীপের মতোই দাবি করেছে, আমেরিকায় স্ত্রীর টাকায় বাড়ি করেছে৷ তিনি ধুয়া তুলসী পাতা!
দুর্নীতিবাজদের স্ত্রীদের কাছে আলাদীনের একটা করে চেরাগ আছে!
বেসিক ব্যাংকের শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে দেখেছি৷ তার লুটপাটের ধকল এখনো ব্যাংকটি কাটিয়ে উঠতে পারেনি৷ তার মালিকানাধীন অনেকগুলো জাহাজ সমুদ্রে ভাসছে কিন্তু লুটপাট করে তিনি ব্যাংকটিকে ডুবিয়ে গেছেন৷ এবারও ব্যাংকটি লোকসান দিয়েছে৷ রাজনৈতিক শীল্ড থাকায় শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের ধরা যাচ্ছে না৷ সুযোগে দুর্নীতিবাজরাও সবসময় সরকারি দল করে যাচ্ছে৷ এখন সুযোগ আছে এমন প্রায় সকলেই দুর্নীতি করেই যাচ্ছে৷ রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া এদের ধরাও অসম্ভব৷ এভাবে চললে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করা কোনদিনই সম্ভব হবে না৷
কলমে- মুজিব রহমান