জাপানের স্কুল বা কিন্ডারগার্টেনগুলোতে শিশুদের কোনো কিছু খাওয়ার আগে ‘ইত্তাদাকিমাস’ শেখানো হয়। ‘ইত্তাদাকিমাস’ জাপানি ভাষার একটা শব্দ। শব্দটার অর্থ হলো, আপনি যে খাবারটা খাচ্ছেন, সেটার বীজ রোপণ- চাষাবাদ করা থেকে শুরু করে সমস্ত প্রস্তুতি এবং পরিবেশন পর্বসহ আপনার সামনে আহার হয়ে আসা পর্যন্ত যাঁরা যাঁরা এটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা।
সোজাকথা হলো, যাঁদের শ্রম-ঘামের ফসলে আমরা প্রতিদিন খেয়ে-পরে বেঁচে আছি, তাঁদের কাছে আসলে আমাদের অনেক ঋণ। তাঁদের প্রতি সেই ঋণ স্বীকার করা। এবং তাঁদের প্রতি যে, মানুষ হিসেবে আমাদেরও কিছু দায়িত্ব – কর্তব্য আছে সেটা স্মরণ করিয়ে দেওয়া।
স্কুলে ও পরিবারে এমন মহান শিক্ষা পেয়ে যে দেশের শিশুরা বেড়ে ওঠে তাঁরা কি তাঁদের চারপাশের মানুষের সঙ্গে কখনো খারাপ আচরণ করতে পারে? পারে না। তাই তো জাপান জাতি হিসেবে নৈতিকতা ও মানবিক আচরণ- সংস্কৃতির দিক থেকে বিশ্বের অনেক জাতির চেয়েই এগিয়ে।
আমাদের দেশের সংস্কৃতিতেও খাবার গ্রহণের আগে নিজ নিজ ধর্মানুসারে মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যদিয়ে স্রষ্টার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানোর নিয়ম আছে। কিন্তু ভেবে দেখুন তো, অনেক দূরের অচেনা কাল্পনিক ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা আর আমাদের চারপাশের বাস্তব উৎপাদক শক্তি তথা কৃষক- শ্রমিকশ্রেণী যাঁরা আমাদের প্রতিদিনের খাবারসহ জীবনযাপনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যোগান দিচ্ছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোটা ভালো কি না? আপনার বিচারে কোনটা বেশি উত্তম বা গুরুত্বপূর্ণ? মানবিক সমাজ গঠনের প্রয়োজনেই বা কোনটা বেশি জরুরি? আমরাও যেন আমাদের শিশুদের নিজনিজ ভাষায় ‘ইত্তাদাকিমাস’ শেখাই, তাতে সকল শিশুরাই সুন্দর শিক্ষায় সুন্দর মনের মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠবে।
কলমে: কৃষ্ণ কুমার কর্মকার
স্যোশাল মিডিয়া থেকে সংগৃহীত।