ইরানের শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ভাগ্নি ফরিদেহ মোরাদখানিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এক ভিডিও বার্তায় ইরান সরকারকে ‘খুনি ও শিশুহত্যাকারী শাসক’ উল্লেখ করে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানানোর পর তাকে গ্রেপ্তার করা হলো। মিডলইস্ট মনিটরের এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছে।
ইরানে চলমান হিজাববিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ হিসেবে পরিচিত ফরিদেহ মোরাদখানি। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই দেশটির সরকারের সমালোচনায় সরব। তার ভাই মাহমুদ এক টুইটে জানিয়েছেন, ফরিদেহ মোরাদখানিকে বুধবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সম্প্রতি ইউটিউবে শেয়ার করা এক ভিডিওতে ফরিদেহ মোরাদখানি বলেন, ‘হে মুক্ত পৃথিবীর মানুষজন, আমাদের পক্ষে থাকুন এবং আপনাদের দেশের সরকারকে বলুন এই খুনী ও শিশুহত্যাকারী শাসকদের যেন তারা সমর্থন দেওয়া বন্ধ করে। ধর্মীয় নীতি-নৈতিকতার প্রতি তাদের কোনো আনুগত্য নেই এবং ক্ষমতা ধরে রাখা ও বলপ্রয়োগ ব্যতীত তারা আর কিছুই জানে না।’
ফরিদেহ মোরাদখানির বাবা আলি মোরাদখানি আরাঙ্গেহ ছিলেন একজন শিয়াপন্থী মুসলিম নেতা। আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির বোনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। সেই সূত্রে আলি মোরাদখানি আয়াতুল্লাহ আলি খোমেনির ভগ্নিপতি।
তবে ইরানে ক্ষমতাসীন ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে রাজনৈতিক ও আদর্শগত বিরোধ ছিল তার। এ কারণে দেশের ভেতরেই একরকম নির্বাসিত জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। কয়েক বছর আগে তেহরানে মৃত্যু হয় আলি মোরাদখানি। ফরিদেহ মোরাদখানি পেশায় একজন প্রকৌশলী। তবে তিনি একজন সক্রিয় মানবাধিকারকর্মীও।
গত সেপ্টেম্বরে হিজাব ঠিকমতো না পরা ও বোরকা পরিধান না করায় ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার হন ২২ বছরের তরুণী মাশা আমিনি। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।
মাশা আমিনির মৃত্যুর পরদিন থেকে এক অভূতপূর্ব বিক্ষোভ শুরু হয় ইরানে। প্রথম পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা মাশাকে গ্রেপ্তারকারী পুলিশ সদস্যদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানালেও খুব দ্রুত সেই বিক্ষোভ রূপ নেয় সরকারবিরোধী আন্দোলনে।
ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠীও অবশ্য শুরু থেকেই অত্যন্ত কঠোরভাবে এই বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করছে, কিন্তু এখনও সফল হতে পারেনি। হারানা নিউজ এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, গত দু’মাসে বিক্ষোভে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ইরানে খুন হয়েছেন সাড়ে ৪শ’রও বেশি মানুষ।