ইউক্রেনে ৯ মাস ধরে চলমান যুদ্ধের রুশ তেল নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছে ইউরোপীয় দেশগুলো। রুশ তেলের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে তারা আমদানি বন্ধ করার পথে যেতে পারছিল না, আবার আমদানি জারি রাখলে রুশ কোষাগারে তাদের অর্থ জমা হচ্ছিল। যা ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যয় করবে রাশিয়া। এমন অবস্থায় রুশ গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বিকল্প উৎসের সন্ধানে নামে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট-৭ অইউরোপীয় দেশগুলোকে সমুদ্রপথে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানির সুযোগ রাখলেও মূল্য বেঁধে দিয়েছে। রাশিয়া বলেছে, তারা এই বেঁধে দেওয়া মূল্য মানবে না। ফলে তেলের বাজারে আবারও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
ইইউ ও জি-৭ রাশিয়ার এক ব্যারেল তেলের সর্বোচ্চ দাম ৬০ ডলার নির্ধারণ করে দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। যদিও ইউক্রেন চেয়েছিল রুশ তেলের মূল্য ৩০ ডলার বেঁধে দেওয়া হোক। চলতি সপ্তাহ থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো জ্বালানির বিশ্ববাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে রুশ অর্থনীতিকে আঘাত করা। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী রাশিয়ার কাছ থেকে অশোধিত তেল কেনার জন্য প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলারের বেশি দাম দেওয়া যাবে না। শুক্রবার প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত রুশ তেলের মূল্য ছিল ৬৭ ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন বলেছেন, রাশিয়ার তেলের সর্বোচ্চ মূল্য বেঁধে দেওয়ার ফল তাৎক্ষণিকভাবেই মস্কোর রাজস্বের ওপর চাপ পড়বে।
এই সিদ্ধান্তের পর ইইউ ও জি-সেভেনের প্রতি হুঁশিয়ারি জানিয়েছে মস্কো। রাশিয়া বলেছে, কোনও দেশ এই বেঁধে মূল্যের ঊর্ধ্বসীমা কার্যকর করলে তাদেরকে তেল পাঠাবে না।
রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্ন-কক্ষের বিদেশনীতি বিষয়ক কমিটির প্রধান লিওনিদ স্লাটস্কি বলেন, এই ঊর্ধ্বসীমা কার্যকর করলে ইইউ নিজের জ্বালানি নিরাপত্তাকেই হুমকির মুখে ফেলবে।
৫ ডিসেম্বর থেকে রাশিয়ার ওপর আরও একটি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে। এর ফলে ইইউ-এর কোনও দেশ সমুদ্রপথে রাশিয়া অশোধিত তেল আমদানি করতে পারবে না।
রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিন শনিবার বলেছে, এই ঊর্ধ্বসীমা তারা মানবে না। কীভাবে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, জি-সেভেন, ইইউ, অস্ট্রেলিয়ার শুক্রবারের ঘোষণা নিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছে মস্কো।
ভিয়েনায় মস্কোর রাষ্ট্রদূত মিখাইল উলিয়ানভ বলেছেন, এই বছর থেকে ইউরোপকে রাশিয়ার তেল ছাড়া চলতে হবে।
টেলিগ্রামে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে এটিকে ‘বিপজ্জনক’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে রাশিয়া নিজের তেল বিক্রির জন্য নতুন ক্রেতা খুঁজবে।
তিনি বলেছেন, এমন সিদ্ধান্তের ফলে অনিশ্চয়তা বাড়বে এবং ভোক্তাদের কাঁচামালের জন্য অধিক ব্যয় করতে হবে।
নৌপরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত ও চীনের কাছে আরও বেশি অশোধিত তেল রফতানি জন্য রাশিয়া শতাধিক জাহাজের ব্যবস্থা করেছে। সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি