যবন/ Infidel (ইনফিডেল)/ ‘ﻜﺎﻔﺮ’ (কাফির)
এটি শ্বরবিজ্ঞানের বৈক্তিক-বৈশিষ্ট্য সারণির ‘অবিশ্বাসী’ পরিবারের অন্যতম ‘ছদ্মনাম পরিভাষা’। এর মূলকসদস্য ‘অবিশ্বাসী’ এবং রূপক পরিভাষা ‘নাস্তিক’।
যবন (রূপ)বি অহিন্দু, বিধর্মী, ম্লেচ্ছ, বিদেশী, প্রাচীন গ্রিক জাতি, আইওনিয়াবাসী গ্রিক, Infidel, ‘ﻜﺎﻔﺮ’ (কাফির) (আল) সাম্প্রদায়িক সংস্কারাদিতে অবিশ্বাসী (প্র) প্রচলিত হিন্দু সাম্প্রদায়িক মতবাদ অমান্যকারী ব্যক্তি (আবি) অবিশ্বাসী, সন্দিগ্ধ, বিশ্বাস করে না এরূপ (আভা) মতবাদদ্বেষী, পাপিষ্ঠ, Atheist (ইদৈ) unfaithful (আদৈ) মিলহিদ (আ.ﻤﻟﺤﺩ), কাফির (আ.ﻜﺎﻔﺮ) (পরি) সৃষ্টিকর্তা (ব্রহ্মা) পালনকর্তা (বিষ্ণু) ও পুনর্জন্মে অবিশ্বাসী ব্যক্তি (দেপ্র) এটি শ্বরবিজ্ঞানের বৈক্তিক-বৈশিষ্ট্য সারণির ‘অবিশ্বাসী’ পরিবারের ‘ছদ্মনাম পরিভাষা’ ও শ্বরবিজ্ঞানের একটি পরিভাষা বিশেষ (সংজ্ঞা) ১ প্রচলিত হিন্দু সাম্প্রদায়িক মতবাদ আমান্যকারীকে যবন বলা হয় ২ শ্বরবিজ্ঞানে; অবিশ্বাসকারীকে যবন বলা হয় (ছপ) যবন (রূ) নাস্তিক (দেত) অবিশ্বাসী স্ত্রী যবনী।
যবনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি
(Some highly important quotations of Infidel)
১. “ত্রিপুরাতে বাবার বাড়ি, মা যবন হয় মণিপুরী, বৃথা এ দেশ ঐ দেশ ঘুরি, আপনঘরের সংবাদ পাই না” (বলন তত্ত্বাবলী- ২৬৯)।
২. “ভক্তের দ্বারে বান্ধা আছেন সাঁই, হিন্দু কী যবন বলে, জাতির বিচার নাই” (পবিত্র লালন- ৭০৭/১)।
যবনের সংজ্ঞা (Definition of Infidel)
প্রচলিত হিন্দু সাম্প্রদায়িক মতবাদ আমান্যকারীকে যবন বলে।
যবনের আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা (Theosophical definition of Infidel)
শ্বরবিজ্ঞানের অবিশ্বাসকারীকে যবন বলে।
যবনের প্রকারভেদ (Classification of Infidel)
যবন দুই প্রকার। যথা- ১.উপমান যবন ও ২.উপমিত যবন।
১. উপমান যবন (Analogical Infidel)
প্রচলিত হিন্দু সাম্প্রদায়িক মতবাদ আমান্যকারীকে উপমান যবন বলে।
২. উপমিত যবন (Compared Infidel)
শ্বরবিজ্ঞানের অবিশ্বাসকারীকে উপমিত যবন বলে।
যবনের পরিচয় (Identity of Infidel)
এটি শ্বরবিজ্ঞানের বৈক্তিক-বৈশিষ্ট্য সারণির ‘অবিশ্বাসী’ পরিবারের অধীন একটি ‘ছদ্মনাম পরিভাষা’ বিশেষ। সাধারণত; হিন্দু সাম্প্রদায়িক মতবাদ অমান্যকারীকে যবন বলা হলেও শ্বরবিজ্ঞানের সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মতবাদাদি অমান্যকারীকে যবন বলা হয়। হিন্দু সাম্প্রদায়িক দর্শনের যবনকে ইসলামী সাম্প্রদায়িক দর্শনে নাস্তিক বলা হয়। অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক দর্শনের রূপকথা, মনগড়া ব্যাখ্যা, অযৌক্তিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও অনুমানপ্রসূত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ অমান্যকারীকে যবন বা নাস্তিক বলা হয়। পক্ষান্তরে এসব অন্ধভাবে অনুকরণ, অন্ধভাবে অনুসরণ এবং সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক অনুশাসন মান্যকারীকে আস্তিক বলা হয়। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা হলো যবন বা নাস্তিকরা স্রষ্টাও অস্বীকার করে না এবং সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক দর্শনও অমান্য করে না। এমনকি তারা সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক উপসনাও অস্বীকার করে না, তারা কেবল মনগড়া, অলীক, অযৌক্তিক, অনুমানপ্রসূত, অন্ধবিশ্বাসপ্রসূত ও বিজ্ঞানবহির্ভূত পৌরাণিক কাহিনী বা রূপকথাগুলোকেই অস্বীকার করে। এজন্য; যবন ও নাস্তিক পরিভাষাটির দ্বারা কখনই সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মতবাদ বিদ্বেষীকে বুঝায় না। নাস্তিক নিয়ে আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি।
অথচ বড় হাস্যকর ব্যাপার হলো বাংভারতের একশ্রেণির সাম্প্রদায়িক মতবাদ অনুসারী যবন ও নাস্তিককে স্রষ্টাদ্রোহী ও স্রষ্টাবিদ্বেষী বলে মনে করে। এটা তাদের চরম দৈন্যতা ও চরম বোকামি। তাদের এ বোকামি ও অন্ধত্ব এখানেই সীমাবদ্ধ নয়, সাম্প্রদায়িক মতবাদ অনুসারীরা যবন ও নাস্তিকদেরকে ফাঁসি দিয়ে বা দেশান্তর করে তাদের অন্ধবিশ্বাসের বিষবৃক্ষ আরও পাকাপক্ব করতে চায়। সংখ্যালঘু যবন ও নাস্তিকের ওপর সাম্প্রদায়িক মতবাদ অনুসারীদের এরূপ খড়গকৃপাণ ও কদোক্তি বড়ই দুঃখজনক। অন্ধবিশ্বাসীরা যেনতেন মতবাদ যার তার ওপর চাপিয়ে দিবে। সেটা অমান্য করলেই সে হয়তো যবন নয়তো নাস্তিক।
যবন ও নাস্তিকদের ব্যাপারে এতটুকু বলা যায় যে; তাদের দ্বারা পৃথিবীর কোথাও কখনও রক্তপাত বা হানাহানি হয়নি। কিন্তু অন্ধবিশ্বাসী সাম্প্রদায়িক মতবাদীরাই যুগে যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে একজনের মতবাদ অন্যজনের মাথায় চাপিয়ে দিতে গিয়ে সাগর-সাগর রক্তক্ষয় করেছে। পরিশেষে বলা যায় পৃথিবীর সর্বত্র সর্বকালে ও সর্বযুগে অন্ধবিশ্বাসীরাই ছিল প্রকৃত সাম্প্রদায়িক মতবাদী। অন্যদিকে; বিজ্ঞানী ও দার্শনিকরাই ছিল যবন ও নাস্তিক। আজও পৃথিবীর সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক অঙ্গনের চিত্র ঠিক তা-ই।
মানব নির্মিত মতবাদকে ঐশ্বরিকবিধান, ঐশিবিধান, স্বর্গীয়বিধান ও ধর্ম বলা এবং এর পক্ষ-বিপক্ষ গ্রহণ করা হতে বিরত থাকা সব মানুষের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। কারণ এতে শান্তির চেয়ে অশান্তি বাড়ে বৈ হ্রাস পায় না।#
ধর্মবাজ বনাম মুক্তবাজ: জাত পাত যার যার; আত্মদর্শন সবার পর্ব-৬