বরিশালে ডায়রিয়া পরিস্থিতি ‘মারাত্মক’ রুপ ধারণ করেছে। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ৪০ উপজেলার ১৮ টি উপজেলায় এই ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা এর জন্য পানির দূষণ কে দায়ী করেছে।
আইইডিসিআর থেকে প্রেরিত একটি পর্যবেক্ষণ টিম পানিতে‘ ইকোলাই’ নামে এক কলেরার জীবাণু খুঁজে পেয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। এদিকে পরিস্থিতি যখন ব্যাপক ভাবে খারাপের দিকে তখন বাজার থেকে আইভি ফ্লুয়িড হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে। সরকারী পর্যায়েও প্রয়োজনীয় এই স্যালাইন পর্যাপ্ত না থাকায় চিকিৎসা সেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিস সূত্রে জানা যায়, বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় গত ৩ মাসে মোট ৩২১৮৩ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত ১ মাসে ১৭ ৬৭২ জন আক্রান্ত হয়েছে। গত ১ সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন ১১০০ রোগীর মত ভর্তি হলেও বর্তমানে সেটি ১৫০০ এর বেশী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।জেলা হিসেবে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি ভোলা জেলায়। ভোলায় এই বছরের প্রথম থেকে আজ পযন্ত ৮০৯০ জন ভর্তি হয়েছে, যা গত ১মাসে ছিল ৪২৫২ জন।
আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে গত একসপ্তাহের মধ্যে বরিশালের বাকেরগঞ্জে ৪ জন, বরগুনায় ২ জন ও পটুয়াখালীতে গত সোমবার ২ জন মারা গেছে, বলে নিশ্চিত করেছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিসের কার্যালয়।
হঠাৎ এই খারাপ পরিস্থিতির কারন সম্পর্কে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, নদনদীতে পানির দূষণ বেড়েছে, এর ফলে পানিবাহিত হয়ে এসব রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে করোনার একটি উপসর্গ ডায়রিয়া হলেও আমরা এখনও নিশ্চিত নই যে করোনার কারনেই এটি বাড়ছে। এ পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৩৬৩২, এর মধ্যে সেরে উঠেছেন ২৪৪ জন বলে তিনি জানান।
এদিকে সহকারী পরিচালক, ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল জানান, আইইডিসিআর থেকে প্রেরিত ২ টি টিম ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের মলে ‘ব্যাকটিরিয়ার জীবাণু ইকোলাই’ পেয়েছে। এটি পানিবাহিত। ধারনা করা হচ্ছে পানিবাহিত দূষনের কারনেই ডায়রিয়ার এই বিস্তার।
এদিকে বরিশালের ৬ জেলায় এই মুহুর্তে প্রায় লক্ষাধিক স্যালাইন প্যাকেট এর চাহিদা থাকলেও স্যালাইন মজুদ রয়েছে মাত্র কয়েক হাজার বলে নিশ্চিত করেছে
আমাদের এই বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে চাহিদা কয়েক হুন বেড়ে গেছে। একজন রোগীর অনেক সময় ৫০ লিটার পর্যন্ত আইভি ফ্লুয়িড এর চাহিদা থাকতে পারে, ফলে চাহিদা ও ডিমান্ড এর ফারাক কয়েক গুন। এর ফলে পরিস্থিতি কিছুটা সংকটে রয়েছে। তবে আশা করছি এটা কেটে যাবে।
তিনি বলেন বেসরকারী ভাবে যাতে স্যালাইন সংকট না থাকে সেজন্য ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বরিশালের বাকেরগঞ্চের উপশম ফার্মেসীর মালিক গৌতম বিশ্বাস জানান, গত ১ সপ্তাহ ধরে বাজার থেকে বিভিন্ন কোম্পানির আইভি ফ্লুইড উধাও হয়ে গেছে। যারা বাসায় বসে চিকিৎসা নেবে তারা বাধ্য হয়ে হাসপাতালের বারান্দায় গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে।
বরিশাল নগরীরর হাবিব মেডিকেল হল এর স্বত্তাধিকারী অরুন ঘোষ জানান, বেশী টাকা দিয়েও স্যালাই পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিন অন্তত অর্ধশত মানুষ স্যালাইন এর প্রয়োজনে আসছে।
বরিশালে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির সিনিয়র রিজিওনাল সেলস এক্সিউটিভ জানান, এই মহুর্তে ৫০ হাজারের বেশী স্যালাই ব্যাগ জরুরী হলেও তারা কয়েকটি কোম্পনি মিলেও তার অর্ধেক সরবরাহ করতে পারছিনা।
তিনি জানান, সাধারণভাবে আমরা ২ হাজার ব্যাগ স্যালাইন এই মার্কেটে সরবরাহ করে থাকি। হঠাৎ করে ডিমান্ড কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
বরিশাল সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল জানান, এখানে আইভি ফ্লুইড এর একটি সংকট রয়েছে। আমরা ২০ হাজার চাহিদাপত্র দিয়েছি, দেখি কতটা পাই।
ভোলা জেলার সিভিল সার্জন জানান, গড়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী আসছে, এখানে যা আইভি ফ্লুইড রয়েছে তা দিয়ে মাত্র ১০/১৫ দিন চলতে পারে।
আগামীকাল ৩৫ হাজার আাইভি ফ্লুইড পাওয়া গেলে সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে জানান সহকারি পরিচালক , বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিসের কার্যালয়।