ইউক্রেনীয় জ্বালানি অবকাঠামোতে রাশিয়ার হামলা গণহত্যার সমান বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। দেশটির দাবি, প্রধান প্রধান স্থাপনায় রাশিয়ার এই হামলা ‘সমগ্র ইউক্রেনীয় জাতিকে’ লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে এবং এটি কিয়েভকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করার একটি প্রচেষ্টা।
রোববার (২৭ নভেম্বর) ইউক্রেনের প্রসিকিউটর-জেনারেল একথা বলেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণহত্যা শব্দটি একদল লোককে নিশ্চিহ্ন করার প্রচেষ্টাকে বোঝায়। তবে রাশিয়া এমন কোনো লক্ষ্যে হামলা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে থাকে।
মূলত রাশিয়ার ক্রমাগত হামলার কারণে ইউক্রেনজুড়ে লাখ লাখ মানুষ হিমায়িত আবহাওয়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া বাড়িগুলোতে আবারও সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়া চেষ্টা চলছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মাসের শুরুর দিকে ইউক্রেনীয় সেনারা খেরসন শহরটি পুনরুদ্ধারের পর ওই এলাকায় এখন সম্পূর্ণরূপে পুনরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির তথ্য অনুসারে, রাজধানী কিয়েভ এবং দেশের অন্য আরও ১৪টি অঞ্চলের বাসিন্দারা বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়ে বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে।
জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশন প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুসারে, জাতীয়, জাতিগত, বর্ণ বা ধর্মীয় কোনও গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার অভিপ্রায়কে গণহত্যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। এমনকি গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করা বা গুরুতর ক্ষতি করা – বা জোর করে তাদের সন্তানদের অন্যত্র স্থানান্তর করাও গণহত্যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হতে পারে।
বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনীয় প্রসিকিউটর-জেনারেল অ্যান্ড্রি কোস্টিন বলেছেন, এনার্জি গ্রিডে হামলার পাশাপাশি ১১ হাজার ইউক্রেনীয় শিশুকে জোরপূর্বক রাশিয়ায় নির্বাসিত করা হয়েছিল।
কোস্টিন বলেছেন, চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে তার কার্যালয় ৪৯ হাজারেরও বেশি যুদ্ধাপরাধ এবং আগ্রাসনের অপরাধের প্রতিবেদন তদন্ত করছে।
তার দাবি, রাশিয়ার বাহিনীর দখল করা প্রতিটি ইউক্রেনীয় বসতিতে ‘একই ধরনের আচরণ’ দেখা যাচ্ছে।
জেনেভা কনভেনশনসহ আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে নির্ধারিত যুদ্ধের তথাকথিত ‘নিয়ম’ লঙ্ঘনকে যুদ্ধাপরাধ বলে মনে করা হয়। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে, কনভেনশনগুলোর শর্ত অনুযায়ী, যুদ্ধে মধ্যেও বেসামরিক নাগরিকদের অবশ্যই সুরক্ষিত রাখতে হবে। তবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বারবার এই নিয়ম ভাঙার অভিযোগ উঠেছে।
গত সপ্তাহান্তে ডিনিপ্রোতে আবাসিক ভবনগুলোতে গোলাবর্ষণে একজন নিহত এবং ১৩ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া চলতি মাসের শুরুতে রাশিয়ান সৈন্যরা দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে খেরসনে হামলায় ৩২ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সংবাদমাধ্যম বলছে, রাশিয়া সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। মূলত, ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সাথে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী ইউরোপের বৃহত্তম রেল ও সড়ক সেতুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে গত ৮ অক্টোবর থেকে ইউক্রেনের জ্বালানি নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামোগুলোতে আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া।
এর মধ্যে গত মাসে অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের বৃহত্তম বন্দরনগরী সেভাস্তোপলের কাছে কৃষ্ণ সাগরে রুশ নৌবহরে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর বেশ কয়েক দফায় ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনা লক্ষ্য করে রাশিয়া কার্যত ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টি চালায়।
বিবিসি বলছে, যুদ্ধ শুরুর পর সম্প্রতি ইউক্রেনে সবচেয়ে ভারী বিমান হামলা চালায় রাশিয়া। ওই হামলায়ও ইউক্রেনীয় জ্বালানি অবকাঠামো এবং বেসামরিক ভবনগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
মূলত সম্মুখসারির যুদ্ধে ব্যর্থতার পর রাশিয়ার সাম্প্রতিক এসব হামলা একটি বিস্তৃত কৌশলের অংশ এবং শীত শুরু হওয়ার সাথে সাথে ইউক্রেনে রুশ এই কৌশলের প্রভাব আরও তীব্রভাবে অনুভূত হতে শুরু করেছে।