প্রথম ম্যাচে কানাডাকে ১-০ গোলে হারানোয় মরক্কোর বিপক্ষে জিতলেই শেষ ষোলোতে জায়গা করে নেওয়ার হাতছানি ছিল বেলজিয়ামের সামনে। তবে আফ্রিকান দেশটির বিরুদ্ধে পুরো ম্যাচে তেমন সুবিধা করতে পারেনি গতবারের সেমিফাইলানিস্টরা। উল্টো বেলজিয়ানদের ১-০ গোলে হারিয়ে দিয়ে কাতার বিশ্বকাপে আরেকটি অঘটনের জন্ম দিলো মরক্কো।
রবিবার (২৭ নভেম্বর) কাতারের দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে বেলজিয়ামের বিপক্ষে মরক্কোর একাদশে ছিলেন গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো। তবে জাতীয় সঙ্গীত পর্বের পরেই কোচের দিকে তিনি ইশারায় নিজের চোখের সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করেন বোনো। শেষ পর্যন্ত তার পরিবর্তে ইরানের গোলবার সামলাতে মাঠে নামেন মুনির এল কাজুই।
প্রথমার্ধে বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকলেও আক্রমণে ধারহীনই ছিল বেলজিয়াম। যদিও ম্যাচের পঞ্চম মিনিটে গোলের প্রথম সুযোগ পেয়েছিল বেলজিয়ামই। কানাডার বিপক্ষে গোল পেলেও হ্যাজার্ড ভাইদের কাছ থেকে বল পেয়ে এবার গোল করতে ব্যর্থ হন মিকি বাতশুয়াই। ১৯ মিনিটে টমাস মুনিয়েরের শটটি ঠেকাতে বেগ পেতে হয়নি মুনির এল কাজুইকে। ৩৩ মিনিটেও তিনি মাস মুইলারের নেওয়া একটি প্রাণহীন শট আটকে দেন।
খেলার ধারার বিপরীতে ৩৫ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল মরক্কো। তবে বেলজিয়ান ডিফেন্সকে ফাঁকি দিয়ে ডান দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকলেও গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন আশরাফ হাকিমি। ৩৯ মিনিটে বেলজিয়ামের কেভিন ডি ব্রুইনের ফ্রি-কিক মরক্কোর গোলবারের জালের ওপরের অংশ কাঁপিয়ে বাইরে চলে যায়।
মধ্যবিরতির একদম আগ মুহূর্তে মরক্কোর হাকিম জিয়েখের নেওয়া ফ্রি-কিক বেলজিয়াম গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়াকে ফাঁকি দিয়ে জালে আশ্রয় নেয়। তবে বেলজিয়ানদের আবেদনে সাড়া দিয়ে অফসাইডের কারণে ভিএআরে (ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি) গোলটি বাতিল হয়ে যায়। ফলে গোলশূন্যভাবেই শেষ হয় প্রথমার্ধ।
দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ২০-২২ মিনিটে দুই দলের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ম্যাচ জমে ওঠে। ৫২ মিনিটে হ্যাজার্ডের শট কর্নারের বিনিময়ে রুখে দেন মুনির এল কাজুই। ৬৫ মিনিটে ডি-বক্সের মাথা থেকে বদলি মিডফিল্ডার ড্রিয়েস মার্টিনের নেওয়া শটও ধরে ফেলেন মরক্কোর গোলরক্ষক।
৬৮ মিনিটে মিডফিল্ডার সেলিমের পরিবর্তে মাঠে নামেন আবদেলহামিদ সাবিরি। পাঁচ মিনিট পরই হাকিম জিয়েখের নেওয়া কার্বন কপির ফ্রি-কিক থেকে বল জালে জড়ান মরক্কোর বদলি ফরোয়ার্ড। তবে এবার আর আফ্রিকান দেশটির গোল বাতিল হয়নি।
পিছিয়ে পড়ে যেন আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠে বেলজিয়াম। গোলের জন্য মরিয়া বেলজিয়ানর ৮১ মিনিটে নামিয়ে দেয় চোটগ্রস্ত স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকুকেও। পরের মিনিটেই কর্নার থেকে জ্যান ভের্টঙ্গেনের নেওয়া হেড মরক্কোর গোলবার ফাঁকি দিয়ে বাইরে চলে যায়। সেই সঙ্গে বেলজিয়ামের ম্যাচে ফেরার আশাটাও যেন চলে গেলো। দ্বিতীয়ার্ধের ইনজুরি টাইমের দ্বিতীয় মিনিটে হাকিম জিয়েখের কাছ থেকে বল জালে জড়িয়ে মরোক্কানদের লিড দ্বিগুণ করেন জাকারিয়া আবুখলাল।
বেলজিয়ামকে হারানোর মাধ্যমে দীর্ঘ ২৪ বছর পর ফিফা বিশ্বকাপের মূলপর্বে জয়ের মুখ দেখলো মরোক্কো। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ফ্রান্সে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল তারা। অন্যদিকে, বিশ্বকাপে নিজেদের ৫০তম ম্যাচে আসা এই হারের মাধ্যমে গ্রুপপর্বে প্রথমবারের মতো আফ্রিকানদের কাছে পরাজিত হয়েছে বেলজিয়াম।