সাদা বলের খেলার পর লাল বলের ক্রিকেটেও আক্ষেপ তৈরি করে হারলো বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষও সেই ভারতীয় দল। মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট জয়ের সম্ভাবনা জাগালেও শেষ পর্যন্ত আইয়ার-অশ্বিনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৩ উইকেটে হারের তিক্ত স্বাদ নিতে হয়েছে। তাতে দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০ তে হোওয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ।
ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্ট জিততে গতকালকেই বাংলাদেশ মঞ্চটা প্রস্তুত করেছিল। ১৪৫ রানের লক্ষ্য দিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৭ রানে তুলে নিতে পারে ভারতের ৪ উইকেট। চতুর্থ দিন সকালেও জয়দেব উনাদকাট, ঋষভ পান্ত, অক্ষর প্যাটেলকে ফিরিয়ে পথের কাঁটাগুলো সরাতে পেরেছে। কিন্তু জয়ের পথে বাংলাদেশের বাধা হয়ে দাঁড়ায় শ্রেয়াস আইয়ার-রবিচন্দ্রন অশ্বিন জুটি। অষ্টম উইকেটে তাদের অবিচ্ছিন্ন ৭১ রানের জুটিই ভারতকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছে।
অথচ ম্যাচ জেতানো অশ্বিন ৩৩.৪ ওভারেই ফিরতে পারতেন। মিরাজের বলে শর্ট লেগে তার ক্যাচ ফেলে দেন মুমিনুল। তখন অশ্বিন এক রানে ব্যাট করছিলেন! এই ক্যাচ মিসই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ শিবিরে আক্ষেপের জন্ম দিয়েছে। তাহলে ম্যাচের গতিপ্রকৃতি ভিন্ন হলেও হতে পারতো। তাছাড়া খালেদ আহমেদের বলে স্লিপেও সুযোগ এসেছিল। কাঙ্ক্ষিত সেই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে না পারায় মোমেন্টাম আর ধরে রাখতে পারেনি স্বাগতিকরা।
‘জীবন’ পাওয়া এই অশ্বিন শেষটায় ঝড়ো গতিতে খেলে অপরাজিত ছিলেন ৪২ রানে। তাতে ছিল ৪টি চার ও ১ টি ছয়। আইয়ার অপরাজিত থাকেন ২৯ রানে।
বল হাতে মোট ৬ উইকেট আর শেষটায় ম্যাচ জেতানো ইনিংসের জন্য ম্যাচসেরা হয়েছেন অশ্বিন। ২০২ রান করে সিরিজসেরা শ্রেয়াস আইয়ার।
মোমেন্টাম হাতে পাওয়ার সুযোগটা চতুর্থ দিন সকালেই এনে দিয়েছিলেন সাকিব। দিনের দ্বিতীয় ওভারে দারুণ এক ডেলিভারিতে এলবিডাব্লিউ করে টেলএন্ডার হিসেবে নামা জয়দেব উনাদকাটকে বিদায় দিয়েছেন। তার পরেও বোলার হিসেবে নামা উনাদকাট ১৬ বলে করতে পেরেছেন ১৩ রান।
তার পর প্রতিষ্ঠিত ব্যাটার হিসেবে পান্তকে নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ ছিল বাংলাদেশ দলে। তিনি যে পথের কাঁটা হয়ে উঠতে পারেন, সেটা দেখা গেছে প্রথম ইনিংসেই। এবার অবশ্য তাকে কাঁটা হতে দেননি মিরাজ। এলবিডাব্লিউতে সাজঘরে পাঠিয়ে ভারতকে আরও কোণঠাসা করে ছেড়েছেন। পান্ত ফেরার আগে করেছেন ৯ রান। ততক্ষণে একপ্রান্ত নড়বড়ে হয়ে পড়লেও অক্ষর অপরপ্রান্ত আগলে খেলছিলেন। ভালো ব্যাটিংয়ে ভয় ছড়াচ্ছিলেন স্বাগতিক শিবিরে। ৩৪ রান করা এই ব্যাটারকে মিরাজ বোল্ড করে দিলে ম্যাচটা পুরোপুরি হেলে পড়ে বাংলাদেশের দিকে। এই উইকেট নিয়েই মিরাজ পূরণ করেন মূল্যবান ফাইফার তথা পঞ্চম উইকেট। তার পরই প্রতিরোধ গড়ে খেলেছেন শ্রেয়াস আইয়ার- রবিচন্দ্রন অশ্বিন। অষ্টম উইকেটের এই জুটিতেই ভারতীয় দল ৪৭ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়েই জয় নিশ্চিত করেছে।
দারুণ বোলিংয়ে জয়ের সম্ভাবনা জাগাতে অবদান রাখেন মিরাজ। ৬৩ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট। ৫০ রানে দুটি নিয়েছেন সাকিব।
অবশ্য যেভাবে চাপ তৈরি করা গেছে সেটি আরও বাড়তো লক্ষ্যটা বড় হলে। কিন্তু প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাটারদের ব্যর্থতায় বড় সংগ্রহ দাঁড় করাতে পারেনি সাকিব আল হাসানের দল। কয়েক দফা জীবন পাওয়া লিটনের হাফসেঞ্চুরি ও তাসকিনের দায়িত্বশীল ইনিংসে ২৩১ রান করতে পেরেছে। তাতে ১৪৫ রানের লক্ষ্য পায় সফরকারী।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৭৩.৫ ওভারে ২২৭ (মুমিনুল ৮৪, মুশফিক ২৬, লিটন ২৫, শান্ত ২৪; উমেশ ৪/২৫, অশ্বিন ৪/৭১, উনাদকাট ২/৫০)।
ভারত প্রথম ইনিংসে ৮৬.৩ ওভারে ৩১৪ (পান্ত ৯৩, আইয়ার ৮৭; তাইজুল ৪/৭৪, সাকিব ৪/৭৯),
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ৭০.২ ওভারে ২৩১ (জাকির ৫১, লিটন ৭৩, তাসকিন ৩১*, সোহান ৩১; অক্ষর ৩/৬৮, সিরাজ ২/৪১, অশ্বিন ২/৬৬)।
ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৭ ওভারে ১৪৫/৭ ( অক্ষর ৩৪, আইয়ার ২৯, অশ্বিন ৪২; মিরাজ ৫/৬৩, সাকিব ২/৫০)।
লক্ষ্য: ১৪৫
ফল: ভারত ৩ উইকেটে জয়ী।