ব্যতিক্রমীভাবে শুরু হয়েছে এবারের বিশ্বকাপের যাত্রা। ২০ নভেম্বর কাতারের আল-বাইত স্টেডিয়ামে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপরেই মঞ্চে দেখা যায় হলিউড অভিনেতা মর্গান ফ্রিম্যানকে। তার সঙ্গে কথোপকথনে ছিলেন গনিম আল মুফতাহ।
গনিম আল মুফতাহ সেই ইতিহাসের এক চরিত্র, যে পৃথিবীর আলো দেখেছে শরীরের নিচের অংশ ছাড়াই। বিশ্বকাপের মঞ্চে এবারই প্রথম এমন দৃশ্য দেখলো কোটি কোটি দর্শক।
বিরল “কাডল রিগ্রেশন সিনড্রোম”- রোগে আক্রান্ত গনিম আল মুফতাহ। ৬০ হাজার শিশুর মধ্যে প্রতি একজন এ রোগ নিয়ে জন্ম নেয়। এই রোগে আক্রান্তদের মেরুদণ্ডের নিচের অংশ বাড়ে না।
গনিম জন্ম নেওয়ার সময় চিকিৎসক বলেছিলেন, সে সর্বোচ্চ ১৫ বছর বাঁচতে পারে। কিন্তু চিকিৎসকের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার পরও কেটে গেছে আরও ৫ বছর।
মরগান ফ্রিম্যান উঠে দাঁড়িয়ে যখন হাতটা বাড়ালেন গনিম নিচ থেকে তার ডান হাতটা বাড়িয়ে দিলেন। জন্ম হলো অসাধারন এক দৃশ্যের/ টুইটার
গনিম বর্তমানে উপসাগরীয় অঞ্চলের বহু মানুষের অনুপ্রেরণা, কাতারের তরুণ প্রজন্মের আইকন! এছাড়াও তিনি কাতারের কনিষ্ঠতম উদ্যোক্তা, মানবহিতৈষী, ইউটিউবার, টিক-টকার, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী, মোটিভেশনাল স্পিকার। দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তার গল্প শুনে নিজেদের লড়াই লড়ার প্রেরণা পান।
গনিমকে স্কুলে ভর্তি করতে কষ্ট করতে হয়েছে তার মাকে। কোনো স্কুলই তাকে ভর্তি করতে চায়নি। শেষ পর্যন্ত একটি স্কুল ভর্তি করতে রাজি হলেও সেখানে তাকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খেলতে দেওয়া হতো না। এক সময় এই অচলায়তনও ভাঙে। স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে এই শরীর নিয়ে ফুটবল খেলতেন তিনি। পার্থক্য শুধু লোকে পায়ে বুট পরে, গনিমকে পরতে হতো হাতে।
গানিম আল মুফতাহ হাতের সাহায্যে চলাফেরা করেন। হাতের মাধ্যমে তিনি অনেক ধরনের কাজই করতে পারেন, এমনকি গাড়িও চালাতে পারেন! এছাড়াও সমগ্র উপসাগরীয় অঞ্চলের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জেবেল শামস-এও উঠেছেন গানিম!
ইনস্টাগ্রামে তার ৩ মিলিয়ন অনুসারী। এছাড়াও টিকটকেও তিনি বেশ জনপ্রিয়। বিশ্বকাপের মঞ্চে হাজির হওয়ার পর গানিমের খ্যাতি এখন আরও বেড়ে গেছে, ইতোমধ্যেই বিশ্বের সকল গণমাধ্যমের নজর কেড়েছেন গানিম ।
গানিম এ বছর ফিফার শুভেচ্ছা দূত নির্বাচিত হয়েছেন ।
ফিফার শুভেচ্ছা দূত হওয়ার পর এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “ফিফার শুভেচ্ছা দূত হিসেবে আমার যেটুকু ক্ষমতা আছে, তার মধ্যে থেকেই আমি মানুষকে মানবতার জন্য অন্তর্ভুক্তি, আশা, শান্তি ও ঐক্যের বার্তা দিতে চাই।”
কাতার বিশ্বকাপের মাঠের লড়াইয়ে বিজয়ী দেখা যাবে ১৮ ডিসেম্বর ফাইনালের পর। আর বিশ্বকাপ উদ্বোধনের দিনই মাঠের বাইরের বিজয়ীকে উপহার দিল কাতার।
বিশ্বকাপে মাঠের লড়াইয়ে বিজয়ী দেখা যাবে ১৮ ডিসেম্বরের ফাইনালে। আর মাঠের বাইরে জীবনের লড়াইয়ে বিশ্বকাপ উদ্বোধনের দিনই পৃথিবীকে গনিমের মতো বিজয়ী উপহার দিল কাতার। আরবি ভাষায় গনিম নামের বাংলা অর্থও বিজয়ী।