গতকাল হয়ে গেলো বিশ্বকাপের জমকালো উদ্বোধনী আসর। এই আসর প্রমাণ করলো পরিবর্তনশীল বিশ্বে টিকে থাকার লড়াইয়ে একটা সময় যেকোন ধর্ম, মত, দর্শনকে সময়ের সাথে আপস করতেই হবে। ইসলামে হারাম খেলা ফুটবল কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে উদ্বোধিত হলো বিস্ময়করভাবে।
ছবি আঁকা, প্রতিমূর্তি তৈরি করা, পুতুল বানানোকে হাজার বছর ধরে হারাম ঘোষনা করা ইসলাম আপস করলো ম্যাসকট লে’ইব তৈরি করে। কাতারি একজন মহিলা গায়ক নাম- ‘দানা- আল- ফারদান’ বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে গাইলেনও। এই বিশ্বকাপের মাধ্যমে হাজার বছর ধরে জিইয়ে থাকা অনাধুনিক, বিকাশ বিরোধী, সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতা বিরোধী ধর্মীয় কুসংস্কারগুলো মুহুর্তেই উড়ে গেলো কাতারের আকাশে মরুভূমির সন্ধ্যার বিকীর্ণ তাপের মতোই। ইসলাম তাঁর বহু বছরের পশ্চাৎপদ চিন্তাধারা বিসর্জন দিয়ে যুক্ত হলো বৈশ্বিক মঞ্চে। অনারব ও অমুসলিমদের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে যেসব ভুল ধারণা এতোদিন ছিলো তাও অনেকাংশে কমে আসবে বলে প্রতীয়মান হয়। বিশ্বায়নের এই যুগে আরবরাও বুঝতে পেরেছে অপ্রচলিত ও আদি ধ্যান ধারণা আঁকড়ে ধরে থাকলে পিছিয়ে থাকতে হবে আরো বহুবছর। সৌদির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের হাত ধরে আরবে যে বিশ্বায়নের সংস্কার শুরু হয়েছিলো কয়েক বছর আগে এই বিশ্বকাপ যেন সেখানে নতুন মাত্রা যোগ করলো।
এই বিশ্বকাপের মাধ্যমে ইসলাম ক্ষতিগ্রস্ত হবেনা বরং বৈশ্বিকভাবে মুসলিমদের গ্রহণযোগ্যতা আরো বেড়ে যাবে বলেই আশা করা যায়। বহুকাল ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের ধ্বজাধারী অনেক মাওলানারাও আর ফুটবল খেলা, সংগীত, চারুকলার বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়ে সাধারণ মুসলমানদের নিবৃত্ত করতে পারবেনা, সাধারণের সৃজনশীলতা ও বিকাশ রুখে দিতে পারবেনা। এটাই এই বিশ্বকাপ থেকে মুসলমানদের বড় পাওয়া। বহরে ব্রিটিশদের মতো আধুনিক অস্ত্র যুক্ত না করে ঘোড়া, ঢাল-তলোয়ারের উপর নির্ভর করায় উপনিবেশবাদীদের কাছে মুসলমানদের হারাতে হয়েছিলো শক্তিশালী অটোমান সাম্রাজ্য। সেই ঘটনা থেকে আরবরা শিক্ষা নিয়েছে।
আরব্য মুসলমানদের বোধোদয় হয়েছে, উপমহাদেশের মুসলমানদের বোধোদয় হবে কী?
কলমে: কাজী মোকলেসুর রহমান